কলকাতা: দক্ষিণ ২৪ পরগণার সংগ্রামপুরে বিষাক্ত মদ পানে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৩।
তবে বেসরকারি মতে, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। আরও প্রায় দেড়শো জন অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
এদের মধ্যে ডায়মন্ড হারবার মহাকুমা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৭০ জন। এদের মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্বভাবতই মৃতের সংখ্যা বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে ৮২টি মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিষাক্ত পানের ওই ঘটনায় সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে রয়েছে চোলাই কাণ্ডের মূল পাণ্ডা নূর ইসলাম ফকির ওরফে খোঁড়া বাদশা। খোকন নামের অপর একজনের খোঁজ চলছে। সিআইডিকে দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগণার মগরাহাট ও উস্তি থানার বহু মানুষ চোলাই মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বুধবার থেকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলে। ডায়মন্ড হারবার, উস্তি বিভিন্ন হাসপাতালে প্রথমে অসুস্থদের ভর্তি করা হয়। কলকাতা থেকে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি দলও সেখানে উপস্থিত হয়।
বুধবারই কলকাতার বাঙ্গুর হাসপাতালে বিষাক্ত মদ থেয়ে অসুস্থ বহু ব্যক্তিতে ভর্তি করা হয়।
রাজ্য সরকার এরই মধ্যে মৃতদের পরিবার পিছু ২ লাখ টাকা সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছে। ডায়মন্ড হারবার ও আশপাশের সরকারি হাসপাতালের সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, ঘটনা উদ্বেগজনক। এপর্যন্ত ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ৭জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মৃতের পরিবারকে সৎকারের জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়া প্রতি পরিবারকে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ১৯ ডিসেম্বর সর্ব দলীয় বৈঠকের আহ্বান করেছেন তিনি।
এছাড়া এ ঘটনায় সিআইডি তদন্তের কথাও তিনি ঘোষণা করেন।
এখানে প্রচুর দরিদ্র মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের অধিকাংশ রিকশাচালক, শ্রমিক ও হকার। সংগ্রামপুরের পৌলান পরিবারে বাব ও তিন ছেলের মৃত্যু হয়েছে। আয় করার মতো তাদের পরিবারে কেউ নেই। পরিবারে ১০-১২টি শিশু রয়েছে। এ ঘটনায় তিনটি শিশুও মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগণার পুলিশ সুপার জানান, রীতিমত তল্লাশি চালানো হয় এখানে।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা খোঁড়া বাদশার খোঁজ করছে। সেই এই ঘটনার মূল পাণ্ডা।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, সরকারের ক্যালাস পদক্ষেপে মৃতের হার বেড়েছে। সময় মতো চিকিৎসা হয়নি। ওয়াশ করা হয়নি। ফেলে রাখা হয়েছে। গতকাল সাড়ে তিনটায় প্রথম একজনকে রেফার করা হয় বাঙুর হাসপাতালে।
বামেরা এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বামেদের পক্ষ থেকে একটি শোকমিছিল বের হবে।
এদিন বেলা ১২টা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে ভর্তি কার হয়েছে ২৬০ জনকে। তাদের মধ্যে অনেককে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালেই মারা গিয়েছেন ১২০ জন।
কলকাতার এম আর বাঙুর হাসপাতালে ৬৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৯ জন মারা গিয়েছেন। মগরাহাট প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মারা গিয়েছেন ৭ জন। বারুইপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি ৭জনের মধ্যে মারা গিয়েছেন ২ জন।
কলকাতা মেডিকেল কলেজেও মৃত্যু হয়েছে দুজনের। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গিয়েছেন ১জন। গ্রামেই মৃত ২জনের দেহ প্রশাসনকে না জানিয়েই কবর দিয়ে দেওয়া হয়।
বিষাক্ত মিথাইল অ্যালকোহল রক্তে মিশে যাওয়ায় এই বিপত্তি। পরিস্থিতি যে কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে তা মেনে নিচ্ছে প্রশাসন।
মঙ্গলবার বিকেল নাগাদ সংগ্রামপুর স্টেশন লাগোয়া চারটি ভাটিখানা থেকে মদ পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। তবে রাতে কাউকে হাসপাতালে আনা হয়নি।
বুধবার ভোর থেকে একের পর এক মৃত, অসুস্থদের ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হতে থাকে।
বুধবার রাত ১১টা পর্যন্ত অসুস্থদের নিয়ে আসা হয় ওই হাসপাতালে।
বাংলাদেশ সময়:১৫৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১১