ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

কক্সবাজারে ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ  

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০
কক্সবাজারে ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ   রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের ভিড়। ছবি: বাংলানিউজ

কক্সবাজার: ‘প্রথমে আমার ১৪ মাসের ছেলে, এরপর আমি এবং এর ঠিক দুইদিন পরই আমার বড় ছেলে উথেনমিংয়ে সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে তিনজন আক্রান্ত হওয়ায় প্রথমে আমি খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।

কারণ যেহেতু এখনও দেশে করোনার সংক্রমণ প্রকোপ রয়েছে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করোনা পরীক্ষার জন্য সবাই নমুনা দিই। পরে তিনজনেরই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তখন নিশ্চিত হলাম আমরা সিজনাল-ফ্লুতে আক্রান্ত। ’ 
এভাবেই পরিবারের সদস্যদের ও নিজের অসুস্থতার কথা বাংলানিউজকে বলছিলেন কক্সবাজারে বিশ্ব খাদ্য সংস্থায় (ডব্লিউএফপি) কর্মরত ড. আছিং।
শুধু তিনি বা তার পরিবার নন, কক্সবাজার জেলায় এখন ঘরে ঘরেই চলছে জ্বর, সর্দি-কাশির প্রকোপ। গত দুই সপ্তাহ ধরে হঠাৎ করে এসব রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর বাড়তি চাপ পড়েছে। অন্যদিকে করোনার উপসর্গ এবং এই ভাইরাসজনিত রোগের উপসর্গ একই হওয়ায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হচ্ছেন অনেকেই।  
তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি ভাইরাসজনিত সিজনাল-ফ্লু এবং খুব ছোঁয়াচে। যে কারণে একই ঘরে একাধিক ব্যক্তি এ ফ্লুতে আক্রান্ত হচ্ছে। .কক্সবাজার জেনারেল হাসপাতালের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) থেকে মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত হাসপাতালের বর্হিবিভাগে তিনি প্রায় ১শ রোগী দেখেছেন, যারা সবাই এই ফ্লুতে আক্রান্ত।  
তিনি বলেন, এখন হাসপাতালে আউটডোরে যেসব রোগী আসছে, এর সিংহভাগই জ্বর, সর্দি-কাশির রোগী। এসব রোগীর মেডিক্যাল চেকআপে শুধু জ্বর-কাশি ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।  অনেক ক্ষেত্রে জ্বরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়।  
তবে এই চিকিৎসক ফ্লুতে আতঙ্কিত না হয়ে এ রোগ যাতে ব্যাপকভাবে না ছড়ায় সেজন্য, মুখে মাস্ক ব্যবহার, ঘন ঘন হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির সময় মুখে রুমাল বা কনুই ব্যবহার করা এবং চিকিৎসকের পরার্মশ নেওয়ার কথা বলেন।
রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালের বর্হিবিভাগের ফ্লু কর্নারে গত এক সপ্তাহে সর্দি, কাশি এবং জ্বরে আক্রান্ত ১৪৭ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ছিল ১৪৯ জন, এর মধ্যে ৪৩ জন ছিল এ ধরনের ফ্লুতে আক্রান্ত।  
ডা. নোবেল আরও বলেন, দেশে মার্চ মাস থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ চলছে। এ ভাইরাসের সংক্রমণ এখন অনেক কমে এসেছে। ঠিক এই সময়ে এখন আবার ঘরে ঘরে সর্দি, কাশি-জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের উপসর্গের সঙ্গে এ ভাইরাসের উপসর্গ একই ধরনের হলে করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় বেশিরভাগই নেগেটিভ রিপোর্ট আসছে। তাই আমরা এ ধরনের রোগকে ভাইরাসজনিত সিজনাল-ফ্লু হিসেবেই দেখছি। কিন্তু তবুও অনেকে করোনা ভাইরাস ভেবে আতঙ্কিত হচ্ছেন।

এতে আতঙ্কের কিছু নেই। তবে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না পেলে শিশু ও বয়স্কদের জন্যে একটু ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে কাশি জটিল পর্যায়ে গেলে শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা ফ্লুতে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বলে যোগ করেন ওই চিকিৎসক।
তবে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, করোনার সংক্রমণ এখনও চলছে। কিন্তু বাইরে বেরোলে মনে হয় দেশ করোনামুক্ত হয়ে গেছে। বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক পরছেন না, নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এটি আমাদের জন্য আরেক বিপদ ডেকে আনতে পারে।  
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহাবুবুর রহমান বলেন, এখন যে জ্বর, সর্দি-কাশির প্রকোপ দেখা দিয়েছে এটা মৌসুমি সমস্যা । এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, এ ধরনের ফ্লুতে আক্রান্ত যারা তাদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। তাই লোকজনকে বাইরে বেরোতে হলে মাস্ক ব্যবহার এবং নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। নাহলে ভবিষ্যতে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। এছাড়াও সংক্রমণরোধে আতঙ্কিত না হয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ এবং তাদের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০
এসবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।