ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

আফগানিস্তানকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই: পাপন সিংহ

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৩
আফগানিস্তানকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই: পাপন সিংহ

এক বছর পর আবারও জাতীয় দলে ফিরলেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার পাপন সিংহ। গত বছর জুনে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে বাহরাইনের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি।

লাল-সবুজের জার্সিতে ওটাই ছিল তার অভিষেক ম্যাচ।  

এরপর মাঝে কিছুদিন জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুইটি ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ; সেখানের ঘোষিত প্রাথমিক দলে জায়গা করে নিয়েছেন আবাহনী লিমিটেডের তরুণ এই খেলোয়াড়। আফগানদের বিপক্ষে বেশ আত্মবিশ্বাসী তিনি। ব্যক্ত করেন সফরকারীদের হারানোর আশা।  

পাপন বলেন, ‘পূর্ব রেকর্ড দেখে কোনো দলকে বিচার করার দিন শেষ। ম্যাচের দিন যারা ভালো করবে, ভুল কম করবে তারাই জয়ের হাসিতে মাঠ ছাড়বে। এটা ঠিক আফগানিস্তান র‌্যাংকিংয়ে আমাদের চেয়ে ৩২ ধাপ এগিয়ে। এর আগে আমরা কখনোই এই দলটির বিপক্ষে জয় পাইনি। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। আমাদের ঘরের মাঠে খেলা, ঘরের দর্শকের সামনে খেলব আমরা। তাছাড়া আমাদের দল এখন যে কাউকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা দুর্দান্ত খেলে এসেছি। সব মিলে আমি আশাবাদী যে এবার আফগানদের আমরা হারাবই। ’

কোচ হাভিয়ের কাবরেরা অধীনে এখন কঠোর অনুশীলন চলছে পাপন, জিকোদের। ৩১-৩২ জনের প্রাথমিক দলটি অনুশীলনে নিজেদের সেরাটা দিয়ে লড়ে যাচ্ছেন। আগামী দুই একদিনের মধ্যে এখান থেকেই বেছে নেয়া হবে ২৩ জনের চূড়ান্ত স্কোয়াড। মূল দলে জায়গা পাওয়ার ব্যাপারে দারুণ আশাবাদী পাপন।  

তিনি বলেন, ‘স্কোয়াডে যারা আছেন সবাই অনেক পরীক্ষিত এবং মেধাবী ফুটবলার। আমি শুরুতে স্কোয়াডে ছিলাম না। সবশেষ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়েছি। কোচ নিশ্চয়ই কোনো না কোনো পরিকল্পনা ভেবেই আমাকে ডেকেছেন। আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে আমাদের অনুশীলন ভালো হচ্ছে। আমি নিজেও কঠোর পরিশ্রম করছি। এখন চূড়ান্ত স্কোয়াডে রাখার দায়িত্ব কোচ, ম্যানেজমেন্টের। আমার কাজ অনুশীলনে সেরাটা দেয়া। সেটাই করছি। বাকিটা কোচদের ওপর। ’ 

খুব অল্প সময়ে দেশের ফুটবলে নিজের জন্য একটা আলাদা জায়গা তৈরি করতে সমর্থ হয়েছেন নেত্রকোনার ছেলে পাপন। ২০২১-২২ মৌসুমে উত্তর বারিধারা ক্লাবের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে দারুণ খেলার সুবাদেই মূলত সকলের নজর কাড়েন তিনি। এরপর গত মৌসুম অর্থাৎ ২০২২-২৩ দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনী লিমিটেডের জার্সিতে দেখা যায় তাকে। তবে আবাহনীর জার্সিতে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি।  

এ ব্যাপারে পাপন বলেন, ‘আমি উত্তর বারিধারাতে আমার সেরা সময়টা পার করেছি। আবাহনীতে সেভাবে জ্বলে ওঠার সুযোগটা হয়নি। তবে আগামী মৌসুমও (২০২৩-২৪) যেহেতু আকাশী-নীল ক্লাবে থাকছি এবার মাঠে নামার সুযোগ পেলে দলকে ভালো কিছু দেয়ার চেষ্টা করব। ’

