ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও কলা-বাণিজ্য অনুষদের মাঝখানের পুরো জায়গায় একসময় সবুজের সমারোহ ছিল। মলচত্বরের এই জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শতবর্ষের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করে।
নির্মাণকাজের ফলে ধুলায় আশপাশে প্রতিটি গাছের পাতা এখন ধূসর হয়ে গেছে। এই ধূলোময় পরিবেশ এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু এই অংশেই নয় পুরো ক্যাম্পাসই এখন বায়ুদূষণের কবলে পড়েছে।
শুষ্ক মৌসুম, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চলাচল, স্থাপনা নির্মাণ, নিয়মিত পানি ছিটানোর অভাব, খালি স্থানে ঘাস না লাগানো, খোলা জায়গায় গাছের ঝরা পাতা, কাগজ-পলিথিন ও অন্যান্য বর্জ্য পোড়ানোসহ নানা কারণে তীব্র বায়ুদূষণ ঢাবি ক্যাম্পাসজুড়ে।
গত বেশ কয়েকদিন ধরেই বায়ুদূষণে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় এর প্রভাবও পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মলচত্বরে শতবর্ষ মেমোরিয়াল নির্মাণ কাজের প্রভাব পড়েছে আশেপাশের পরিবেশে। চারদিকে টিনের বেড়া দেওয়া হলেও দূষণ রোধে তা যথেষ্ট নয়।
নীলক্ষেত মোড় থেকে টিএসসি পর্যন্ত সড়কে ট্রাক-বাসসহ অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চলাচলের ফলে প্রচুর ধুলা ওড়ে। একই চিত্র শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত সড়কেও।
এদিকে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় প্রতিদিনই রাস্তায় সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট ও ধুলাময় পরিবেশের। মেডিকেল মোড় থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত সড়কের পাশে চলছে নালা সংস্কারের কাজ। এতেও ধুলা উড়ছে নিয়মিত।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি খেলার মাঠ বৃষ্টির অভাবে অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে গেছে। এতে ধুলা-বালি উড়ছে। আর এর মধ্যেই খেলাধুলা করছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শুষ্ক মৌসুম আসতে না আসতেই ক্যাম্পাসে ধুলাবালি বেড়ে যায়। এই সমস্যা নিরসনে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার সমালোচনা করেন তারা। প্রশাসন সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নিলে বায়ুদূষণ অনেকাংশেই কমানো সম্ভব হতো বলে মনে করেন তারা।
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মনসুর বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নই। ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সুবাদে আরও অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। সবচেয়ে অগোছালো ও অপরিষ্কার হলো এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এখানে শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করার মতো পরিবেশের ঘাটতি রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পানি ছিটানো হয়। এ ছাড়া প্রতিটি হলের পক্ষ থেকেও পানি দেওয়া হয়। তবে তা পর্যাপ্ত মনে করছেন না শিক্ষার্থীরা।
মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নেহাল হোসেন বাকি বলেন, ক্যাম্পাসের ভেতরে অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই সমাধান মিলবে অনেক সমস্যার। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় এখানে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। তবে এমন পরিস্থিতি আমরা আশা করি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিক হলে যেকোনো সমস্যা সুন্দরভাবে সমাধান করা সম্ভব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা বাংলানিউজকে বলেন, পানি ছিটানোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। বিষয়টি জানিয়ে ভালো করেছেন। আমরা সংশ্লিষ্টদের অবহিত করব যেন পর্যাপ্ত পানি ছিটানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পানি ছিটানো হয়। আমি সংশ্লিষ্টদের বলবো পর্যাপ্ত পানি ছিটাতে যেন শিক্ষার্থীদের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২৩
এসকেবি/আরএইচ