ঢাকা, রবিবার, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শব্দদূষণে বিঘ্নিত ঢাবির শিক্ষার পরিবেশ, নেই নিয়ন্ত্রণ

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩
শব্দদূষণে বিঘ্নিত ঢাবির শিক্ষার পরিবেশ, নেই নিয়ন্ত্রণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): বিশ্ববিদ্যালয়টির রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী শ্রাবণী আক্তার। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলায় সন্ধ্যা থেকে বইয়ে মন দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।

কিন্তু পাশে টিএসসির পায়রা চত্বরে কনসার্ট-বিটবক্স, গান, হৈ-হুল্লোড় আর চিৎকার-চেঁচামেচিতে বারবার মনোযোগে বিঘ্ন ঘটছে তার। উচ্চশব্দে মাথা ধরায় বিশ্রাম নিতে গিয়েও পাচ্ছেন না রেহাই।

তিনি জানান, প্রায়ই টিএসসিতে সাউন্ডবক্স লাগিয়ে হৈ-হুল্লোড় চলে। ছোট-বড় প্রায় সব প্রোগ্রামে এ ধরনের শব্দদূষণ হয়। এতে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

তার প্রশ্ন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কি এমন হতে পারে?

টিএসসির কাছেই মেয়েদের জন্য নির্মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া ও শামসুন নাহার হল অবস্থিত। শুধু শ্রাবণীই নন, তীব্র শব্দদূষণে অতিষ্ঠ এই দুই হলের প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী। তবে এসব নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নীতিমালা নেই। ফলে ইচ্ছামাফিক সাউন্ডবক্স ব্যবহার করছে আয়োজকরা।

সাংস্কৃতিক মিলনকেন্দ্র হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) পায়রা চত্বর, সবুজ চত্বর, মিলনায়তন ও সুইমিংপুল এলাকায় প্রায়ই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এছাড়া রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, জেলা সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও ইনস্টিটিউট, অ্যালামনাইসহ বিভিন্ন সংগঠন এই স্থানে প্রোগ্রাম আয়োজন করে। এসব প্রোগ্রামে বক্সে উচ্চশব্দে গান-বাজনা চালানো হয়।

মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাস এলাকায় পিকআপ-ভ্যানে বিট-বক্সে অনিয়ন্ত্রিত উচ্চশব্দে গান চালান বহিরাগতরাও। সরেজমিনে দেখা যায়, বিজয় দিবসে সন্ধ্যায় রাজধানীর থানা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার জড়িয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দিচ্ছে পিকআপ ভ্যান। ভ্যানের চারকোণায় চারটি বড় সাউন্ডবক্স। সেগুলোয় মাত্রাতিরিক্ত শব্দে বাজছে গান।

রোকেয়া হলের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শ্রাবস্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা যারা পুরনো বিল্ডিংগুলোয় থাকি, তাদের রিডিংরুম নিচতলায়। প্রায়ই এত বেশি শব্দ হয় যে মনোযোগ দিতে পারি না। কিছুদিন আগে ফাইনাল পরীক্ষা গেল, সে সময়ে বিশ্বকাপ খেলার জন্যে এত শব্দ আসত যে আমরা পড়তে পারতাম না।

তিনি বলেন, যারা ৭ মার্চ ভবনে থাকেন তাদের সমস্যা আরও বেশি। শব্দ বেশি যায় ওদিকে। রাত অব্দি গানবাজনা চলার কারণে ঘুমানো যায় না। যারা অসুস্থ থাকে তাদের আরও বেশি সমস্যা হয়।

একই হলের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রওনক জাহান বাংলানিউজকে বলেন, প্রায়ই এসব শব্দে মাথা ধরে যায়। মানসিক অশান্তি তৈরি হয়।

কবি জসীমউদ্দীন হলসহ আশপাশের হলের শিক্ষার্থীরাও শব্দদূষণের এই সমস্যায় ভুগছেন। জসীমউদ্দীন হল মাঠের পাশে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ চারটি হল অবস্থিত। এ মাঠে প্রায়ই মাইক্রোফোন-সাউন্ডবক্সে চলে ধারাভাষ্য ও গান-বাজনা। শব্দদূষণে এই হলগুলোর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে।

বিজয় একাত্তর হলের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মীর মোরসালিম বাংলানিউজকে বলেন, খেলাধুলায় কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু মাইক-সাউন্ডবক্স দিয়ে গান-বাজনা, চিৎকার, ধারাভাষ্য করার কারণে পড়াশোনায় কোনোভাবেই মন দেওয়া যায় না। গত কয়েকদিন আমার পরীক্ষা ছিল। প্রায়শই মাঠর শব্দের কারণে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটেছে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোনো নীতিমালা নেই। ফলে যার যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবেই টিএসসিতে উচ্চশব্দে অনুষ্ঠান করছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রক্টরিয়াল টিম পাঠিয়ে কয়েকটি প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। এ ব্যাপারে দ্রুতই নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, কোনো কোনো প্রোগ্রামে খুবই অল্প উপস্থিতি থাকে, তারাও বক্স লাগিয়ে উচ্চশব্দে গান চালায়। এতে মেয়েদের হলে খুবই সমস্যা হয়। তবে কোনো নির্ধারিত নীতিমালা না থাকায় এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। উপাচার্যের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। তিনি দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত নেবেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে অবগত হয়েছি। দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।