ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মিষ্টি মুখ, দেখে সুখ

. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৪
মিষ্টি মুখ, দেখে সুখ ভোটের প্রচারে দেব

দেব আর জিতের মধ্যে কে বেটার বলা যায় না। দুজনে দুরকম।

নাচে গানে রোমান্টিকতায় দেব ভাল। ফাইটে জিৎ। ভিলেনের গুষ্টিকে নিমেষে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা জিতের মতো আর কারও নেই। দেবও লড়ে চেহারার জোরে। ভিলেনরাও মরে। তার মারপিটের শটেও রোমান্টিকতা মিশে থাকে। দেবের নির্বাচনী ফাইটেও সেটাই দেখা যাচ্ছে। প্রচারে কড়া কথা চড়া সুদ নেই। নরম মোলায়েম আলাপ। দীর্ঘ ভাষণ নয়, ছোট ছোট কথা। কাউকে ব্যথা দেওয়া নয়। সবার কাছে সবিনয় জানতে চাওয়া, আমাকে জেতাবেন তো। প্রতিদ্বন্দ্বী সন্তোষ রামাও তাঁকে দেখে মুগ্ধ। ৪৬ বছর ধরে কমিউনিস্ট রাজনীতি করছেন। জীবনে ফাইট কম করেননি। দেবের ফাইটিংয়ের ধরণ দেখে তিনিও অবাক। মেদিনীপুরের ঘাটাইল লোকসভার কেন্দ্রে যেখানে তাঁর বাড়ি, সে রাস্তায় গাড়ি ঢোকা দূরের কথা, সাইকেল চালাতেও কষ্ট। বার্জটাউনে পোড়া বাংলো পাড়ায় ভঙ্গুর ঘরে দেবকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সন্তোষ। দেব আসবেন কী-না তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিএমডব্লু– চড়া মানুষের মন জয় করা, ডাকসাইটে হিরো কী করে ওই এঁদো গলিতে ঢুকবেন। পরিবেশের পরোয়া করেননি দেব। গাড়ি থেকে নেমে দীর্ঘ পথ হেঁটে সন্তোষ রামার বাড়িতে পা রেখেছেন। তাঁকে শ্রদ্ধায় ‘স্যার’ সম্বোধন করে বলেছেন, আপনার মতো নেতার বাড়িতে আসতে পেরে আমি ধন্য। সন্তোষ রামার স্ত্রী ভারতী কমিউনিস্ট হলেও রান্নাবান্নায় পোক্ত। দেবের জন্য নিজের হাতে রাবড়ি করেছিলেন। দেব রান্নাঘরে ঢুকে, কড়াই থেকে সোজাসুজি সেটা মুখে তুলেছেন। দেব চলে যাওয়ার পর সন্তোষ রামা বলেছেন, ছেলেটা রাবড়ির চেয়ে মিষ্টি। দেখতে কী সুন্দর। হাসিটা আরও সুইট। দেখেই ভালবাসতে ইচ্ছে করছে। নিঃসন্তান সন্তোষ হয়তো দেবের মধ্যেই নিজের ছেলেকে খুঁজে পেড়েছেন।


ডিরেক্টরদের স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করেই দেবের অভিনয়। নিজের হাতে মুখে কিছু লেখা বলা দিয়ে যাননি। সোজাসুজি মানুষের সঙ্গে মিশতে চেয়েছেন। দিনে ৩৪ কিলোমিটার দৌড় শুরু করেছেন। হুড খোলা মহিন্দ্রা জিপে দাঁড়িয়ে রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের সঙ্গে অভিনন্দন বিনিময় করেছেন। সবার সঙ্গে হাত মেলাতে না পারলেও সবাইকে হাত নেড়েছেন। সূর্য্য যখন মাথায় আগুন ঢেলেছে মাথার ছাতা নেননি। মিনারেল ওয়াটারের বোতল মুখে খুলেছেন মাত্র। চোখে সানগ্লাস, মুখে হাসি। তাঁকে দেখতে ছুঁতে উপচে পড়ছে ভিড়।


