ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সপ্তাহের ব্যবধানে মসলার বাজারে আগুন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৯ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২৩
সপ্তাহের ব্যবধানে মসলার বাজারে আগুন

* ১২০-১৫০ টাকার আদা ২২০-৩০০ টাকা, ৫৯০ টাকার জিরা ৮০০-৯০০ টাকা
* লাফিয়ে বাড়ছে ডিমের দাম

ঢাকা: নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা চলছেই। পণ্যের মূল্য কমার চেয়ে বাড়ার তালিকাই বেশি।

দিন দিন তালিকার বহর যেন আরও দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহেই পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় ক্রেতাদের কষ্টের যেন শেষ নেই; উঠেছে নাভিশ্বাস। মোটকথা বাজারে কোনো কিছুতেই স্বস্তি নেই।

বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২২০ টাকায় এবং চায়না বা আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। সপ্তাহ খানেক আগেও দেশি আদার দাম ছিল ১২০-১৫০ টাকা কেজি। বর্তমানে বড় রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজিতে এবং ছোট রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি। কিন্তু সপ্তাহ খানেক আগেও রসুনের দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি।

বর্তমানে জিরার দামও বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকায়। আর প্রতিকেজি পেঁয়াজ  বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৪০ টাকা।

আর সপ্তাহ খানে আগে ১৩০ টাকা ডজন বিক্রি হওয়া ডিম বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, যা রোজায় ছিল ১২০ টাকা কেজি।

পবিত্র ঈদ-উল আজহার বাকি এখনো দুই মাস। এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে মসলাসহ বেশির ভাগ পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন, সামনে কিছু কিছু পণ্যের দাম আরও বাড়বে! অর্থাৎ ভোক্তাদের জন্য বাজারে আপাত কোনো সুখবর নেই।

বুধবার (৩ মে) সরেজমিনে রাজধানীর খিলগাঁও বাজার, সেগুনবাগিচা কাঁচা বাজার, মালিবাগ বাজার এবং মেরাদিয়া বাজারসহ বেশ কিছু বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে দাম বাড়ার এমন চিত্রই দেখা গেছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্যমতে, আলু, দেশি ও আমদানি পিঁয়াজ, দেশি রসুন, দেশি ও আমদানি আদা, জিরা, দারুচিনি, তেজপাতা, চিনি এবং ডিমের মূল্য বেড়েছে।

অন্যদিকে সরু ও মাঝারি চাল, বড় ও ছোট মসুর ডাল, আমদানি করা রসুন, দেশি হলুদ, ধনিয়া এবং ব্রয়লার মুরগীর মূল্য কমেছে।

মসলার বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২২০ টাকায় এবং চায়না বা আমদানি আদা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। সপ্তাহ খানেক আগেও দেশি আদার দাম ছিল ১০০-১২০ টাকা কেজি। বর্তমানে বড় রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি এবং ছোট রসুন ১৮০ টাকা কেজি। যা সপ্তাহ খানেক আগেও রসুনের দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা কেজি। প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকায়। আর পেঁয়াজ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৪০ টাকা।

শাহাজানপুর রেলওয়ে সুপার মার্কেটের মসলা ব্যবসায়ী মো. ইয়াসিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চকের থেকে মসলা কিনে এনে বিক্রি করি। সব ধরনের মসলার দামই বেশি। দাম বাড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিছু বলেন না। তাই যে মসলার দাম বেশি থাকে সেগুলো কিনি না। এক মাস আগেও যে জিরা ৫৯০ টাকায় কিনেছি, এখন সেই তা পাইকারি বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে ৬৮০ টাকা দিয়ে। রোজায় দেশি আদা বিক্রি করেছি ১৬০ টাকা, আর এখন বিক্রি করছি ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ রোজায় ছিল ৪০ টাকা আর বর্তমানে ৫৫ টাকায়। রমজান মাসে খোলা চিনি ছিল ১২০ টাকা আর বর্তানে বিক্রি করছি ১৪০ টাকা।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতীয় শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ৪২০ টাকা এবং দেশি শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ৩৭০ টাকা। গুঁড়া হলুদের কেজি ২৫০ টাকা, গুঁড়া মরিচ ৪৫০ টাকা এবং ধনিয়া ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঠ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকা। মশুরের ডাল দেশি প্রতি কেজি ১৩০ টাকা এবং আমদানিকৃত মশুর ডাল ৯৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, আর মুগ ডাল প্রতি কেজি ১৩০ টাকায়।

বাসার জন্য খিলগাঁও বাজার থেকে মসলা কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফয়জুল হক। ৯৫০ টাকায় পিঁয়াজ, আলু, ছোলা ও রসুন কেনেন তিনি। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যেসব পণ্যগুলো কিনেছি সবগুলির দাম আমার কাছে বেশি মনে হচ্ছে। দাম বেশি কেন জানতে চাইলে খুচরা বিক্রেতা পাইকারের ওপর দোষ চাপায়। সবাই নিজের মতন বিক্রি করছে, কেউ দাম বাড়ার দায় নিচ্ছে না। ফলে আমরা ক্রেতারাই সবচেয়ে বেশি ভুগছি। বেশি দাম দিয়ে আমাদেরই কিনতে হচ্ছে।

চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আঠাইশ চাল ৫৫ টাকা, মিনিকেট চাল ৭২, গুটি স্বর্ণা চাল ৫০, নাজির শাইল ৮০ টাকা, পাইজাম চাল ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে কম দামি সবজির মধ্যে আছে ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া টমেটো, ঢেঁড়স। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকায়। ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সবজির মধ্যে আছে ঝিঙ্গা, গোল বেগুন, পটল, করলা, কচুর লতি। বিভিন্ন ধরনের শাঁকের আটি বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়। কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১০০-১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

মুরগির বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, লাল মুরগি ৩৫০ টাকা, বড় সাইজের সোনালী এবং কক মুরগী প্ ৩৫০-৩৬০ টাকা। দেশি পাতি হাঁস প্রতি পিস ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খিলগাঁও বাজারে কথা হয় ব্যাংকার মো. সাইফের সঙ্গে। তিনি জানান, ১৩৫০ টাকায় দুইটা ফার্ম এবং দুইটা কক মুরগি কিনেছেন। বাজারে মাছ, মুরগি সবকিছুর দাম অনেক বেশি। তবে ঈদের সময় মুরগির দাম যে পরিমাণ বেড়েছিল এখন কিছুটা কমেছে। তারপরও আগের দামে ফেরেনি।

খিলগাঁও মুরগির বাজারের বিসমিল্লাহ ব্রয়লার মুরগির দোকানি মুন্না বাংলানিউজকে বলেন, পাইকারি বাজারে দাম কমে না, শুধু বাড়তির দিকে। কাপ্তান বাজার, তেজগাঁও বাজারের মতো পাইকারি বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে মুরগির দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গতকাল কাপ্তান বাজারের এক পাইকারি দোকানে আমাকে ব্রয়লার মুরগির দাম বলেছিল প্রতিকেজি ২২২ টাকা কেজি। কিন্তু ১০  মিনিট পরই যখন ১০০ কেজি দিতে বললাম, সেই একই দোকানি বলছেন ২৩০ টাকার নিচে বিক্রি করবেন না। মোট কথা তাদের মনমত ঘণ্টায় ঘণ্টায় মুরগির দাম বাড়ায়। এক রেটে তারা কখনই বিক্রি করে না। এদিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৯ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২৩
ইএসএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।