রোববার (০৭ জুন) কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে রপ্তানি উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে রপ্তানি প্রণোদনায় অন্তর্ভুক্ত বিদ্যমান রপ্তানি খাতে ২০২০-২১ অর্থবছরে কোন কোন খাতে রপ্তানি প্রণোদনা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে সে সম্পর্কিত ভার্চুয়াল সভায় এ দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ওবায়দুল আযমের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, এমসিসিআইসহ অন্য বাণিজ্য সংগঠনের নেতারা সভায় অংশ নেন।
সভায় বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমএ) সেক্রেটারি নওশেরুল আলম বলেন, ‘করোনার আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর একটি কাগজ শিল্পখাত। স্থানীয় বাজারে চাহিদার অপ্রতুলতায় রপ্তানি বাড়ানো ছাড়া দেশি কাগজ মিলগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এজন্য কাগজ রপ্তানিতে ক্যাশ ইনসেনটিভ ৩০ শতাংশ করার করার দাবি জানাচ্ছি। কাগজ শিল্পে উৎপাদিত পণ্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি না করলে দেশে উৎপাদিত কাগজের সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের অভাবে এই শিল্পখাত নিশ্চিতভাবেই রুগ্ন শিল্পে পরিণত হবে। ’
তিনি বলেন, বর্তমানে কাগজ ও কাগজজাতীয় পণ্য রপ্তানির বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে ক্যাশ ইনসেনটিভ দেওয়া হচ্ছে, যা উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় অপ্রতুল। এজন্য কাগজ রপ্তানিতে ক্যাশ ইনসেনটিভ বিদ্যমান ১০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে বাড়াতে হবে। তা না হলে রপ্তানি প্রতিযোগিতায় আমরা অনেক পিছিয়ে যাবো। আমাদের এই ৩০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হলে দেশি কাগজের মিলগুলোতে উৎপাদিত সকল গ্রেডের কাগজ ও কাগজজাতীয় পণ্য প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বিদেশে রপ্তানি বাড়াতে পারবো। পাশাপাশি দেশের জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো। ’
বিপিএমএ সেক্রেটারি বলেন, ‘দেশের কাগজ মিলগুলো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নিউজপ্রিন্ট ও কাগজজাতীয় পণ্য উৎপাদন করে সকল ধরনের কাগজের দেশি চাহিদা সম্পূর্ণ মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম। গত কয়েকমাসে দেশি কাগজ মিলগুলো গড়ে প্রায় ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য ৩০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি করেছে। ক্যাশ ইনসেনটিভ বাড়ানো হলে ভবিষ্যতে রপ্তানি বেড়ে প্রতিমাসে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে। ’
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব
ওবায়দুল আযম জানান, ‘করোনার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর ক্ষতি কমাতে সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কাগজ শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তারা যে কাগজ রপ্তানিতে ক্যাশ ইনসেনটিভ চেয়েছে, তা বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত মতামত দেবে। আশা করছি, এ বিষয়ে ভালো ফলাফল পাবো। তবে করোনা কালে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ’
বিপিএমএ সূত্র জানায়, বাংলাদেশে কাগজ মিলের সংখ্যা ১০৬টি। দেশি কাগজ মিলগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিকটন এবং স্থানীয় চাহিদা ৬ লাখ মেট্রিকটন। স্থানীয় চাহিদার অপ্রতুলতায় ৬৪টি মিল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট ৪২টি মিল কোনোমতে ধুঁকে ধুঁকে চলছে।
কাগজ শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল মূলতঃ আমদানিনির্ভর। ব্যবহৃত দেশি-বিদেশি কাঁচামালের মূল্যগত অনুপাত ৩০ শতাংশ : ৭০ শতাংশ। দেশি কাগজ শিল্প শ্রমঘন উৎপাদন শিল্প। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৬০ লাখ মানুষের জীবিকা এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। এই খাতে বর্তমানে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। সরকারি কোষাগারে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য অংকের রাজস্ব দিয়ে থাকে এবং আমদানি বিকল্প শিল্প হিসাবে বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করছে। কাগজ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয় বলে প্রতিটি কারখানাই পরিবেশবান্ধব।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘন্টা, জুন ০৭, ২০২০
জিসিজি/এনটি