ঢাকা: ঈদুল ফিতরে টানা ৯ দিন ছুটির পর খুলেছে ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। খুলেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও শেয়ার বাজার।
রোববার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর মতিঝিল, ফার্মগেট মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর ব্যাংকপাড়া খ্যাত মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখাতে লম্বা লাইন ধরে লেনদেন করেছেন গ্রাহকরা। একই অবস্থা দেখা গেছে রূপালী ব্যাংকের শাখাতেও। শাখা দুটিতে বেশিরভাগই এসছেন টাকা জমা দিতে। ব্যবসায়ীরা ঈদের আগের বেচাবিক্রির টাকা জমা করতে এসেছেন। আবার টাকা তুলেছেনও অনেকেই। তবে টাকা জমার দেওয়ার হারই ছিল বেশি।
সকালে কর্মস্থলে এসে কর্মীরা নিজেদের মধ্যে ঈদের শুভেচ্ছ বিনিময় সেরে নেন আগে। তারপর কাজে মনোনিবেশ করেন। ব্যাংকের শাখায় আসা গ্রাহকের সঙ্গেও অনেকে ঈদের শভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
সকাল ১১টায় দেখা যায়, মিরপুর-১০ নম্বরে ব্র্যাক ব্যাংকের রোকেয়া সরণি শাখায় ম্যানেজার নুসরাত শারমিন মনিকা গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলছেন। বাইরের অন্যান্য ডেস্কের সামনে লাইন ধরে গ্রাহকরা লেনদেন করছেন। অন্যান্য কর্মদিবসের মতোই সেবাগ্রহীতাদের ভিড় ছিল শাখাটিতে।
ব্যাংকটির গ্রাহক আমিনুল ইসলাম মিরপুর শেওরাপাড়া থেকে এসেছেন। তিনি এসএমই উদ্যোক্তা। আমিনুল ইসলাম বলেন, ঈদের মধ্যে টাকার প্রয়োজনে অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) থেকে টাকা উত্তোলন করেছিলাম। আজকে এসেছি টাকা জমা দিতে। অন্যান্য দিনের মতোই ভিড়।
ব্যাংকটির এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (কমিউনিকেশন) একরাম কবীর বলেন, এ শাখাতে লেনদেন শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকদিন বন্ধ থাকার কারণে অনেকে টাকা জমা দিতে পারেননি, তারা জমা দিচ্ছেন। আবার উত্তোলনও করছেন কেউ কেউ। তবে এখনো দোকান-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেনি, যত সময় যাবে গ্রাহকের উপস্থিতি বাড়বে।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শাখাতেও সেই চিরচেনা রূপ। সকাল থেকে যত বেলা বেড়েছে গ্রাহকের উপস্থিতিও বেড়েছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সিনিয়র অ্যাসিট্যান্ট ভাইস-প্রেসিডেন্ট (এসএভিপি) ও শাখা ডেপুটি ম্যানেজার মোহাম্মদ মনজুর হোসাইন বলেন, ডাচ-বাংলা ব্যাংকে ঈদ-পূজা পার্বন লেনদেন চলে। এটিএম বুথ থেকে যেমন টাকা উত্তোলন করে, আবার ফাস্ট ট্র্যাক থেকে টাকা জমাও করতে পারে। ফলে ছুটির পর জমা দেওয়া বাড়বে, তেমনটা প্রয়োজন হয় না। গ্রাহরা ছুটির মধ্যেই টাকা জমা ও উত্তোলন করেন। ফলে অস্বাভাবিক চাপ নেই। স্বাভাবিক লেনদেন চলছে। আজ প্রথম দিন আগামীকাল গ্রাহকের লেনদেন আরও বাড়বে।
রাজধানীর মার্কেটগুলো সারা বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করে থাকে ঈদের সময়ে। এজন্য ব্যাংক লেনদেন কয়েকগুণ বাড়ে চাঁদরাত পর্যন্ত। যেসব ব্যাংকের ফাস্ট ট্র্যাক বা যান্ত্রিক লেনদেন সম্বলিত এটিএম বুথ আছে সেখানে ব্যস্ততা থাকে। তবে ঈদের ছুটিতে মানুষ গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ার কারণে চাঁদ রাতের পরের তিন-চার দিন পর্যন্ত সেই অর্থে আর লেনদেন থাকে না; জানান একাধিক ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার।
রাজধানীর মার্কেট নির্ভর ব্যাংক শাখার যাবতীয় কার্যক্রম নির্ভর করে মার্কেটের ব্যবসা ভালোমন্দ বা খোলা থাকা না থার ওপর। এমনটা জানালেন এনসিসি ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার (অপারেশন) ফকরুল হাসান। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের শাখাতে গ্রাহকরা আসছেন। ঈদ শেষে মানুষর হাতে নগদ টাকা প্রয়োজন হচ্ছে, টাকা তুলছেন। লেনদেন ছাড়া একাউন্ট খোলাসহ অন্যান্য সেবা নিতেও আসছেন। তবে পাশের বড় মার্কেট শাহ আলীর সাপ্তাহিক ছুটির কারণে গ্রাহক কম আসছে। আগামীকাল থেকে লেনদেনের চাপ চাপ বাড়বে।
ঈদের ছুটিতে ৯দিন বন্ধ ছিল ব্যাংক, বিমা ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। গত ২৭ মার্চ ব্যাংক-বিমা ও শেয়ার বাজারে সর্বশেষ লেনদেন হয়। এর পর পবিত্র ঈদুল ফিতর ও বিশেষ ছুটি মিলে শনিবার (৫ এপ্রিল) পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল।
এ ছাড়া শিল্পঘন এলাকায় ২৮ ও ২৯ মার্চ ব্যাংকের শাখা খোলা ছিল। এমপিও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য ২৮ মার্চ একদিন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা চালু ছিল। ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত (ঈদের দিন ছাড়া) সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালু রাখতে বন্দর এলাকায় ব্যাংক চালু ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২৫
জেডএ/এমজেএফ