ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

তৃতীয় দফার নির্বাচন

এক কেন্দ্র বাদে রাজ্যের সর্বত্র ভোট নির্বিঘ্নে

রক্তিম দাশ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১১
এক কেন্দ্র বাদে রাজ্যের সর্বত্র ভোট নির্বিঘ্নে

কলকাতা: ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় দফার ভোট বৃহস্পতিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শেষ হয়েছে। নির্বাচনে একটি ছাড়া বাকি ৭৪টি কেন্দ্রে ভোট নির্বিঘ্নে ভোট শেষ হয়েছে।



নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, বিকাল ৫টায় নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ভোট পড়ে ৭২ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

এর মধ্যে উত্তর কলকাতায় ৫৬ দশমিক ৬৭, দক্ষিণ কলকাতায় ৬১ দশমিক ৭২, উত্তর ২৪ পরগণায় ৭৫ দশমিক ৭৫ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৭৯ দশমিক ৬২ শতাংশ ভোট পড়ে।

নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরও বহু মানুষ ভোট কেন্দ্রের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

এ থেকে আশা করা হচ্ছে, ভোট পড়ার হার ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষ সকাল থেকেই উৎসবের আমেজে ভোট দিচ্ছেন। প্রথম দু‘ ঘণ্টায় লাইনে নারী ও অল্প বয়সী ভোটারদের বেশি দেখা গেছে।

ইসি জানিয়েছে, এদিন মোট গ্রেপ্তার হয়েছেন ২১ জন। উত্তর ২৪ পরগণার বিভিন্ন বুথে ভোটারদের ভয় দেখানো ও পোলিং এজেন্টদের বার করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সিপিএম।

এদিনের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে এ জেলার বীজপুর কেন্দ্রে। এ কেন্দ্রের ৯৪ নম্বর বুথে সিপিএম‘র পোলিং এজেন্ট মানস সিনহাকে রিভলবারের বাঁট দিয়ে মাথায় আঘাত করে তৃণমূল কর্মীরা। সেইসঙ্গে তাকে মারধোর করে বের করে দেওয়া।

এর পরপরই বীজপুরে শহিদনগরে সিপিএম কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়। এত ৫জন আহত হন।   এ ঘটনায় কেন্দ্রজুড়ে উত্তেজনা চরমে ওঠে। অবস্থা সামলাতে ব্যাপক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হয়।

উল্লেখ্য, এ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মকুল রায়ের ছেলে শুভ্রাংশু রায় কয়েকদিন আগে ইসির এক পর্যক্ষেকের ওপর হামলা করে জেলে গেছিলেন।

এ ঘটনার জন্য রাজ্যের বিশেষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক এস শ্রীনিবাসন দিল্লিতে বিশেষ রিপোর্ট পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসি।

কলকাতার কসবা কেন্দ্রের তিলজলায় কাজী নজরুল স্কুলে ভোটারদের গাড়ি ভাঙচুর করার জন্য একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

উত্তর ২৪ পরগণার হাড়োয়ার একটি বুথে জাল ভোট দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন এক তৃণমূল সমর্থক।

এ জেলারই দেগঙ্গায় চাঁদপুর গ্রামে ১৫৮ নম্বর বুথে ফরওর্য়াড ব্লক প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী ড. মুর্তাজা হুসেনের মার্কা সিংহের ওপরে কালি দিয়ে দেওয়া হয়।

এভাবে আধা ঘণ্টা ভোট চলার পর তুমুল উত্তেজনা দেখা দেয়। এরপর এখানে ভোট স্থগিত করা হয়।

জেলার বারাসাতের কাজী পাড়ায় তৃণমূল প্রার্থী চিত্রতারকা চিরঞ্জিৎ ভোটের লাইনে গিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ করে সিপিএম।

 সেইসঙ্গে এখানে পালপুকুরিয়ায় দু‘টি তাজা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ।

জগদ্দলের ৮২ নম্বর বুথে ফরওর্য়াড ব্লক প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

