ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ডিম ও আলুর দাম কমাতেই আমদানির অনুমতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৩
ডিম ও আলুর দাম কমাতেই আমদানির অনুমতি

ঢাকা: ডিম ও আলুর দাম কমাতেই আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে ১০ হাজার ৯৫ টন আলু আমদানি হয়েছে।

২ লাখ টন আলুর আইপি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে ৬২ হাজার পিস ডিম আমদানি হয়েছে।

তিনি বলেন, ডিম ও আলু আমদানি হওয়ায় উল্লেখযোগ্য ফল আমরা পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা গেছে, কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৭ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি হবে। জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু বের হবে।

সোমবার (১৩ নভেম্বর) সকালে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বাণিজ্যসচিব।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পামওয়েলের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় গত বছরে সয়াবিন তেলের দাম এক পর্যায়ে প্রতি লিটার ২০৫ টাকা হয়ে যায়। সেটা আমরা ধাপে ধাপে কমিয়ে সর্বশেষ এক লিটারের বোতল ১৭৯ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারের দাম ওঠানামার সঙ্গে মিল রেখে তেল-চিনির দাম সমন্বয় করা হয়।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, সব সময় আলু রপ্তানি করা হতো। আর ডিম আমদানি বন্ধ ছিল। কিন্তু আমরা জানি, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম নির্ধারিত হয়, চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে। সেই যোগানটা হলো দেশের উৎপাদন ও আমদানি। যেহেতু আমদানি বন্ধ ছিল, আমরা দেখলাম দাম অনেক বেড়ে গেছে, যে কারণে প্রথমে আমরা দাম নির্ধারণ করে দিই, কিন্তু তাতে সফল না-হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করে ডিম ও আলু আমদানির জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, গতকাল পর্যন্ত ১০ হাজার ৯৫ মেট্রিক টনের বেশি আলু আমদানি হয়েছে। আর ডিম আমদানি হয়েছে ৬২ হাজার পিস। কিন্তু ডিম আমদানির অনুমতি আমরা দিয়েছি, ২৫ কোটি। কিন্তু আমদানি শুরু হতে দেরি হয়েছে। কারণ এখানে রপ্তানিকারক দেশের দুটি সার্টিফিকেট লাগে। একটা হচ্ছে, যে চালানটি আসছে সেটি বার্ড ফ্লুমুক্ত হতে হবে, অন্যটি যে দেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে, সেটি অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা কিংবা বার্ড ফ্লুমুক্ত হতে হবে।

বিশ্ব প্রাণি স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে জেনেছি, তাদের কাছে এভাবে কোনো দেশকে বার্ড ফ্লু কিংবা অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জামুক্ত ঘোষণার কোনো তালিকা নেই। তখন এটিকে সংশোধন করে আইপিও দিয়েছি, একটি অঞ্চল যদি বার্ড ফ্লুমুক্ত থাকে, সেখান থেকেও আমদানি করা যাবে। এ কারণে ডিম আমদানি সম্ভব হচ্ছে, আরও আমদানি করা যাবে, বলেন এই সিনিয়র সচিব।

বাণিজ্যসচিব আরও বলেন, আমরা ডিম ও আলু আমদানি উন্মুক্ত করার পরে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সরকার নির্ধারিত দাম বাস্তবায়নের চেষ্টা করায় এ দুটি পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য কমেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে গতকাল নির্দেশনা গেছে, সরকার নির্ধারিত আলুর দাম এটা বাস্তবায়ন করতে জেলা প্রশাসকরা আজ থেকে প্রতিটি কোল্ড স্টোরেজে কর্মকর্তা নিয়োগ করে দিয়েছেন। তাদের উপস্থিতিতেই কেবল ২৭ টাকা দামে আলু বিক্রি হবে। এরপর ভোক্তা পর্যায়ে ৩৬ টাকায় যাতে বিক্রি হয়, সে জন্য তদারকি থাকবে।

‘২৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য ডিম আমদানি না, দাম কমানো। সেক্ষেত্রে যদি দেখা যায়, আমদানি কম হচ্ছে, কেননা যে ডিমের দাম এমন পর্যায়ে কমে গেছে যে, আমদানিকারকরা আনতে চাইবে না। কিন্তু ডিমের দাম কমে গেলে আমদানি কম হলেও ক্ষতি নেই। ’

ডিম ও চিনি সিন্ডিকেট করে অনেকে ব্যবসা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কিনা জানতে চাইলে এই সিনিয়র সচিব বলেন, এসব বিষযে তদন্ত হচ্ছে। আপনারা জানেন ভোগ্যপণ্য যেমন- তেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, মাংস, ডিম এসব যে বড় বড় কোম্পানি রয়েছে তারা একটি অ্যান্টি কম্পিটিশন মূল্য নির্ধারণ করে বাজারে প্রভাব বিস্তার করে, সেটা করে বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা দেখার জন্য আমাদের প্রতিযোগিতা কমিশন রয়েছে। সেখানে ৬৫টি মামলা চলমান। এরমধ্যে দুটি কোম্পানিকে ৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশনের আইন অনেক শক্তিশালী। যেমন ভোক্তা আইনে তিন লাখের বেশি জরিমানা করা যায় না। কিন্তু এই আইনে ৫০০ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করতে পারে। এজন্য আমাদের সবার উচিৎ প্রতিযোগিতা কমিশনকে সহযোগিতা করা। যাতে প্রতিযোগিতাহীন মূল্য নির্ধারণ করে মানুষকে ঠকাতে না পারে।

এতে বাজারে কি কোনো প্রভাব পড়েছে জানতে চাইলে সচিব বলেন, বাজারে অবশ্যই প্রভাব পড়েছে। এই যে ডিমের দাম কমানো হয়েছে, মুরগির দাম যে স্থিতিশীল আছে আমি মনে করি এটার একটা প্রভাব আছে।

সরকার যে তিনটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিল, এতে কী লাভ হলো এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আমাদের যে পদক্ষেপগুলো সেটা অনেক দিন ধরে দাম বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। এতে সয়াবিন বা পামওয়েলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কারণ সেখানে সরবরাহ আছে। চিনির দাম মানা হচ্ছে না কেননা সরবরাহ কম। ডলারের বিনিময় হার কমে গেছে। ডলারের দাম বেশি। সেই প্রতিফলনটাই দেখা যাচ্ছে। ৯৯ ভাগ চিনি বিদেশ থেকে আসে তাই আমদানি মূল্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে সরকারের নজরদারি না থাকলে, মনিটরিং না থাকলে অনেক বেশি বাড়তে পারতো, সেখানেই সফলতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৩
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।