ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

লকডাউন শিথিল করে ধান না কাটলে খাদ্য ঝুঁকি বাড়বে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২০
লকডাউন শিথিল করে ধান না কাটলে খাদ্য ঝুঁকি বাড়বে

ঢাকা: কৃষি শ্রমিকদের জন্য লকডাউন শিথিল করে বিশেষ ব্যবস্থায় বোরো ধান ঘরে তোলার ব্যবস্থা না করলে দেশে খাদ্য ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে করছেন বিভিন্ন কৃষক সংঘটনের নেতৃবৃন্দ এবং অর্থনীতিবিদেরা।

দেশের বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে কৃষক নেতা এবং অর্থনীতিবিদরা এমন মত প্রকাশ করেছেন।  

দেশের দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্বের হাওরাঞ্চলে ধান ইতিমধ্যে পেকে গেছে।

এসব অঞ্চলে প্রতিবছর উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষি শ্রমিকরা আসেন ধান কাটতে। কিন্তু সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকার ফলে শ্রমিক সংকটে দিশেহারা এখানকার কৃষক। পাশাপাশি হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যার পূর্বাভাস কৃষকের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো অবস্থা সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় দেশের মানুষের খাদ্যের যোগান ঠিক রাখতে হলে দ্রুত কৃষি শ্রমিকদের জন্য লকডাউন শিথিল করে ফসল কাটার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কৃষক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ ওয়াজেদ পারভেজ এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘লকডাউনের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান কাটার জন্য কৃষি শ্রমিকের অভাব দেখা যাচ্ছে। শ্রমিকের অভাবে অনেকেই ক্ষেতের ফসল পাকলেও কাটতে পারছেন না। এ অবস্থায় ধান কাটার জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় শ্রমিকদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। ’

বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএমএ সবুর বলেন, ‘সঠিক সময়ে ধান কাটার জন্য সরকার দুই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। প্রথমত, প্রতি ইউনিয়নে ধান কাটা এবং মাড়াইয়ের মেশিন সরবরাহ করতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াই করার মেশিন ভাড়া দিতে পারে। কৃষক তার ধান কেটে বিক্রির পর বিআরডিবিকে ভাড়ার টাকা পরিশোধ করে দেবে। দ্বিতীয়ত, যে সমস্ত এলাকায় করোনার ঝুঁকি কম, সেসব এলাকা থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বিশেষ বাস বা ট্রেনে করে শ্রমিকদের নিয়ে এসে ধান কাটার ব্যবস্থা করা এবং তাদেরকে স্কুল কলেজ এবং মাদ্রাসায় থাকার বন্দোবস্ত করে দেওয়া।  বিশেষ করে হাওর অঞ্চলের ধান যেন আগে কাটার ব্যবস্থা করা যায় সেই ব্যবস্থা করা। নাহলে উজানের ঢলে যে কোনো সময় এসব ফসল তলিয়ে যেতে পারে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত, যারা কৃষক-শ্রমিকের জন্য রাজনীতি করেন, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তারা নেতাকর্মী, ছাত্র, যুবকদের কৃষকের ধান কেটে গোলায় তুলে দেওয়ার আহবান জানাতে পারেন। ’

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ
  
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। সরকার ইতিমধ্যে ধান কাটার জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে ধান কাটার জন্য শ্রমিক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্থানীয়ভাবেও যারা বেকার হয়ে পড়েছে করোনার কারণে, তাদেরকেও ধান কাটার কাজে লাগানোর চেষ্টা চলছে। সরকার ধান কাটার যন্ত্রও ব্যবহার করছে। সবদিক থেকেই চেষ্টা করা হচ্ছে, আমি বলেছি আরও জোরদার চেষ্টা করতে। এই বোরো মৌসুমের ধান ঘরে তুলতে পারলে আমাদের খাদ্য সমস্যা থাকবে না। আমাদের মোট ধানের উৎপাদনের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ আসে বোরো ধান থেকে। সরকারের গুদামে চাল আছে এবং এই বোরো মৌসুমের ফসল ঘরে তুলতে পারলে আমাদের এ বছরে আর খাদ্যের কোনো অভাব হবে না। তাই যারা ধান কাটবে তাদের জন্য লকডাউন শিথিল করা উচিৎ। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২০
আরকেআর/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।