ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সব বড় বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে তার। এমনকি কাউকে ছাঁটাই করাও তার জন্য কঠিন কিছু নয়।
শুনতে অবাক লাগলেও ঘটনা কিন্তু সত্য। বার্সার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ক্লাব সভাপতির বিপক্ষে ক্লাবটির নিবন্ধিত সদস্যের মধ্যে ১৫ শতাংশ যদি অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন তাহলে সরে যেতে হবে তাকে। ঘটনা এখন সেদিকেই যাচ্ছে। এরইমধ্যে বার্সেলোনা সমর্থক গোষ্ঠীদের সম্মিলিত সংগঠন কোর ব্লুগ্রানা’র পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করে ক্লাবের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
আসন্ন ক্লাব প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বার্তোমেউর সম্ভাব্য কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বীদের সমর্থন নিয়ে ব্লুগ্রানা গ্রুপটি ২০ হাজার ৭৩১ ভোট সংগ্রহ করেছে বলে দাবি করেছে। বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ছিল এই তালিকা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। একইদিন বার্সার পক্ষ থেকেও অনাস্থা ভোটের জন্য স্বাক্ষর জমা দেওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে। তবে ক্লাবের দাবি, সংখ্যাটা যেমন দাবি করা হচ্ছে তত নয়।
বার্সার পক্ষ থেকে ২০ হাজার ৬৮৭টি স্বাক্ষর জমা পড়ার কথা জানানো হয়েছে। তবে এই পরিমাণ স্বাক্ষরও অনাস্থা ভোটের জন্য যথেষ্ট। কারণ অনাস্থা ভোট বাস্তবায়নে ১৬ হাজার ৫২০টি স্বাক্ষরই যথেষ্ট। তবে ভোটাভুটি শুরুর আগে স্বাক্ষরগুলো যাচাই করা হবে। আগামী ১০ দিন এই কাজে নিযুক্ত থাকবে ৩ সদস্যের একটি প্যানেল। এই প্যানেল থাকবেন ক্লাব, কাতালান সকার ফেডারেশন এবং ব্লুগ্রানার পক্ষ থেকে একজন করে প্রতিনিধি।
কমপক্ষে ১৬ হাজার ৫২০ জন ভোটারের তথ্য সঠিক হলে তিন মাসের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে আগামী ১০ থেকে ২০ দিনের মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে। বার্সার ডিরেক্টর বোর্ড কর্তৃক নির্বাচন আহ্বান করার পর ১০ থেকে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে আবেদন অবৈধ হলে আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।
নির্বাচনে বার্সার দেড় লাখ সদস্যের মধ্যে ৬৬.৫ শতাংশ যদি অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন তাহলে বাধ্যতামূলকভাবে সরে যেতে হবে বার্তোমেউকে। তার সঙ্গে যেতে হবে তার নিয়ন্ত্রিত বোর্ড পরিচালকদেরও।
বার্সার ইতিহাসে তৃতীয় প্রেসিডেন্টন হিসেবে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হচ্ছেন বার্তোমেউ। এর আগে ১৯৯৮ সালে হোসে লুইস নুনেস এবং ২০০৮ সালে হোয়ান লাপোর্তা একই পরিস্থিতির মুখে পড়েছিলেন। তবে তারা দুজনেই উতরে গিয়েছিলেন।
এমনকি ২০১৭ সালে বার্তোমেউ নিজেই এই পরিস্থিতিতে পড়ার মুখে ছিলেন। তবে সেবার পর্যাপ্ত স্বাক্ষরের অভাবে অনাস্থা ভোট আলোর মুখ দেখেনি। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। ভোটে পরাজিত হলে আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় ক্লাব প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না তিনি। ফলে দুই মেয়াদ শেষে বিদায় নিতে হবে তাকে।
মূলত গত মৌসুমের ব্যর্থতার জেরে ক্লাবের পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন খেলোয়াড়রা। কিন্তু সেই ডাকে সাড়া না দিয়ে উল্টো মেসিসহ সিনিয়র খেলোয়াড়দের ঘাড়ে দায় চাপানোর চেষ্টা করেছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে অনলাইনে অপপ্রচার চালানোর ব্যবস্থাও করেছিল বোর্ড। এরইমাঝে সাবেক কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দের বিদায়ের দায়ও মেসিদের ঘাড়েই চাপিয়েছিল ক্লাব। তখন থেকেই সমর্থকদের একটা অংশ বার্তোমেউর পদত্যাগ দাবি করছিলেন।
ভালভার্দের বিদায়ের পর সেতিয়েনকেও ব্যর্থতার জেরে বিদায় করে দেয় বার্সা। এদিকে ক্লাবের সবচেয়ে বড় তারকা মেসি ২০ বছর বন্ধন ছিন্ন করার ঘোষণা দেওয়ার পর সমর্থকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তখন থেকেই শুরু হয় অনাস্থা প্রস্তাবের জন্য স্বাক্ষর সংগ্রহের কাজ। অবশেষে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বাক্ষর জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছে সমর্থকদের সংগঠন ব্লুগ্রানা। অবশ্য এর সূত্রপাত করেছিলেন আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী জর্দি ফ্যারে। মেসি ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার একদিন পরেই এই উদ্যোগ দেন তিনি।
অনেক নাটকীয়তা শেষে মেসি অবশ্য আরও এক মৌসুম থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন মেসি। মূলত ভালোবাসার ক্লাবকে আইনি লড়াইয়ে মুখোমুখি করতে চাননি বলেই এই সিদ্ধান্ত নেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। কিন্তু ক্লাবের সমর্থকরা এতেও দমে যায়নি। বার্তোমেউকে সরিয়েই শান্ত হতে চান তারা। এতে পরোক্ষভাবে জিতবেন মেসিও।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০
এমএইচএম