কামারহাটিতে বর্তমান বিধায়ক ও এবারের সিপিএম প্রার্থী মানস মুখার্জিকে বুথে ঢুকতে কেন্দ্রীয় বাহিনী বাধা দিলে উত্তেজনা ছড়ায়। রাজারহাটে নারায়ণপুরে বহিরাগতদের ভিড় হটাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।

এ জেলায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে ১৬ প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেয় ইসি।

ভোটের শেষ পর্যায়ে যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে কলকাতার ১০১ নম্বর ওর্য়াডে বুথ দখল করে ভোট করছে সিপিএম এ অভিযোগ ইসির কাছে করেন এ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রাজ্যের সাবেক আমলা মনীশ গুপ্ত।

দিল্লির নির্দেশে বিশাল বাহিনী নিয়ে এ এলাকা পরিদর্শনে যান বিএসএফ’র আইজি মুরলীধরন। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। ’

কলকাতা বন্দর কেন্দ্রের হরিমোহন ঘোষ কলেজে ফরওর্য়াড ব্লক প্রার্থী মইনুদ্দিন সামসের মার্কা সিংহ’র ওপর কাগজ সাঁটা হয়।

মানিকতলা কেন্দ্রে একটি বুথের প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয় এদিন ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগে।

কলকাতা পৌরসভার সাবেক সিপিএম কাউন্সিলার অরূপ অধিকারীকে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

মেটিয়াবুরুজ কেন্দ্রের একটি বুথে তৃণমূলের পোলিং এজেন্ট ও কংগ্রেসের গোঁজ প্রার্থীর এজেন্টের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

এদিন সকাল ৮টায় দক্ষিণ কলকাতার কমলা গার্লস স্কুলে ভোট দেন ভারতের লোকসভার সাবেক স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।

ওই স্কুলে ভোট দেন ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি। দুপুর ১টায় ভোট দেন কলকাতার পাঠভন স্কুলে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নিউ আলিপুরে ভোট দেন সিপিএম সাংসদ বৃন্দা কারাত।

ভোট শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ৪টা ৪৫ মিনিটে ভোট দেন তৃণমূলন্ত্রেী মমতা ব্যানার্জি কালিঘাটের একটি স্কুলে।

বেহালায় আর্যবিদ্যামন্দিরে ভোট দেন ভারতে ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী।

এদিকে ভোটকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল প্রশাসনিকভাবে। দু’ ২৪ পরগণার বাংলাদেশ সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছিল। সুন্দরবনের জলপথে টহল দেয় কোস্ট গার্ড। বিএসএফ সীমান্তে বিশেষ অবস্থান নিয়েছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যস্ততম স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য বন্ধ ছিল।

এদিন যাদের ভাগ্য নির্ধারিত হল- যাদবপুরে ক্ষমতাসীন বামফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচাযের্র, পূর্ব ক্যানিংয়ে মন্ত্রী আবদুর রেজ্জাক মোল্লা, রায়দিঘি কেন্দ্রে মন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলী, খড়দহ কেন্দ্রে অর্থমন্ত্রী ড. অসীম দাশগুপ্ত, দমদম কেন্দ্র আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব এন্টালি কেন্দ্রে তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী ড. দেবেশ দাস এবং বেলেঘাটায় মন্ত্রী অনাদী সাহু।

এছাড়াও পরিবহনমন্ত্রী রঞ্জিত কুণ্ডু, নারী উন্নয়নমন্ত্রী রেখা গোস্বামী, সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর, মাদ্রাসা ও সংখ্যালঘুমন্ত্রী ড. আবদুস সাত্তার ও বির্পযয় মোকাবিলা দপ্তরের মন্ত্রী ড. মোর্তাজা হুসেনের ভাগ্য নির্ধারিত হয় এদিন।

অন্যদিকে, তৃণমূলের উল্লেখ্যযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিরোধী দলনেতা পার্থ চ্যাটার্জি, কলকাতার মেয়র শোভন চ্যাটার্জি, সাবেক কলকাতার মেয়র সুব্রত মুখার্জি, চিত্রতারকা চিরজিৎ, দেবশ্রী রায়, সাবেক আমলা মনীশ গুপ্ত, নাট্যকার ব্রাত্য বসু প্রমুখ।

এ তিন জেলায় মোট ভোটার ১ কোটি ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।