তারকা হয়েও দেব যতটা জনমুখি হয়েছেন, মুনমুন সেন ততটা পারেননি। মহাতারকা মা সুচিত্রা সেনকে ভাঙিয়ে নির্বাচন জিততে চাইছেন। ছাতা ছাড়া এক পা নড়তে পারছেন না। দেব, মুনমুন দুজনেই অভিনয় শিল্পী। দুজনেই তৃণমূল প্রার্থী। দুজনে কত তফাৎ! মুনমুন শেষ দিকে সিনেমায় চান্স না পেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে যাত্রা করতেন। তবুও গ্রামের মাটিকে আপন করতে পারেননি। দেব সেখানে ষোলআনা সফল। গ্রামকে অন্তরে জায়গা দিয়েছেন।


সে কারণে অভিজ্ঞ রাজনীতিক সন্তোষ রামাও নিতান্ত অরাজনৈতিক প্রার্থী দেবকে ভয় পাচ্ছেন। ১৯৬৮ থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে সন্তোষ রামা। ১৯৮০ তে বিশিষ্ট রাজনীতিক গীতা মুখার্জির নির্বাচনী এজেন্টে ছিলেন। এমএলএ হয়েছেন। মেদিনীপুর জেলার সাংগঠনিক দায়িত্ব নিয়েছেন। তবু দেবের আবির্ভাবে কপালে চিন্তার ভাঁজ। ভাবছেন তাহলে কি গ্লামারের কাছে রাজনীতি হেরে যাবে? সন্তোষ জোর দিচ্ছে পুরোনো শেকড়ে। মেদিনীপুরের নারায়ণগড়-পটাশপুর সীমান্তে নদীর ধারে দশগ্রামে তাঁর জন্ম। শৈশব থেকে জোতদার জমিদারদের অত্যাচার সয়েছেন। ক্রমে প্রতিবাদী হয়ে রাজনীতিতে পা রেখেছেন। গুরুদাস দাশগুপ্ত রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েই সন্তোষ রামাকে সিপিআই ঘাটাইলে প্রার্থী করেছে। গুরুদাস, কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন। সংসদ হিসাবে উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন সংসদে। সংসদে যেতে পারলে সন্তোষ কী করবেন সেটা পরের কথা। আপাতত তিনি বড় রাস্তা ছেড়ে আলপথ ধরে হাঁটছেন। পায়ে পায়ে ঘুরছেন ক্ষেত-খামার, চাষীর বাড়ি। দেবের মতো ফুলে সাজানো গাড়ি সেখানে পৌঁছায় না।


অন্যদিকে মাঝে মাঝে সাইকেলে যাওয়া হচ্ছে সন্তোষ। যাদের সঙ্গে সাড়া বছর থাকা তারা কী তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন।


অন্যদিকে কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভূঁইঞা। দাঁড়ানোর ইচ্ছে ছিল না; রাহুল গান্ধী জোর করে দাঁড় করিয়েছেন। বলেছেন, জেতা-হারার কথা ভুলে যান। মেদিনীপুরে কংগ্রেসের নিশান আপনি। সেটা পতপত করে উড়ুক। লোকে বুঝুক কংগ্রেস তাদের পাশে আছে।


মানস পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধীর সৌজন্যে। সেই দায়িত্ব এখন বহদারপুরের অবিসংবাদী কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর ঘাড়ে। নির্বাচনী যুদ্ধে তিনি সেনাপতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরম শত্রু। তৃণমূল সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, কংগ্রেসের উচ্ছিষ্ট নিয়ে তৃণমূল তৈরি। ওর কাজ করার লোক কোথায়। ঝগড়া মারপিট খুনোখুনি ছাড়া কিছুই বোঝে না। পেশায় ডাক্তার মানস সংযত-ভদ্র। পূর্বপুরুষ ছিলেন জমিদার। মানসের বক্তব্য, আমার রক্তের রঙ লাল। কোন কিছু পেতে নিচে নামা আমার ধাতে নেই।

**সময় অসময় বিস্ময়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।