গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার এই অনির্ধারিত বৈঠক চলে এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময়, যেখানে সংবাদমাধ্যমকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
সোমবার রাতেও নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প এক নৈশভোজে কয়েক ঘণ্টা আলোচনা করেন। নেতানিয়াহুর এটি ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরু (২০ জানুয়ারি ২০২৫) থেকে তৃতীয় সফর।
মঙ্গলবারের বৈঠকের আগে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আমি নেতানিয়াহুর সঙ্গে প্রায় পুরো সময়ই গাজা নিয়ে কথা বলব। গাজা একটি ট্র্যাজেডি, এবং আমরা সবাই এই সংকটের সমাধান চাই।
তবে আলোচনা নিয়ে হোয়াইট হাউস বা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। আল জাজিরার ওয়াশিংটন প্রতিনিধি মাইক হ্যানা বলেন, বৈঠক ঘিরে এতটাই গোপনীয়তা রাখা হয়েছে যে, কী আলোচনা হয়েছে তা বোঝা কঠিন। এত স্বল্প সময়ে বৈঠক শেষ হওয়াও ইঙ্গিত দেয়, হয়তো কোনো জটিলতা দেখা দিয়েছে।
বৈঠকের কিছুক্ষণ আগেই ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং সপ্তাহ শেষে ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি সইয়ের আশা করছেন তারা।
তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ১০ জন জীবিত এবং ৯ জন নিহত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আটকে থাকা চারটি প্রধান বিষয় এখন একটিতে নেমে এসেছে।
তবে নেতানিয়াহু পরে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকারের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, আমরা এখনো গাজায় আমাদের কাজ শেষ করিনি। আমাদের সব জিম্মিকে মুক্ত করতে হবে এবং হামাসের সামরিক ও রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করতে হবে।
আল জাজিরার জর্দান প্রতিনিধি নূর ওদে জানান, ইসরায়েলি গণমাধ্যমের দাবি— নেতানিয়াহুর ওপর যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্পের প্রবল চাপ রয়েছে। তবে এখনও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
তিনি আরও জানান, স্টিভ উইটকফের দোহা সফর বিলম্বিত হয়েছে বলে খবর এসেছে। যদিও তিনি রাতের প্রথমভাগে আশাবাদী ছিলেন, কিন্তু মূল জটিলতা এখনো রয়ে গেছে।
এ বিষয়ে আল জাজিরার প্রতিনিধি বলেন, ইসরায়েল চাইছে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাফায় একটি তাঁবুর শহর তৈরি করা হবে, যেখানে ৬ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্থানান্তর করা হবে।
পরে পুরো ২১ লাখ জনসংখ্যাকে ধীরে ধীরে গাজা থেকে বের করে দেওয়া হবে। এটা ট্রাম্প পরিকল্পনার বাস্তবায়ন বলে ইসরায়েল দাবি করছে।
ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে নেতানিয়াহুকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি ইসরায়েলে দুর্নীতির অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান মামলাকে কেন্দ্র করে বিচার বিভাগকেও তিনি সমালোচনা করেছেন।
অন্যদিকে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এর চেয়ে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় ইতিহাসে আর কখনও ছিল না। তিনি ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়নও দিয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৫৭ হাজার ৫৭৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ৩৬ হাজার ৮৭৯ জন আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার প্রায় পুরো জনসংখ্যাই বাস্তুচ্যুত এবং প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
আরএইচ