ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ডেক্সামেথাসন! বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররাও ১০ বার ভাবেন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৩ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২০
ডেক্সামেথাসন! বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররাও ১০ বার ভাবেন

ঢাকা: ডেক্সামেথাসনের ভয়ংকর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন ও বর্তমানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অধ্যাপক ড. মুনিরুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘একজন রোগীকে এ ওষুধটি প্রয়োগ করার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও ১০ বার ভাবেন। ডেক্সামেথাসন প্রেসক্রিপশন ড্রাগ। প্রেসক্রিপশন ড্রাগের মধ্যেও এটি একটি স্পেশাল ড্রাগ।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডেক্সামেথাসন নিয়ে ‘অ্যাডভেঞ্চারিজমের’ একদম কোনো সুযোগ নেই। হরমোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ ওষুধ গ্রহণ করেছেন তো মরেছেন।

বুধবার (১৭ জুন) রাতে ডেক্সামেথাসনের ক্ষতিকর দিক ও প্রয়োগ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ কথা বলেন তিনি।

অধ্যাপক ড. মুনিরুদ্দিন আহমেদ এর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো: ‘আমার এই স্ট্যাটাসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনযোগ দিয়ে পড়বেন। ডেক্সামেথাসন কোনো সাধারণ ওষুধ নয়। ডেক্সামেথাসন প্রেসক্রিপশন ড্রাগ। প্রেসক্রিপশন ড্রাগের মধ্যেও এটি একটি স্পেশাল ড্রাগ। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বলে রোগীর সংকটাপন্ন অবস্থায় জীবন বাঁচানোর জন্য শুধু এই ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও রোগীকে এই ওষুধটি প্রয়োগ করার পূর্বে দশবার ভাবেন।

ডেক্সামেথাসন নিয়ে অ্যাডভেঞ্চারিজমের একদম কোনো সুযোগ নেই। অনুগ্রহ করে ডেক্সামেথাসনের অপব্যবহার করবেন না। ডেক্সামেথাসনের আত্মচিকিৎসা কঠোরভাবে বর্জনীয়। হরমোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ গ্রহণ করেছেন তো মরেছেন।

করোনা চিকিৎসার কোন স্টেজে রোগীর ওপর এই ওষুধটি প্রয়োগ করা যাবে, তা শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নির্ধারণ করবেন। ঘরে চিকিৎসা নেয়া প্রাথমিক পর্যায়ের করোনা রোগীরা কোনোভাবেই ওষুধটি গ্রহণ করবেন না। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের রোগীরা ডেক্সামেথাসন গ্রহণ করলে অবস্থার ভয়ানক অবনতি ঘটবে। অক্সিজেন নেয়া বা ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীদের অবস্থা বুঝে শুধু ডেক্সামেথাসন দেয়া যেতে পারে। তারপরও বলা হয়েছে - এসব রোগীদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসন প্রয়োগ মাত্র ৩০ শতাংশ মৃত্যুহার কমাতে পারে।

ডেক্সামেথাসনের মতো ওষুধ নিয়ে মিডিয়াতে বলতে বা লিখতে গেলে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের দেশে সব সাংবাদিকের সাংবাদিকতার মান প্রশংসনীয় নয়। ওষুধ ও রোগ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকলে এসব সেনসেটিভ বিষয় নিয়ে রিপোর্টিং না করার জন্য আমি সাংবাদিকদের আহ্বান জানাব।

একান্তই যদি রিপোর্টিং করতে হয়, তাহলে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট ও চিকিৎসকের সাহায্য নিন। কিছু মিডিয়া ওষুধ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে যে স্টান্টবাজি করে আসছে এবং এখনো সমহারে করে চলেছে, তা সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের জন্য বিভ্রান্তি ও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনুগ্রহ করে এসব বন্ধ করুন।

উন্নত দেশের মিডিয়াগুলো ভয়ঙ্কর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসম্পন্ন ওষুধ নিয়েও যদি দিনরাত প্রচারণা চালায়, তাতে আমরা আতঙ্কিত হই না। কারণ ওসব দেশে ওটিসি (যেসব ওষুধ কিনতে প্রেসক্রিপশন লাগে না) ড্রাগ ছাড়া কোনো প্রেসক্রিপশন ড্রাগই লাইসেন্সপ্রাপ্ত চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া হাজার চেষ্টা করেও কেউ কিনতে পারবে না। কিন্তু আমাদের দেশে কোনো ওষুধ কিনতেই প্রেসক্রিপশন লাগে না। বিচিত্র দেশ আমাদের! বিচিত্র মানুষ আমরা! ডেক্সামেথাসন নিয়ে তাই আমার এত ভয় ও আতঙ্ক।

কিছুদিন আগে আল-জাজিরা ও বিবিসির রিপোর্টে দেখলাম- কীভাবে বাংলাদেশের পতিতালয়গুলোতে ছোট ছোট শীর্ণকায় মেয়েরা মোটাসোটা, নাদুসনুদুস ও লাবণ্যময়ী হয়ে খদ্দের আকর্ষণ করার জন্য প্রতিদিন দেদারসে ডেক্সামেথাসন কিনে খাচ্ছে এবং পরবর্তীকালে ক্যান্সার ও কিডনি বিকল হয়ে মারা যাচ্ছে। সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হলো - এই হতভাগ্য মেয়েগুলো জানে ডেক্সামেথাসনের কারণে তারা অকালে মারা যাবে।

তারপরও জীবিকা ও বেঁচে থাকার জন্য তাদের এই বিষ খেতে বাধ্য করা হচ্ছে।

আরও বলি- পোল্ট্রি ও গবাদি পশু মোটাতাজা করার জন্যও ঢালাওভাবে ক্ষতিকর ডেক্সামেথাসন হরমোন ব্যবহার করা হয়। সেই পোল্ট্রিও নাদুসনুদুস গবাদিপশু খেয়ে প্রতিনিয়তই আমরা নানাভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

এরপরও ডেক্সামেথাসন নিয়ে অ্যাডভেঞ্চারিজমে যাবেন?”


বাংলাদেশ সময়: ০১৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২০
এমইউএম/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।