ঢাকা, রবিবার, ২৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৯ মার্চ ২০২৫, ০৮ রমজান ১৪৪৬

শিক্ষা

মুগ্ধকে স্মরণীয় করে রাখতে খুবির নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৫ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২৫
মুগ্ধকে স্মরণীয় করে রাখতে খুবির নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন

খুলনা: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) গণিত ডিসিপ্লিনের ’১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই রাজধানীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি আন্দোলনরত ক্লান্ত-শ্রান্ত শিক্ষার্থী-জনতাকে পানি পান করাচ্ছিলেন। ‘ভাই, পানি লাগবে পানি’ বলে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার দৃশ্য সকল বাংলাদেশির হৃদয়ে গেঁথে আছে।

মীর মুগ্ধ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছিলেন সকলের প্রিয় পরিচিত মুখ। ছাত্র হিসেবে তিনি একদিকে যেমন ছিলেন মেধাবী, তেমনি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও ছিলেন পারদর্শী। সদা হাস্যোজ্জ্বল মুগ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্রই যেন মুগ্ধতা ছড়িয়ে রেখেছিলেন। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন সরকারের পতন হলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেও আসে ব্যাপক পরিবর্তন।

০২ সেপ্টেম্বর জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পান নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম। পরবর্তীতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন। জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী মীর মুগ্ধকে স্মরণীয় করে রাখতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যা পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হয়।
০৭ সেপ্টেম্বর ’১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন খানবাহাদুর আহসানউল্লাহ নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দিনব্যাপী কোরআনখানী ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মাদ্রাসার জন্য ধর্মীয় পুস্তক ও সিলিং ফ্যান প্রদান করা এবং ৪০ জন এতিম হাফেজ শিক্ষার্থীর দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।

০৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো মীর মুগ্ধ-এর স্মরণ সভা ও অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. মোঃ রেজাউল করিম। এ সভায় উপস্থিত থেকে শহিদ মীর মুগ্ধ’র বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত ও জমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্মৃতিচারণ করেন।

ওই সভায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ৫টি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো- (১) ১৮ জুলাই শহিদ মীর মুগ্ধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান ও যথাযথ মর্যাদায় পালন করা, (২) মেইন গেটের নাম শহিদ মীর মুগ্ধ তোরণ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া, (৩) টিএসসির সামনে শহিদ মীর মুগ্ধ’র স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মৃতিফলক নির্মাণ, (৪) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে রাষ্ট্রের কাছে শহিদ মীর মুগ্ধ হত্যার বিচার চেয়ে আবেদন, (৫) এই আন্দোলনে সকল শহিদের স্মরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে জুলাই গণহত্যা নামে একটি স্মৃতি কর্নার করা।

সে সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো ন্যায্য। এ বিষয়ে আমার যা করণীয় আছে তা করবো। তবে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ না পর্যন্ত এ দাবিগুলো পূরণ করা সম্ভব হবে না। এ দাবির সাথে তিনি যোগ করে বলেন, মুগ্ধ স্মৃতির উদ্দেশ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মুগ্ধ পানি সরবরাহ কর্নার’ করার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। পরবর্তীতে তিনি উপাচার্য নিযুক্ত হলে দাবিগুলো পূরণের উদ্যোগ নেন। যার ফলশ্রুতিতে গত ০৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৩০তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের নাম ‘শহিদ মীর মুগ্ধ তোরণ’ করা হয়। আগামীকাল ০৯ মার্চ (রবিবার) দুপুরে এই তোরণ উদ্বোধন করবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

এছাড়া উপাচার্যের নির্দেশে এ বছর অনুষ্ঠিত আন্তঃডিসিপ্লিন ফুটবল প্রতিযোগিতাকে ‘শহিদ মীর মুগ্ধ আন্তঃডিসিপ্লিন ফুটবল’ প্রতিযোগিতা হিসেবে আয়োজন করা হয়, যার ব্যবস্থাপনায় ছিল শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল ক্লাব। গত ১৭ নভেম্বর ইংরেজি ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে ৩নং একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘মুগ্ধ ওয়াটার কর্নার’ স্থাপন করা হয়। এছাড়াও মীর মুগ্ধ শহিদ হওয়ার পর প্রথম তাঁরই ডিসিপ্লিন ‘গণিত ডিসিপ্লিন’ কর্তৃপক্ষ শোক প্রকাশ করে এবং ইংরেজি ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে প্রথমবার দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম বলেন, শহিদ মীর মুগ্ধরা জীবন দিয়ে নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে অসামান্য অবদান রেখেছে। মুগ্ধদের আত্মত্যাগ দেশকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে। এখন তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের। মীর মুগ্ধ’র মতো দেশপ্রেমিক ছাত্র তৈরি করতে পেরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় গর্বিত। তাঁর স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ০৮ সেপ্টেম্বর মীর মুগ্ধ’র স্মরণ সভায় শিক্ষার্থীরা যে দাবিগুলো করেছিল, তা সিন্ডিকেটের ২৩০তম সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন থেকে প্রতিবছর ১৮ জুলাই ‘শহিদ মীর মুগ্ধ দিবস’ পালন, টিএসসি ভবনের সম্মুখে শহিদ মীর মুগ্ধ’র স্মৃতিস্তম্ভ/স্মৃতিফলক নির্মাণ, রাষ্ট্রের কাছে শহিদ মীর মুগ্ধ হত্যার বিচার চেয়ে আবেদন এবং এই আন্দোলনে সকল শহিদের স্মরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে ‘জুলাই’২৪ গণহত্যা’ নামে একটি স্মৃতি কর্নার করা হবে।


বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২৫
এমআরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।