ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

জনবল সংকটে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যাহত চিকিৎসাসেবা

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪
জনবল সংকটে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যাহত চিকিৎসাসেবা

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জনবল সংকট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।  ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক এবং রোগীরা।

দীর্ঘদিন ধরেই জনবলের এই সংকট লেগে থাকলেও নেই কোনো সমাধান। ফলে রাতের বেলা একাধিক চুরির ঘটনাও ঘটছে হরহামেশা। একই কারণে নোংরা পরিবেশ থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের।  

দেশের অন্যতম আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ডিজিটাল উপজেলার দাবিদার মাদারীপুরের এই শিবচরে স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশায় হতবাক সাধারণ মানুষ। চিকিৎসকদের দাবি জনবল সংকট প্রকোট আকার ধারণ করায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। দ্রুত জনবল সংকটসহ আনুষঙ্গিক সমস্যার সমাধান হলে এখানেই আধুনিকমানের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন দায়িত্বরত চিকিৎসকগণ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৩৩২ দশমিক ৯০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের শিবচর উপজেলা ১৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত একটি আধুনিক জনবহুল উপজেলা। পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ ও ময়নাকাটা নদী বেষ্টিত উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার অধিকাংশ মানুষ এখনও কৃষি পেশাজীবী।  

এছাড়া প্রবাসী থাকায় মানুষের জীবনমান বেশ উন্নত। তবে জরুরি প্রয়োজনে উপজেলার অধিকাংশ মানুষ চিকিৎসাসেবার জন্য ছুটে আসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এবং দরিদ্র, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের চিকিৎসার ভরসা সরকারি এই হাসপাতালটি। দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বেশির ভাগ পদ শূন্য রয়েছে। ফলে চিকিৎসাসেবাসহ প্রয়োজনীয় সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।  

হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি এবং রোগীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এই তথ্য।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মঞ্জুরীকৃত পদ রয়েছে ৫টি, যার সবকটি শূন্য রয়েছে। নিরাপত্তা প্রহরীর ২টি পদই শূন্য, অফিস সহায়কের মঞ্জুরীকৃত পদ রয়েছে ৫টি, শূন্য পদের সংখ্যা ৩টি। মালীর ২টি পদই শূন্য, ওয়ার্ড বয় পদের ৩টির মধ্যে শূন্যপদের সংখ্যা ২টি, আয়া পদের জন্য মঞ্জুরীকৃত ২ পদের ২টিই শূন্য রয়েছে।  

অন্যদিকে তৃতীয় শ্রেণীর ৭টি পদে কোনো জনবলই নেই। ফিজিওথেরাপি, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং, প্রধান সহকারী, ক্যাশিয়ার, প্রধান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, গার্ডেনার এবং টিকেট ক্লার্ক পদ দীর্ঘদিন ধরেই শূন্য রয়েছে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জরুরি বিভাগের জন্য ডেডিকেটেড বিল্ডিং না থাকায় সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে অনেকদিন ধরেই। এছাড়া কক্ষ সংকটে চিকিৎসকদের জন্য সঠিক কক্ষের কোনো বরাদ্দ না থাকায় এক কক্ষেই গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। ফলে বিভ্রান্তিতে পরতে হচ্ছে রোগীদের। প্যাথলজি বিভাগে সেল কাউন্টার মেশিন না থাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সঠিক সেবা দেওয়া ব্যাহত হচ্ছে।  

এছাড়া প্যাথলজি বিভাগে নেই হরমোন অ্যানালাইজার। অচল হয়ে পরে আছে এক্সরে মেশিন, অপারেশন থিয়েটারের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এবং পোস্ট অপারেটিভ রুম প্রস্তুত না হওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সিজারিয়ানসহ অন্যান্য অপারেশনের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় বেশ কয়েকবার একাধিক চুরির ঘটনাও ঘটেছে হাসপাতালে। রাতে পুরো অরক্ষিত থাকে হাসপাতাল আঙিনা। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবে চারপাশে নোংরা পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।  

রোগীরা জানান, হাসপাতালের এক বেডে একাধিক রোগীকেও থাকতে হচ্ছে মাঝে মধ্যেই। তাছাড়া পরিবেশ নোংরা থাকায় চিকিৎসা নিতে এসে বিপাকে পড়তে হয়।

জানতে চাইলে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেন, জনবল সংকটের কারণে আমরা খুবই বিপাকে আছি। যারা কর্মরত আছি, ব্যক্তিগতভাবে টাকা দিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাখতে হচ্ছে। এতগুলো পদ শূন্য থাকায় রোগীর সঠিক সেবা দেওয়াও ব্যাহত হয়। তারপরও আমরা চিকিৎসাসেবা দিতে সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু কিছু পদে লোক না থাকায় চাইলেও সঠিক সেবা দেওয়া যায় না।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফাতিমা মাহজাবিন বলেন, হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণীর শূন্য পদ রয়েছে ১৬টি। চতুর্থ শ্রেণীর মোট মঞ্জুরীকৃত ১৯টি পদে জনবল আছে মাত্র ৩টি পদে। অন্যদিকে তৃতীয় শ্রেণীর মঞ্জুরীকৃত ৭টি পদই শূন্য! এছাড়া নতুন ১শ শয্যার ভবনটির নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ না হওয়ায় নানা রকম সমস্যা রয়েছে। জনবলের সংকট না থাকলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব। আমাদের সব চিকিৎসক যথেষ্ট আন্তরিকতা নিয়ে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর শূন্যপদসহ নানা সমস্যার বিষয়ে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।