ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষমা চাইলো বিশ্বভারতী

কলকাতা ব্যুরো | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১১ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১২

কলকাতা: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীর পাঠভবন ছাত্রীনিবাসে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে নিজের প্রস্রাব খাওয়ানোর ঘটনায় বৃহস্পতিবার লিখিত বিবৃতি দিয়ে ক্ষমা চাইল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

এদিন ওই বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অভিযোগকারী ছাত্রীসহ পাঠভবনের অন্যান্য ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের আশ্বস্তও করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না।

অন্যদিকে, ছাত্রীর বাবা-মা ও নির্যাতিত ছাত্রীকে চিঠি দিয়ে এদিন ডেকে পাঠায় বিশ্বভারতীর চার সদস্যের তদন্ত কমিটি। তাদের সঙ্গে ছাত্রীর বাবা-মা কথা বলেন।

এদিকে বৃহস্পতিবারই ছাত্রী হেনস্থার ঘটনায় অভিযুক্ত উমা পোদ্দারের পক্ষে পোস্টার দেয় পাঠভবনের ছাত্রছাত্রীরা।

বুধবার বিশ্বভারতীয় ৩ সদস্যের এক তদন্তকারী দল ওই ছাত্রীর বাড়িতে দেখা করতে যান। ছাত্রীকে স্কুলে ফেরানোর অনুরোধ জানান তারা। তবে মেয়ের মানসিক পরিস্থিতির কথা ভেবে তাকে ওই স্কুলে পাঠাতে চাননি অভিভাবকরা।

অন্যদিকে, প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। অভিযোগ, ঘটনার ৪ দিন পর মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষার জন্য পুলিশ অভিভাবকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বুধবার বাড়িতে গিয়ে পুলিশ ওই ছাত্রীর মেডিক্যাল পরীক্ষা করাতে চাইলে তার পরিবারের তরফে আপত্তি তোলা হয়।

বিশ্বভারতীর করবী ছাত্রী নিবাসের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী রাতে বিছানায় প্রস্রাব করে ফেলেছিল। ওয়ার্ডেন উমা পোদ্দারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ওই প্রস্রাব খেতে বাধ্য করেন ওই ছাত্রীকে। ঘটনার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে ছাত্রীটি।

পরিবারের তরফে দায়ের হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার গ্রেফতার হন অভিযুক্ত ওয়ার্ডেন। জামিনে মুক্তিও পেয়ে যান কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। পুলিশের বক্তব্য, ছাত্রীর অভিভাবকদের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে ওই ছাত্রীকে জোর করে রাতে ছাত্রীনিবাস থেকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছিল।

ছাত্রীর বাবা-মাসহ পরিবারের ৫ সদস্যকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের তরফে কোনও এফআইআর দায়ের করাই হয়নি। ওই ছাত্রীর চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তার খরচ অভিযুক্ত ওয়ার্ডেনের মাইনে থেকে কেটে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বোলপুর আদালত। এই খরচ দিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে বলে সোমবার জানায় আদালত।

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে অভিযুক্ত ওয়ার্ডানকে। যদিও ছাত্রী হেনস্থাকাণ্ডে ওয়ার্ডেনকে আড়াল করতেই সচেষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এ নিয়ে সোমবার আইনজীবীদের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলার শুনানি হবে আগামী শুক্রবার। এ বিষয়ে ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটসের পক্ষ থেকেও রাজ্য সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যাবতীয় তথ্য জানিয়ে ১০ দিনের মধ্যে চিঠির জবাব পাঠাতে বলা হয়েছে। ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস।

ঘটনা খতিয়ে দেখে রাজ্য সরকারকে কড়া পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে এনসিপিসিআরের পক্ষ থেকে। চিঠিতে দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ চেয়ে পাঠিয়েছে এনসিপিসিআর। বিশ্বভারতীর হস্টেলে কীভাবে রাখা হয় ছাত্রীদের, কী যোগ্যতার ভিত্তিতে ওয়ার্ডেন নিয়োগ করা হয়, এই বিষয়গুলি স্পষ্ট করে জানাতে বলা হয়েছে।

এই ঘটনার জেরে যে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে ওই ছাত্রীকে। সেজন্য ছাত্রীটির বিনামূল্যে কাউন্সেলিং করাতে বলা হয়েছে রাজ্য সরকারকে।

এদিকে, ছাত্রীটির পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, ওই ছাত্রীকে বোলপুর গার্লস হাই স্কুলে ভর্তি করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির সঙ্গেও তাদের কথা হয়ে গিয়েছে ৷

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।