ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২৬ জিলহজ ১৪৪৫

বিনোদন

পপগুরু আজম খানকে হারানোর দিন

বিনোদন ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২২
পপগুরু আজম খানকে হারানোর দিন আজম খান

‘কিছু চাওয়া আর কিছু পাওয়া এতোটুকুই তো জীবন/বেঁচে থাকা আর মরে যাওয়া খেলাঘরের এই নিয়ম/কেঁদে আসা পৃথিবীতে/কাঁদিয়ে যে যেতে হবে/কতো গান কতো নাম সবই যে হবে বদনাম/কভু চিন্তা করেছো কি এই আছি এই নেই...’

এই গানের স্রষ্টা পপগুরু আজম খান আজ আমাদের কাছে স্মৃতি হয়ে আছেন। রণাঙ্গনে সামনে থেকে লড়ে যাওয়া কিংবদন্তি এই শিল্পী দেশের প্রতি ভালোবাসার টানেই গান গেয়েছেন বেশি।

 

১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনিতে জন্মগ্রহণ করেন আজম খান। আর ২০১১ সালের ৫ জুন হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। তার চলে যাওয়ার পর এখনো জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি। আজও ভক্ত-শ্রোতাদের প্রিয়শিল্পী হয়েই আছেন ‘পপগুরু’। বেঁচে আছেন গানের মাঝেই।

আজম খানের আসল নাম মাহবুবুল হক খান। তার বাবা আফতাবউদ্দিন আহমেদ ও মা জোবেদা খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।  

আজম খান ১৯৭০ সালে টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর ১৯৭১ সালে বাবার অনুপ্রেরণায় অংশ নেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। প্রশিক্ষণ শিবিরে তার গাওয়া গান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা যোগাতো।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আজম খান গানকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। ১৯৭২ সালে বিটিভিতে ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না’ গানটি প্রচারের পর তুমুল জনপ্রিয়তা ও প্রশংসা পান আজম খান। এরপর থেকেই তার গান ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রতিটি প্রান্তে। গানের ভাষা সহজ ও বাস্তবভিত্তিক হওয়ায় গানগুলো মানুষের হৃদয়কে সহজেই স্পর্শ করে ফেলে।

১৯৭৩ সালে আজম খান বন্ধুদের নিয়ে গঠন করেন ব্যান্ডদল ‘উচ্চারণ’। এটাই এদেশে নতুন ঘরানার সংগীতচর্চায় পরবর্তী প্রজন্মের অনুপ্রেরণা। ‘উচ্চারণ’ থেকে আজম খান ১৬টি একক অ্যালবাম এবং ২৫টি দ্বৈত ও মিশ্র অ্যালবাম তৈরি প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি বেশকিছু সিনেমার গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।

১৯৭৪-৭৫ সালে আজম খানের ‘হায়রে আমার বাংলাদেশ’ গানটি তরুণ প্রজন্মের হৃদয় জয় করে নেয়। রেললাইনের পাশে বস্তিতে কোনো এক ছেলের মৃত্যুতে তার মায়ের কান্নার আলোকেই এই গানটির উৎপত্তি। ‘সালেকা-মালেকা’ এবং ‘আলাল-দুলাল’র মতো অনেক জনপ্রিয় গান তাকে ঠাঁই দিয়েছে সর্বস্তরের মানুষের বুকের গভীরে। তাই সবার কাছে তার উপাধি ‘পপগুরু’।

আজম খানের উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে- ‘কিছুই রবে না রে’, ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘অনামিকা’, ‘হারিয়ে গেছে রে’, ‘বাংলাদেশ’, ‘সালেকা, মালেকা’, ‘আসি আসি বলে’, ‘আমি যারে চাইরে’, ‘অভিমানী’ ইত্যাদি।

দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ব্যধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ২০১১ সালের ৫ জুন ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আজম খান। শিল্পকলায় (সংগীত) অবদানের জন্য ২০১৯ সালের মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয় তাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২২
এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।