ঢাকা: এখন পর্যন্তু ব্রাজিল বিশ্বকাপ ৪৮ ম্যাচে দেখেছে ১৩৬ গোল। ম্যাচপ্রতি গড়ে ২.৮৩ গোল গোলরক্ষকদের ব্যর্থতার কথাই সবার আগে মনে করায়।
দলের ব্যর্থতার জন্য সবার আগে আঙুল ওঠে গোলরক্ষকদের দিকে। কিন্তু বিশ্বকাপ-১৪ উল্টোটাও দেখিয়ে দিল। বুক চিতিয়ে গোলপোস্ট আগলানোর জন্য গোটা বিশ্বের প্রশংসায় সিক্ত হলেন কয়েকজন গোলরক্ষক।
বিশ্বকাপ যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে আলোচনার গোটা অংশ জুড়ে ক্যাসিয়াস, বুফন, নেউয়ার ও কোর্টইসদের মতো তারকারাই ছিলেন। বরাবরের মতো এবারও গোলবক্সের বিশ্বস্ত প্রহরী হয়ে তারা দলকে এগিয়ে নেবেন, এমনটাই আশা ছিল সবার। কিন্তু এটা নিশ্চয় কেউ ভাবেনি, তারাই হয়ে যাবেন স্পেন, ইতালির মতো বড় দলগুলোর বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার খলনায়ক!
পুরোটাই হতাশা আর ব্যর্থতার গল্প নয়। কিছু গোলরক্ষকের সাহসী লাফ-ঝাঁপ তাদেরকে এনেছে প্রদীপের আলোয়। গুইলের্মো ওচোয়া (মেক্সিকো), ভিনসেন্ট এনিয়েমা (নাইজেরিয়া) ও আলেকজান্ডার ডমিঙ্গুজ (ইকুয়েডর) নামগুলো এর আগে অপরিচিতই ছিল। অবিশ্বাস্য সব গোল বাঁচিয়ে এরা নিজের হাতেই লিখছেন নিজেদের বিশ্বকাপ চিত্রনাট্য। এবার চোখ বুলানো যাক তাদের নিজ নিজ গল্পে।
গুইলের্মো ওচোয়া: ২৮ বছর বয়সী ওচোয়া ২০১১ সালে ফ্রান্স পাড়ি জমানোর আগে ২০০৫ সালে জিতেছিলেন মেক্সিকো সিটি লিগ। অলিম্পিক মার্সেইল্লে-তে স্থানান্তরের সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।
ওচোয়া ম্যাজিক বিশ্বকাপে প্রথম দেখা যায় ব্রাজিলের বিপক্ষের ম্যাচে। নেইমার, অস্কার ও বাকিদের নিশ্চিত সব গোলের আক্রমণ অবিশ্বাস্যভাবে রুখে দিয়ে তুমুল আলোচনায় আসেন ওচোয়া। তার পরবর্তী ‘হারকিউলিস যুদ্ধ’ দেখা যায় ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। ওচোয়া ১ গোল হজম করলেও, মেক্সিকো ম্যাচ জেতে ৩-১ গোলে।
ভিনসেন্ট এনিয়েমা: ২০১৩ সালে আফ্রিকা নেশনস কাপে ৩১ বছর বয়সী এনিয়েমা ছিলেন নাইজেরিয়ার ক্যাপ্টেন। নাইজেরিয়ার এই দেওয়াল ইসরায়েলি লিগের (২০০৯) সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। ফ্রান্সে পাড়ি জমান ২০১১ সালে। বর্তমানের খেলছেন লিল্লে ক্লাবের হয়ে।
আর্জেন্টাইন ক্ষুদে জাদুকর লিওনেল মেসির মুখোমুখি হওয়ার আগে ভিনসেন্ট এনিয়েমা নামটি ফুটবল দুনিয়ায় একটু অপরিচিতই ছিল বটে। গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ১৭টি সেভ করেছেন তিনি। বাঁচিয়েছেন বেশ কয়েকটি নিশ্চিত গোল। বলা যায়, অনেকটা তার কৃতিত্বেই শেষ ষোলতে জায়গা করে নিয়েছে নাইজেরিয়া।
আলেকজান্ডার ডমিঙ্গুজ: ২৭ বছর বয়সী আলেকজান্ডার এসেছেন চূড়ান্ত গরিব অবস্থা থেকে। মাকে সাহায্য করতে কাজ করেছেন রঙমিস্ত্রী, বাসের টিকেট কনডাক্টর, ওয়েটার ও খামারে। ১.৯৩ মিটার উচ্চতার এই ইকুয়েডরিয়ান গোলরক্ষক শুরু থেকেই তার নৈপূণ্যের ঝলক রেখেছেন। তার একমাত্র ক্লাব এলডিইউ কুইটো ২০০৮ সালে ইকুয়েডরের লিবার্তেদোরেস কাপ ও ২০০৯ সালে কোপা সুদামেরিকানা জেতে।
গ্রুপ পর্বের ফ্রান্স-ইকুয়েডর ম্যাচে এক ধারাভাষ্যকার বলেছিলেন, দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্সের গোল হওয়া উচিত ছিল কমপক্ষে ৭/৮টি। শেষ পর্যন্ত খেলা শেষ হয় ০-০ তে এবং শুধুমাত্র এটি সম্ভব হয়েছিল আলেকজান্ডারের ‘ওয়ান ম্যান শো’র কারণে।
সবে শেষ হয়েছে গ্রুপ পর্বের খেলা। সামনে অপেক্ষা করছে আরও কঠিনতম লড়াই। ফুটবল যেখানে পায়ের খেলা, হাত দিয়ে ধরলেই বিপদ- সেখানে গোটা বিশ্ব তাকিয়ে থাকবে তাদের দুই হাতের দিকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৯ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৪