ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

পলিটব্যুরো ছাড়তে চান

সমালোচকদের তোপের মুখে বুদ্ধদেব

আনোয়ারুল করিম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩১ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১১
সমালোচকদের তোপের মুখে বুদ্ধদেব

কলকাতা থেকে: নির্বাচনে ভরাডুবির পর পশ্চিমবঙ্গের সদ্যসাবেক হওয়া মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট) দলের ‘পলিটব্যুরো’ ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিতে আগ্রহী। দলের নেতাকর্মীদের একাংশের বিরূপ সমালোচনার মুখে বুদ্ধদেব এ সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন বলে জানা যায়।

 

নয়াদিল্লিতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের তিনি টেলিফোন করে এ কথা জানান। তবে দলের একাংশ তাকে নিজে থেকে পদত্যাগ করতে নিষেধ করছেন।

এর আগে নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিনই তিনি মূখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। অবশ্য পরবর্তী সরকারের মূখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।  

‘হতাশ’ বুদ্ধ হারের দায় নিজের কাঁধে নিয়ে দলের দায়িত্বশীল পদ থেকে সরে আসতে চাইছেন।  

সোমবার নয়াদিল্লিতে সিপিআই(এম)’র পলিটব্যুরো বৈঠক ডাকা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায় দলের পরাজয় নিয়ে আলোচনার জন্যই ওই বৈঠকের আয়োজন।  

তবে বৈঠকে অংশ নিতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নয়াদিল্লি যাবেন না বলেও আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের মুজাফফর আহমেদ ভবন সূত্র জানায়। নয়াদিল্লির বৈঠকে বিমান বসু যাচ্ছেন নির্বাচনের ফল নিয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে। আরও যাচ্ছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেন।    

পরদিন মঙ্গলবার কলকাতার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বসবে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক। সেখানেও এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।         
 
এবারের নির্বাচনে বামফ্রন্টের ধ্বসের পেছনে সিপিআইএমের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশই মূখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুকে দোষী সাব্যস্ত করছেন। বিশেষ করে নিজের আসনে সাড়ে ষোল হাজার ভোটে বুদ্ধদেবের হেরে যাওয়াকে ভালোভাবে দেখছেন না দলের নেতাকর্মীরা।

বুদ্ধদেবসহ দলের ১৯ মন্ত্রীর পরাজয়ের পেছনে ওই মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন ও আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেবকেও দায়ী করছে দলের একাংশ। এই দু’জন বুদ্ধদেবের পরামর্শদাতা হিসেবে পরিচিত এবং গণমাধ্যমের সামনে তাদের ঘনঘন মুখ খোলাকেও পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে দলের দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও সাবেক ভূমি রাজস্বমন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা নিরুপম সেনের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘ওটাই নাটের গুরু। হেলে (নির্বিষ সাপ) ধরতে পারেন না, উনি গেছেন কেউটে ধরতে। ও যে হারবে তা তো বিশ্বের আর্ধেক মানুষ জানতো। ’

নিরুপম সেনের একটি উক্তির কারণে বুদ্ধদেবের সমালোচকরা আগুনে ঘি পেয়েছেন বলেও মত দেন রেজ্জাক মোল্লা।

শুধু বুদ্ধ নয়, সমালোচকদের তীর বুদ্ধদেবের স্ত্রী ও কন্যার দিকেও। তাদের আচরণ দলের আদর্শের সঙ্গে যায় না বলেও অভিযোগ। এছাড়া মূখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা যাদবপুরের জোনাল কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোকন ঘোষ দস্তিদারকেও পরাজয়ের পেছনে দায়ী বলেও অভিযোগ।

দলের ভেতরের এসব সমালোচনার কারণে না হলেও বুদ্ধদেব নিজে থেকে পলিটব্যুরো থেকে সরে এসে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি নিয়েই হয়তো ব্যস্ত হয়ে পড়বেন।    

দলের সূত্র জানায়, দল ও রাজ্য নিয়ে যেকোনো ‘অঘটন’ ঘটলে বুদ্ধবাবু নিজের ঘাড়ে এসব দায় নিতে চান। বেশ কয়েক বছর আগে জ্যোতিবসুর মন্ত্রিসভাকে তিনি চোরের মন্ত্রিসভা বলে অভিহিত করে মন্ত্রিসভা ছেড়ে আসেন। পরে অবশ্য আবারও মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেন।

এছাড়া সর্বশেষ মেয়াদে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নন্দীগ্রামে গুলি এবং পরে লোকসভা নির্বাচনে দলের বিপর্যয়ের পরেও ‘দায়’ কাঁধে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন।

সিপিএম সূত্রের খবর, এবার নির্বাচনে এই বিপর্যয়কে ব্যক্তিগত ব্যর্থতা হিসেবে দেখা উচিত নয়। ব্যর্থতা সামগ্রিকভাবে গোটা দলেরই। সেহিসেবে বিমান বসুও তো দায়ী।  

আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্র আরও জানায়, সোমবার নয়াদিল্লির পলিটব্যুরো বৈঠকে চার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফল নিয়ে আলোচনা হবে। পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায় ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ঘটনা সেখানে অবশ্যই প্রধান আলোচ্য হবে।

তবে জুন মাসের মাঝামাঝি কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিধানসভা ভোটে দলের সামগ্রিক ফলাফল নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা হবে বলে ঠিক হয়েছে।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সোভিয়েত রাশিয়ার শেষ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ যেমন গ্লাসনস্ত পেরেস্ত্রোইকা করে সোভিয়েতের পতন ত্বরান্বিত করেছিলেন, ঠিক তেমনি, বুদ্ধদেব তার উন্নততর বামফ্রন্ট তত্ত্বের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টিকে লাটে তুললেন।

প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে এর আগে ১৯৬৭ সালে হেরেছিলেন কংগ্রেসের মূখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল চন্দ্র সেন। দীর্ঘ ৪৪ বছর পর বুদ্ধদেব প্রফুল্লের রেকর্ড ভাঙ্গলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।