ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করোনা-আম্পান: মাগুরায় লোকসানের মুখে লিচু চাষিরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৩ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০২০
করোনা-আম্পান: মাগুরায় লোকসানের মুখে লিচু চাষিরা

মাগুরা: এসেছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। নিজস্ব মহিমায় প্রকৃতিতে সুবাস ছড়াচ্ছে লিচুর বাগান। তবে এবার সেই সুবাসে বাধা পড়েছে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) ও ঘূর্ণিঝড় আম্পান। ফলন ভাল হলেও হাসি নেই লিচু চাষিদের মুখে। প্রতিবছর এ সময় লিচুর বাজার জমে উঠলেও এবার ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে মাগুরা ইছাখাদা, হাজরাপুর, হাজিপুর, আঠারোখাদা লিচু চাষিরা। 

এবার করোনা ভাইরাসের কারণে দেখা নেই ব্যবসায়ীদের। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডব।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে উঠতি লিচু ফেটে গিয়েছে, গায়ে দেখা দিয়েছে স্পট।  

ইছাখাদা গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে এ অঞ্চলের লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ী না আশায় লোকসানের মুখে পড়েছেন লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা।  

লিচু ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর ৩০ কোটি টাকার বেশি লিচু বিক্রি হওয়ার কথা ছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারি করোনার কারণে তা এখন ২০ কোটি টাকাও হবে না।  

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ১শ লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ৩শ কাটায়। গত বছর ১ হাজার লিচু বিক্রি হত ২ হাজার টাকা থেকে ২৫শ টাকা। এখন তা নেমে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ১২শ টাকা থেকে ১৫শ টাকায়। হাজরাপুরী লিচু অন্য লিচু থেকে এক মাস আগে বাজারে পাওয়া যায় বলে এ লিচুর চাহিদা রয়েছে দেশ জুড়ে।  

তবে কিছুটা ভিন্ন চিত্র মাগুরা সদর উপজেলা হাজরাপুর, ইছাখাদা লিচু চাষিদের মনে। অনেক লিচু চাষি অপরিপক্ব লিচু বাজারজাতকরণে আগাম ব্যবস্থা নিয়েছিল চাষিরা।  

মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় এ বছর ৫৮০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। লিচুর ফলন ভাল হয়েছে।  

করোনা-আম্পান: মাগুরায় লোকসানের মুখে লিচু চাষিরা

লিচু চাষি হালিমা বেগম বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ বছর আসেননি। আমরা ৭শ টাকা করে এক জন শ্রমিক নিয়ে নিজেরাই শ্রম দিয়ে বাগান থেকে লিচু বেছে ফরিদপুর পাঠাচ্ছি। ওখান থেকে ১২শ টাকা থেকে ১৫শ টাকা করে ফেরত আসছে। তাও দুই চালান পাঠিয়েছি আজ গেলে তিন চালান যাবে, এ পর্যন্ত কোনো টাকা পাইনি।   

হাজরাপুর গ্রামের লিচু চাষি মজনু শেখ বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর প্রচুর লিচুর ফলন ভাল হলেও বেচা বিক্রি ভাল না। হতাশার সুরে তিনি বলেন, অন্য বছরে আমাদের এলাকায় প্রতিদিন পঞ্চাশটি গাড়ি লোড হত। এবার পাঁচটা গাড়িও লোড হচ্ছে না। বাইরের জেলার ব্যবসায়ী না আশায় লোকসানের মুখে পড়েছি আমরা।  

শরিয়াতপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকায় আমাদের হাজরাপুরী লিচুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে এ বছর অন্য জেলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় লিচু বিক্রি করতে পারিনি। করোনা ভাইরাসে ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে লিচু অবিক্রিত থেকে গেছে।  

লিচু চাষি আব্দুল করিম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের হাজরাপুরী লিচু গত বছর বিক্রয় হয়েছে ১৮শ টাকা থেকে দুই হাজার ২২শ পর্যন্ত। সেই তুলনায় এ বছর লিচুর দাম এক হাজার টাকা থেকে ১২শ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। এত কম দামে লিচু বিক্রি করলে আমাদের সংসার চালানো দায়, ওষুধ-কীটনাশকের দামও উঠছে না।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জাহিদুল আমিন বলেন, জেলায় এ বছর ব্যাপক লিচুর চাষ হয়েছে। মাগুরা হাজরাপুরী লিচু অন্য জেলার তুলনায় বাজারে আগাম পাওয়া যায় এ জন্য এর চাহিদা বেশি। ঢাকা, খুলনা, গাজীপুর, ফরিদপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় এ লিচুর চাহিদা রয়েছে। করোনা ভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে লিচু বাজারজাত করতে সমস্যা হয়েছে।

এছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে চাষিরা আগাম লিচু বাগান বিক্রিও করতে পারেনি। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা পুলিশ কৃষিপণ্য যাতে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে সে ব্যাপারে সহযোগিতা করছি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।