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আজকের অবস্থানে এসেছেন পাপন। নেত্রকোনার বারহাট্টা থেকে কখনো ট্রেন, কখনো আবার বাসযোগে ১৫-২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন অনুশীলন করতে নেত্রকোনা জেলা স্টেডিয়ামে যেতেন। ওস্তাদ প্রয়াত সজল তালুকদারের কাছে ফুটবলের হাতেখড়ি পাপনের। তবে ফুটবলার হয়ে ওঠার পেছনে যাদের অবদান সবচেয়ে তারা হলেন বারহাট্টার বিখ্যাত কাজী বাড়ির ওয়াহেদ কাজীর দুই সুযোগ্য পুত্র বারহাট্টা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী সাখাওয়াত হোসেন এবং তার ভাই কাজী সাজ্জাদ হোসেন।  

পাপনের বুট-জার্সি কিনে দেয়া থেকে মুখে খাবার তুলে দেয়া- সব কিছুর ব্যবস্থা করেছেন কাজী বাড়ির সাখাওয়াত, সাজ্জাদ কাজীরা। শুধু তাই নয় এসএসসি পাশ পাপনের স্কুলের খরচ, স্কুল ড্রেস কিনে দেয়া থেকে খাতা-কলম সব কিছু দিয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন কাজী সাখাওয়াতের পরিবার। জীবনের এ পর্যায়ে এসেও কাজী বাড়ির অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন পাপন।  

স্কুল ফুটবল দিয়েই মূলত পাপনের ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্পের শুরু। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপে বারহাট্টা সরকারি প্রাথমিক মডেলের এই ছাত্র দু’বার অংশ নেন। এরপর এলাকার বড় ভাই সুজন তালুকদারের পরামর্শে ঢাকার ফুটবলে পা রাখেন। পাইওনিয়ার লিগে মিরপুর সিটি ক্লাব দিয়ে শুরু হয় ঢাকার ফুটবল মিশন। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার বেলাল আহমেদের হাত ধরে ঢাকার ফুটবলের অলিগলি চেনেন।  

এরপর সেখান থেকে ধাপে ধাপে তৃতীয় বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, অনূর্ধ্ব-১৮ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে মোহামডান ক্লাব, বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ খেলে নাম লেখান ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। বাবাহারা পাপনের সংসারে এখন মা এবং নবম শ্রেণী পড়ুয়া এক ছোট্ট ভাই রয়েছে। পরিবারের কারোর খেলাধুলার সঙ্গে পূর্বে জড়িত থাকার ইতিহাস না থাকলেও পাপনের বাবা ফুটবলের পাঁড়ভক্ত ছিলেন।  

বাবা বেঁচে থাকাকালীন ছেলেকে নানানভাবে উৎসাহ-প্রেরণা দিতেন। স্বর্গীয় পিতাকে অনেক মিস করেন পাপন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা অনেক কষ্ট করেছেন। কৃষি কাজ করতেন। তবে আমি ফুটবল খেলি বলে কখনো রাগ করেননি। সব সময় উৎসাহ দিতেন। আজ বাবা বেঁচে নেই। বাবা থাকলে এখন অনেক খুশি হতেন। ’

বেলজিয়াম জাতীয় ফুটবল দল এবং ম্যানচেস্টার সিটি ক্লাবের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনার ভক্ত পাপনও চান তার মতো সাড়া জাগানো ফুটবলার হতে। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলামের মতো ভালো মানের মিডফিল্ডার হওয়ার বাসনাও তার। সেই সঙ্গে পাপনের স্বপ্ন জাতীয় দলে দীর্ঘ সময় খেলা এবং দেশের জন্য অনেক সাফল্য-সম্মান বয়ে নিয়ে আসা। নিজ জেলা নেত্রকোনার বারহাট্টাসহ দেশ ও দশের মুখ উজ্জ্বল করা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৩
এআর/আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।