ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

‘জানি না বাবা স্বাধীনতা সম্মাননা নিতে পারবেন কি না’

রক্তিম দাশ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১১
‘জানি না বাবা স্বাধীনতা সম্মাননা নিতে পারবেন কি না’

কলকাতা: ৭১-এ পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে অমিত তেজে জ্বলে উঠতে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপনা দানকারী একাধিক গণসংগীতের রচয়িতা গোবিন্দ হালদার এখন প্রায় শয্যাশায়ী। বার্ধক্যজনিত রোগ আর ত্বকের সংক্রমণ তার জীবনী শক্তিকে কমিয়ে নিয়ে আসছে।



বিজয়ের মাস আসলে আর আগের মতো উজ্জীবিত হতে পারেন না। অসুস্থ্য ৮১ বছর বয়সী এই কবির কলম থেকে আর রক্তঝরা সংগীতের জন্মও দিতে পারে না বহুদিন। তার কাছে এখন মুক্তিযুদ্ধ এক ধূসর স্মৃতি।

১৬ ডিসেম্বর আর পাঁচটা দিনের মতোই কাটে তার, এমনটাই বলছিলেন গোবিন্দ হালদারে একমাত্র কন্যা গোপা হালদার।

তিনি বলেন, ‘কী হবে এসব বলে?  বিজয় দিবস আর স্বাধীনতা দিবস আসলে সবাই বাবার খোঁজ নেন। আপনিও যেমন এসছেন। ’

‘বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গোবিন্দ হালদারকে ২০১০ সালে ৮ জানুয়ারি কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসে সম্মাননা জানানো হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেওয়া হয় একটি ক্রেস্ট ও ১৫ লাখ রুপি। তাই দিয়ে আর বাবার পেনশনের টাকা দিয়ে চিকিৎসা চলছে। ১৯৭৫ সাল থেকে ৮০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন বাবার গানের জন্য বছরে ১৪৫০ রুপি রয়্যালিটি দিয়েছিল। তারপর আর কিছুই দেয়নি’, বলেন তিনি।

ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এখন বাবার লেখা এই গানগুলি আমাদের বিনা অনুমতিতে বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে ও এফএমে প্রায় প্রতিদিনই বাজানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মোবাইল সেবা প্রদানকারি সংস্থাগুলোও রিংটোন রূপে এগুলি ব্যবহার করছে। ’

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্মাননা পাওয়া খবর তারা পেয়েছেন বলে জানিয়ে গোপা বলেন, ‘আমাদের সরকারি ভাবে এখন কেউ জানায়নি। জানি বাবা আদৌ তা নিতে পারবেন কি না?’

জীবন সায়াহ্নে উপনীত গোবিন্দ হালদার চোখের জল ফেলে বললেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ সুখে থাকুক। আমার লেখা ওই গানগুলির মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত-ঘাম মিশে আছে। আমি কৃতজ্ঞ ভালো লাগছে। ’

উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হয়েও স্বভাব কবি গোবিন্দ হালদার স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্য একের পর এক লিখে ফেলেন, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’-এর মতো অসংখ্য কালজয়ী গান।

এসময় তাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন টাঙ্গাইলের তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য আবদুল মান্নান, এম আর আখতার মুকুল, হাসান ইমাম, আলমগীর কবিরের মতো মানুষেরা।

মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুকে উপহার দেন তার লেখা ‘লেফট রাইট লেফট রাইট, নওজোওয়ান এগিয়ে চল’সহ আরও কিছু অসাধারণ গান।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।