শুধু ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলাই নয়, ইরানের বিরুদ্ধে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধও চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। পরিকল্পিত এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তেহরানে গুপ্তহত্যা চালানো, সামরিক হুমকি জারি রাখা এবং আন্তর্জাতিক মিত্রদের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করছে তেলআবিব।
সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো আব্বাস আসলানি জানিয়েছেন, ইসরায়েলের মূল উদ্দেশ্য ইরানি জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়া, যাতে সরকার যুদ্ধের জবাব দেওয়া থেকে সরে আসে। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
আসলানি বলেন, ইসরায়েলের ভয়ভীতি ও হামলা ইরানে আতঙ্ক না ছড়িয়ে বরং জাতীয় ঐক্য জোরদার করছে। তিনি আরও জানান, ইসরায়েলের একের পর এক হামলার জেরে তেহরান থেকে কিছু মানুষ শহর ছাড়লেও, যারা থেকে গেছেন তাদের মধ্যে একটি শক্তিশালী সংহতির বোধ গড়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, যুদ্ধক্ষেত্রে ইরানের পূর্ণ সামরিক ক্ষমতা এখনো প্রকাশ পায়নি। বিশ্লেষকদের মতে, তেহরান এখনো পুরো শক্তি প্রয়োগ করছে না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ইরান কৌশলগতভাবে শক্তি সংরক্ষণ করছে। তবু ইসরায়েলের হামলা ও মনস্তাত্ত্বিক কৌশল তাদের উপযুক্ত জবাব থেকে ইরানকে বিরত রাখতে পারছে না।
সরকারিভাবে যুদ্ধ পরিস্থিতি সামাল দিতে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। ছুটিতে থাকা চিকিৎসক ও নার্সদের কর্মস্থলে ফিরতে বলা হয়েছে। চিকিৎসাকেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পাঠানো হয়েছে বিশেষ নির্দেশিকা। ইরানের উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৈয়দ সাজ্জাদ রাজাভি জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ প্রস্তুতিতে আছে। যেকোনো প্রয়োজনে চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার কথাও নিশ্চিত করেছে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসনিমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ইসরায়েলের একটি সামরিক গোয়েন্দা ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া তেল-আবিবে মোসাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা কেন্দ্রেও আঘাত হেনেছে তারা।
সব মিলিয়ে, ইসরায়েলের মনস্তাত্ত্বিক চাপ ও ভয়ভীতি তৈরি করে ইরানকে দুর্বল করার কৌশল আপাতত ব্যুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে। বরং তা ইরানকে আরও ঐক্যবদ্ধ এবং প্রতিরোধকামী করে তুলেছে বলেই মনে করছে বিশ্লেষকরা।
এমএইচডি/এমজে