ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ঢামেকে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের বেহাল দশা

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২০
ঢামেকে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের বেহাল দশা ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ছোট ছোট অস্ত্রোপচার করা রোগীদের ওই কক্ষে রাখা হয়। কক্ষটি সরাসরি না দেখলে বোঝানো যাবে না, যে সেটা কতটা ভয়ঙ্কর।

হ্যাঁ ভয়ঙ্কর শব্দটা ব্যবহার করছি রোগীদের ক্ষেত্রে। কারণ ছোট ছোট অস্ত্রোপচারের রোগীরা ওই কক্ষে থাকেন। অথচ ওই কক্ষটি স্যাঁতস্যাঁতে ও ময়লার কথা নাই বললাম, উপরের সিলিং ভাঙা। ফলে সব সময় পানি পড়তে থাকে।

রোগীর স্বজনরা পানির রোধের জন্য সেখানে পলিথিন বেঁধে রেখেছেন। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই, ওই কক্ষের মধ্যে পানি জমে যায়। এই দৃশ্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ নিউরো সার্জারি বিভাগের ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কক্ষের।  

মঙ্গলবার (০৬ অক্টোবর) রাতে ওই কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, কক্ষটিতে ছয়টি বেডে ছয়জন রোগী আছেন। এদের মধ্যে তিন জনের মাথায় ছোট অস্ত্রোপচার হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর পরই তাদের আবারও ওই কক্ষে এনে রাখা হয়েছে।

কক্ষটির ঠিক উপরে সিলিংগুলো ভাঙা, সরাসরি ছাদ দেখা যাচ্ছে। ছাদ থেকে পানি পড়ছে রোগীদের বেডে। এতে রোগীর স্বজনরা পানি আটকানোর জন্য সেখানে বড় বড় পলিথিন বেঁধে রেখেছেন।

মাথায় আঘাত জনিত কারণে ওই কক্ষের ৪৪ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন গাজীপুরের কালীগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আরজু খাঁ (৭০) নামে এক বৃদ্ধ। তাকে দেখভাল করছেন তার পুত্রবধূ রত্না আক্তার।  

রত্না বাংলানিউজকে বলেন, গত ০৪ অক্টোবর আমার শ্বশুরের মাথায় অস্ত্রপচার করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর পরই তাকে এই কক্ষে এনে রাখা হয়।  
তিনি আরও বলেন, ওই কক্ষটি যেমন ময়লা স্যাঁতস্যাঁতে সেই কথা নাই বললাম, কিন্তু মাথার উপরে সিলিং ভাঙা। সব সময় পানি পড়ে। এখানে আগে যেসব রোগী ছিলেন, তারা পানি আটকানোর জন্য পলিথিন বেঁধে রেখেছেন। এখন ভয়ে আছি, পলিথিনে পানি জমে আছে, ফলে কখন যে সেটা ছিঁড়ে রোগীর ওপর এসে পড়ে- এখন সেটাই আতঙ্ক।

রাজবাড়ী থেকে আব্দুল জলিলকে (৫৫) মাথায় আঘাত জনিত কারণে মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর পরই তাকে ওই কক্ষের কোনায় একটা বেডে রাখা হয়েছে। রোগীর সঙ্গে থাকা ভাই নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এখানে যখন রোগীকে আনা হয়, তখনই এই বেডে ময়লায় পরিপূর্ণ ছিল। ৮০০ টাকা খরচ করে ওয়ার্ড বয়দের দিয়ে সেটা পরিষ্কার করিয়েছি। এই কক্ষের কী হাল দেখতেই পারছেন। রোগীর পাশেই একটি ট্রলির ওপরের ময়লার জার।

নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডের সরকারি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, এই কক্ষটি আনুমানিক দুই বছর যাবত ভয়ঙ্কর অবস্থায় আছে। হয়তোবা ওয়ার্ড কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছিল, এত দিন হয়ে গেলেও কেন মেরামত করা হচ্ছে না? তাও বুঝতে পারছি না। অথচ অবাক লাগছে একটি জাতীয় হাসপাতালের এ কী হাল! এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।

ওই নিউরো সার্জারির ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের ইনচার্জ (নার্স) হাসান তারেক বাংলানিউজকে জানান, তিনি অল্প কয়েকদিন হলো এই ওয়ার্ডের ইনচার্জের দায়িত্ব পেয়েছেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই গত ২৯ সেপ্টেম্বর ও চলতি মাসের ০৬ অক্টোবর ওই কক্ষটি মেরামত করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠি ইস্যুও হয়েছে, আশা রাখছি বুধবার (০৭ অক্টোবর) থেকে মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।

তিনি আরও জানান, যারা মেরামত করবেন তারা কক্ষটি এসে দেখে গেছেন। এখানে মেরামত কাজটি সহজ না। ছাদ ভাঙতে হবে, তারপর ভেতরে কোথায় পানির লাইন ফাটা আছে সেগুলো দেখতে হবে অনেক সময়ের ব্যাপার। সম্ভবত দুই বছর যাবত এই কক্ষটি বেহাল দশা অবস্থায় পড়ে আছে। হয়তোবা আগে যারা দায়িত্ব ছিলেন তারাও কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি।  

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পানির রোধের জন্য ওখানে পলিথিন বাঁধা আছে এবং ওই কক্ষে ছোট ছোট অস্ত্রোপচার করা রোগীরাও আছেন।

এ বিষয়ে ঢামেকের জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আগেও অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছিল কক্ষটি মেরামতের জন্য, কিন্তু হয়নি। এবার চিঠি ইস্যু করা হয়েছে আশা রাখি বুধবার থেকে কাজ শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২০
এজেডএস/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।