গুয়াহাটি(ভারত) থেকে: ভারতের উত্তর-পূর্বে আসাম ও অরুণাচল প্রদেশের সীমান্ত এলাকায় নির্মিতব্য লোয়ার সুবনসিরি বাঁধ নিয়ে শনিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্তই হয়নি। যদিও বিশেষজ্ঞরা সরকারকে এই বাঁধ নির্মাণের স্থান পরিবর্তনের প্রস্তাব দেন।
শনিবার গুয়াহাটির দিসপুরে রাজ্য সরকারের সচিবালয়ের মুখ্যসচিবের কনফারেন্স রুমে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দু’দফায় দুটি বৈঠক হয়।
নদীতে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে গত ডিসেম্বর মাস থেকেই আসামের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে আছে।
বাঁধটির ৫৫ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
প্রতিবেশি রাজ্য অরুণাচলের সুবনসিরি নদীতে ২ হাজার মেগাওয়াটের ওই বাঁধটি নির্মাণের বিরোধিতা করে আসামের উত্তর-পূর্বের অসংখ্য মানুষ আন্দোলন করছে। আন্দোলনে কয়েকজন মারাও গেছেন।
এসব ঠেকাতে রাজ্যের রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞসহ সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
বাঁধ বিষয়ক আলোচনার জন্য সরকার রাজ্যমন্ত্রীদের সমন্বয়ে একটি কমিটিও গঠন করে। ৫ জানুয়ারি এ ধরনের ২৬টি রাজনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যের কংগ্রেস সরকার।
শনিবারের দু’টি বৈঠকের একটি হয় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং আসামের সুশীল সমাজের সঙ্গে। আলোচনায় বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে বাঁধের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেন।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদলের প্রধান উড়িষ্যার রুরকিস্থ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র পানিসম্পদ বিভাগের প্রধান নয়ন শর্মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘পিয়ানো কি ওয়েভস প্রযুক্তি বাঁধে ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ’
বিশেষজ্ঞদলের প্রধান আসামের ডিব্রগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের এস পি বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, সুবনসিরি বাঁধের স্থান পরিবর্তনের একটি প্রস্তাবও সরকারকে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘নতুন নকশা তৈরি করে বাঁধ নির্মাণের কথা আমরা বলেছি। ’
বিশেষজ্ঞ দলের অপর সদস্য যতীন কলিতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সরকারকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছি, ওই বাঁধের স্থান মোটেও উপযুক্ত নয়। ’
তিনি আরও বলেন, ‘বাঁধ নিয়ে আসামের মানুষের মনে যে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করা প্রয়োজন। জনগণের আশঙ্কার অনুভূতি দূরে ঠেলে বাঁধ নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। ’
আসামের গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নির্মল কুমার চৌধুরী বলেন, ‘বাঁধের ফলে নিম্ন অববাহিকায় জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ প্রাকৃতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা আমরা বলেছি। ’
দু’দফা বৈঠকের পর মন্ত্রীসভার পক্ষ থেকে আসামের বিদ্যুৎ, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী প্রদ্যুৎ বরদলৈ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি অবশ্য বিশেষজ্ঞদের বাইরে বলা কথার কোনও যুক্তি খণ্ডন করতে রাজি হননি।
তিনি বলেন, ‘ভূকম্পন এলাকায় বাঁধ নির্মাণ সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সঠিক নয়। হিমালয়ের পাদদেশে ২৩টি বাঁধ রয়েছে। ’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ন্যূণতম পানির প্রবাহে যেন বাধা না হয় সেজন্য বাঁধ নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনাকারী এনএইচপিসিকে আবেদন জানানো হবে। ’
সরকারের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেওয়া আসামের বনমন্ত্রী রকিবুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা বাঁধ নির্মাণ বন্ধের কথা বলেননি। তারা শুধু বলেছেন এর ক্ষতিকর দিকগুলোর প্রতিকারের কথা। ’
তিনি জানান, বৈঠকের আলোচ্য বিষয়গুলো কয়েকদিনের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী তরুন গগৈয়ের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
সুবনসিরি বাঁধের কিছু তথ্য: অরুনাচল প্রদেশের সুবনসিরি নদীর নিম্ন প্রবাহের নির্মিতব্য এ বাঁধে ২০০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হবে।
১১৬ মিটার উঁচু বাঁধের পানি দিয়ে ২৫০ মেগাওয়াটের ৮টি টারবাইনে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
বাঁধটি নির্মাণে ব্যয় করা হচ্ছে ৬ হাজার ২৮৫ কোটি ৩৩ লাখ ভারতীয় মুদ্রা (প্রায় ১১ হাজার কোটি বাংলাদেশি টাকা)।
২০১২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দরপত্র অনুযায়ী এর কাজ শেষ করবে ভারত সরকারের প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হাইড্রো হাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড।
বাংলাদেশ সময় : ২৩২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১২