ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ডোমরা করোনা আতঙ্কে, মরদেহ কাটতে হচ্ছে প্রোটেকশন ছাড়াই

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২০
ডোমরা করোনা আতঙ্কে, মরদেহ কাটতে হচ্ছে প্রোটেকশন ছাড়াই

ঢাকা: মরদেহ কাটা তাদের পেশা। তাদের সবাই চেনে ‘ডোম’ নামেই। যদিও সরকারের কোনো কাগজ-কলমে ডোম শব্দটি পাওয়া যায় না। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই আতঙ্ককে সঙ্গী করে বর্তমান পরিস্থিতিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গ ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড হাসপাতাল) হাসপাতাল মর্গের ডোমরা নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন আগের মতোই। কর্তৃপক্ষ তাদের সচেতনতা অবলম্বন করে কাজ করতে নির্দেশনা দিলেও সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে কাজ করার পোশাক ও চশমা এখনো তারা পাননি।

শনিবার (২১ মার্চ) এ তিন হাসপাতাল মর্গের বেশ কয়েকজন ডোমের সঙ্গে কথা হলে তারা আতঙ্কের মধ্যে থেকে কাজ করার বিষয়টি জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডোম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিনই মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাঠায় পুলিশ।

আমরা শুনেছি, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মরদেহ থেকেও ওই ভাইরাসটি ছড়ায়। তাই আমরা আতঙ্কে আছি, কারণ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য যে ড্রেস দরকার সেগুলো আমাদের দেওয়া হয়নি। আমরা আমাদের কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে কোনো মানুষ মারা গেলে, পুলিশ নিয়ম অনুযায়ী মরদেহ মর্গে পাঠায় ময়নাতদন্তের জন্য। এছাড়া ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাটে অসুস্থ অবস্থায় মারা যাওয়ার পর উদ্ধার মরদেহগুলোও ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ। যাদের কোনো পরিচয় থাকে না। অজ্ঞাত হিসেবে পাঠায়। করোনা ভাইরাস যেহেতু আতঙ্কের একটি নাম আমরা তাহলে কী করে বুঝবো ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে মারা যায়নি।

অপর একজন বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় অনেকেরই। পরে সেইসব মরদেহগুলো পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। সে মরদেহগুলো ভাইরাস বহন করতে পারে। তাই আতঙ্ক ও নিজের নিরাপত্তা নিজে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরাও করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কে আছি। যেহেতু আমরা মরদেহ কটার সময় উপস্থিত থাকি। আমাদের নির্দেশেই ডোমরা মরদেহের গলা ও ফুসফুস কেটে দেখায়। ওই দুই জায়গায় ভাইরাসটি সবচেয়ে বেশি থাকে। আমাদের প্রোটেকশনের জন্য আমরা এখনো কিছু পাইনি। তবে কলেজ প্রিন্সিপালকে অবগত করেছি উনি বলেছেন, বিষয়টি দেখছি। যতটুকু সম্ভব নিজেকে নিরাপদ রেখেই আমাদের কাজ করতে হবে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সেলিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, লোকালভাবে প্রোটেকশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সচেতন থাকা প্রধান কাজ। ডাক্তারের নির্দেশেই ডোমরা মরদেহ কেটে থাকে। বিষয়টি নিয়ে তারাও যেমন চিন্তিত চিকিৎসকরা তেমনই চিন্তিত। তবে প্রোটেকশন নিয়ে কাজ করতে হবে।

এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মুখমণ্ডলসহ পুরো শরীর ঢেকে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২০
এজেডএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।