চিকিৎসকদের এ তালিকায় আছেন স্বাস্থ্য বিভাগের উপ-পরিচালক সাবেক সিভিল সার্জন ডা. শামসুল হক, সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল হুদা, সরকারি হাসপাতালের সাবেক গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. আবদুর রহিম, গাইনী চিকিৎসক ও এনেসথেসিয়া দম্পতি ডা. শাহিনা আক্তার মুক্তি এবং নাজমুল হোসেন রনি, ডায়াবেটিক চিকিৎসক ও মধুপুর ডায়াবেটিক সেন্টারের পরিচালক ডা. মীর ফরহাদুল আলম মনি, জেনারেল প্র্যাকটিশনার ডা. জহর লাল চৌধুরী এবং এর বাইরে হোমিও প্যাথিক চিকিৎসক ডা. এসএম ইউসুফ।
মধুপুরের অন্যতম প্রাইভেট চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র ‘ডক্টরস ক্লিনিক’।
ডা. শামসুল হক বাংলানিউজকে জানান, দেশের এমন সময়ে চিকিৎসকদের দায়িত্বের বাইরে থাকার সুযোগ নেই। হোক সে সরকারি বা প্রাইভেট। পেশায় তিনি চিকিৎসক। সংকটকালেই চিকিৎসকের যুদ্ধ। এমন যুদ্ধে চিকিৎসকের জয়ী হতে হয়। কোনো রোগী মারা গেলে চিকিৎসকের পরাজয়। এমন সংকট থেকে পালিয়ে থাকলেও পরাজয়। পালিয়ে আমাদের বাঁচার চেষ্টা থাকলে সাধারণ রোগীরা যাবেন কোথায়? তাদের সেবায় অন্তত শপথের দায়বদ্ধতা থেকে দায়িত্ব পালন করা চিকিৎসকদের নৈতিক দায়িত্ব।
সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুল হুদা প্রাইভেট হাসপাতালে প্র্যাকটিস করেন। এসময়ে তিনিও চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের রোগ সংক্রান্ত এ দুর্যোগকালে দায়িত্ব পালন করছি পেশার দায় থেকে কোনো প্রাপ্তির আশায় নয়। এ সময়ে সাধারণ রোগীদের কথা আমাদের ভাবতে হচ্ছে।
সরকারি হাসপাতালের সাবেক গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. আবদুর রহিম মধুপুরের অন্যতম গাইনোক্লজিস্ট ও সার্জন। মধুপুর ছাড়াও ধনবাড়ী, গোপালপুর, ঘাটাইলসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোর প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে তার ডাক পড়ে। তার মেটারনিটি ক্লিনিকও আছে। ২৪ ঘণ্টা অনকলে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তিনি।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, মানবসেবার ব্রত নিয়ে এ পেশায় এসেছি। এ পেশা সংগ্রামের পেশা। কোন প্রাপ্তির আশায় নয়, সেবার মানসিকতা থেকে এ দায়িত্ব পালন। দেশের এমন মহাসংকটকালে সংগ্রামী পেশার মানুষ হিসেবে পালিয়ে থাকলে রক্ষা পাওয়া যাবে না। পুরো পৃথিবী করোনা ভাইরাস নামের অদৃশ্য শত্রু সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। এ যুদ্ধে আমাদের দেশকে জয়ী হতে হবে।
মধুপুরের চিকিৎসক দম্পতি ডা. নাজমুল হোসেন রনি এবং ডা. শাহিনা আক্তার মুক্তি। ডা. রনি জেলারেল সার্জন ও এনেসথেসিয়া স্ত্রী মুক্তি গাইনোক্লজিস্ট ও সার্জন। এই ডাক্তার দম্পত্তি মধুপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ধনবাড়ী, গোপালপুর ও ঘাটাইল উপজেলার কয়েকটি প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ২৪ ঘণ্টা। করোনা সংকটের এই চরম পর্যায়ে এসেও থেমে নেই তাদের স্বাস্থ্য সেবা। তারা নিয়মিত চার উপজেলায় চিকিৎসা সেবা ছাড়াও মোবাইল এবং ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিয়মিত বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। ঝুঁকির মধ্যে তাদের এমন দায়িত্ব পালনে পরিবারের লোকজনও ঝুঁকিতে আছেন।
এমন সংকটকালে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে চিকিৎসক এ দম্পতি জানান, মানবসেবা ব্রতের এই পেশার সৈনিক আমরা। জাতির এমন সংকটময় মুহূর্তে পালিয়ে যেতে পারি না। এটা আমাদের পেশাকে অসম্মান ও বিশ্বাসঘাতকতা করার শামিল। তাই যথাসম্ভব সচেতন থেকে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও নিজের ফেইসবুক প্রোফাইল ও লোকাল কয়েকটি ফেইসবুক গ্রুপে নিয়মিত স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক নানা ধরনের পোস্ট দিয়ে যাচ্ছি।
মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক, উত্তর টাঙ্গাইলে প্রথম ডায়াবেটিক চিকিৎসা সেন্টার গড়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন মধুপুর ডায়াবেটিক সেন্টারের পরিচালক ডা. মীর ফরহাদুল আলম মনি। তিনি বাংলানিউজকে জানান, গত ১৫ বছর ধরে মধুপুরে ডায়াবেটিকের চিকিৎসা সেবায় তার সেন্টার অপ্রতিদ্বন্দ্বী। মধুপুরের প্রায় অধিকাংশ ডায়াবেটিক রোগী তার থেকে নিয়মিত চিকিৎসা নেন। ডায়াবেটিক রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা জরুরি। তাই ঝুঁকি নিয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। নিজ অর্থায়নে সুরক্ষা সরঞ্জাম সংগ্রহ করে ঝুঁকি থাকলেও পেশা এবং সাধারণ মানুষের চিন্তা করে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
মধুপুরের অন্যতম চৌধুরী আউডডোর ক্লিনিকের পরিচালক ডা. জহর লাল চৌধুরৗ। তিনিও চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছেন। এর বাইরে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাসেবা দেন ডা. এসএম ইউসুফ। চার দশক ধরে মধুপুরে হোমিও সেবা দিচ্ছেন তিনি। তার ‘বাংলাদেশ হোমিও হলে’ প্রতিদিন রোগীদের উপচে ভিড় থাকে। করোনাকালেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। ঝুঁকি নিয়ে বিকেল পর্যন্ত চেম্বারে রোগী দেখেন তিনি।
ডা. ইউসুফ বাংলানিউজকে জানান, অ্যাজমা, ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিয়ে বয়স্ক ও শিশুরা তার কাছে আসেন। হ্যান্ডগ্লাভস, মাস্ক পড়ে তিনি সতর্কতার সঙ্গে রোগীদের সেবা করছেন। তার সহকর্মীদেরও তিনি সেবা প্রদানে সতর্কতা অবলম্বনের ব্যবস্থা করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২০
এনটি