চট্টগ্রাম: রোহিঙ্গা সংকটকে শুধু বাংলাদেশের সমস্যা হিসেবে না দেখে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে বিবেচনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
তিনি বলেন, আমরা যদি আসন্ন নির্বাচন ঐক্যবদ্ধভাবে সম্পন্ন করতে পারি, তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ‘জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হলে’ চট্টগ্রাম ফোরাম আয়োজিত ‘ট্টগ্রামের চোখে রোহিঙ্গা সংকট: মানবতা, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ফারুক-ই-আজম বলেন, রোহিঙ্গাদের মনে এখনো ভয়াবহ স্মৃতি রয়ে গেছে। তারা ঘরবাড়ি, সংস্কৃতি ও জীবনযাপনের ভিত্তি হারিয়ে এসেছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা শিশুদের জীবন সবচেয়ে অনিশ্চিত। রাষ্ট্রহীন অবস্থায় বেড়ে ওঠা এই প্রজন্ম একদিকে বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চাইছে, অন্যদিকে পরিচয় সংকটে ভুগছে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি মানবিক চ্যালেঞ্জ,” মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান। সঞ্চালনা করেন দ্য ডেইলি টাইমস অব বাংলাদেশ পত্রিকার চট্টগ্রাম ডিভিশনাল এডিটর ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিএমইউজে) সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি মানবতা, নিরাপত্তা ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নীতি নির্ধারকদের জন্য ১১ দফা সুপারিশ দেন। এর মধ্যে রয়েছে— আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের জীবন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; খাদ্য ও পোশাক বিতরণে দুর্নীতি রোধ করা; চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন; মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা; আন্তর্জাতিক আদালতে অপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া; স্থানীয় জনগণের ক্ষতিপূরণ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা; আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং গণসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করা।
আলোচনায় সরকারের যুগ্ম সচিব আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা অন্ধের হাতি দেখার মতো; এর বহুমাত্রিক দিক রয়েছে। তিনি জানান, ২০২৪ সাল ছিল রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ বছর, যেখানে ৭৬টি টার্গেটেড হত্যাকাণ্ড ঘটে। সীমান্ত সুরক্ষা, দুর্নীতি রোধ এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণকে তিনি সংকট মোকাবিলার মূল উপাদান হিসেবে উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইদ আহসান খালিদ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের তিনটি পথের কথা বলেন—স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন, স্থানীয় একীকরণ ও তৃতীয় দেশে পুনর্বাসন। তবে তিনি মনে করেন, বাস্তবতা বিবেচনায় মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনই একমাত্র কার্যকর সমাধান।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আহমদ হোসাইন, রাজনীতিবিদ ডা. সারোয়ার আলম, ড. শফিকুল ইসলাম চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী রাজিয়া সুলতানা, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফয়জুন্নেসা তরু, সাংবাদিক হোসাইন জিয়াদ ও এম এ কাদের প্রমুখ।
বক্তারা রোহিঙ্গা সমস্যাকে শুধু মানবিক নয়, নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার সঙ্গেও জড়িত বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের আরও সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।
বিই/পিডি/টিসি