ঢাকা, রবিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১ মহররম ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব নাশ পরমাণু বোমায়, পৃথিবীও কি সেই পথে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৬
মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব নাশ পরমাণু বোমায়, পৃথিবীও কি সেই পথে? মঙ্গলগ্রহে জীবনের সমাপ্তি ঘটেছিল পারমাণবিক বোমার আঘাতে!

‘পৃথিবীর মতো মঙ্গলগ্রহেও এক সময় বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণে সেখানকার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়।

বোমাগুলো এতো শক্তিশালী ছিল যে, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি গ্রহটি শীতল ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে’।   
 
বিখ্যাত প্রকৃতিবিদ ও লেখক জন ব্রান্ডেনবার্গ সম্প্রতি এ দাবি করেছেন। মঙ্গলগ্রহে জীবনের পরিসমাপ্তি কিভাবে ঘটেছিল অথবা কাদের আক্রমণে এর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছিল -এ তথ্য উদঘাটনে সেখানে দ্রুত মনুষ্য মিশন পাঠানো দরকার বলে মতামত দিয়েছেন তিনি।
 
ব্রান্ডেনবার্গ বলেন, মঙ্গলপৃষ্ঠে বিভিন্ন তেজষ্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এসব তেজষ্ক্রিয় মৌল পৃথিবীতে তৈরি হাইড্রোজেন বোমায় ব্যবহৃত তেজষ্ক্রিয় পদার্থের অনুরূপ।  

তিনি বলেন,  সম্প্রতি ‘Death on Mars’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এতে অনুমান করা হয়েছে, মানব সভ্যতার মতোই কোনো সভ্যতা মঙ্গলগ্রহে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু তা ধ্বংস হয়ে গেছে।    
 
ব্রান্ডেনবার্গ বলেন, কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা মহাজাগতিক আক্রমণের মাধ্যমে মঙ্গলগ্রহে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। পৃথিবী থেকে পাঠানো মঙ্গলগ্রহে অভিযান পরিচালনাকারী ‘কিউরিসিটি রোভার’ এর পাশে বিভিন্ন গর্তের উপস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এসব গর্ত কি বড় ধরনের পারমাণবিক হামলায় সৃষ্টি হয়েছে?

(মঙ্গলগ্রহের ছবিতে দেখতে পাওয়া এই গর্তগুলো বহু আগের পারমাণবিক বোমার আঘাতে সৃষ্টি হয় বলে দাবি করা হচ্ছে)

অনেক প্রকৃতিবিদ মনে করেন, গ্রহাণুর আঘাতের ফলে অনেক আগেই মঙ্গলে জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু ব্রান্ডেনবার্গ দাবি করেন, অন্য কোনো সভ্যতা অথবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রের আক্রমণে গ্রহটির জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে গেছে।
 
তিনি সতর্ক করে বলেন, হয়তো পৃথিবীর এই মানবসভ্যতা ধ্বংসের সেই পথেই হাঁটছে।
  
বিজ্ঞানীদের গবেষণায় মহাবিশ্বে অন্য কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর উপস্থিতি বা তাদের পাঠানো কোনো সিগন্যাল এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, তার মানে কি তারা ধ্বংস হয়ে গেছে? এ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, আসলে মহাজাগতিক সেই শক্তি আমাদের চূড়ান্তভাবে সতর্ক করছে আর তারা আমাদের এই পৃথিবী পর্যবেক্ষণ করছে।

তিনি জানান, জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যাডওয়ার্ড হ্যারিসন পরামর্শ দিয়েছেন, রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে কোনো সভ্যতা যদি অন্য কোনো সভ্যতার উপস্থিতি নিশ্চিত হয়, তাহলে তারা সেই সভ্যতাকে ধ্বংস করে দেয়। পরবর্তীতে যেন নিজেরাই আক্রমণের শিকার না হয়, সেজন্যই তারা ধ্বংসাত্মক এ পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়।
(মঙ্গলগ্রহের এ ছবি দেখে ধারণা করা হচ্ছে- এক সময় এখানে সভ্যতা ছিল)

সৌরজগতের নিকটবর্তী নক্ষত্রমণ্ডলেই পৃথিবীর মানবসভ্যতার ধ্বংস করার শক্তি বিরাজমান বলে ধারণা করা হয়। অ্যালিয়েন অথবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র ধ্বংসাত্মক এসব শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।  
 
ব্রান্ডেনবার্গের পরামর্শ, বুদ্ধিমান প্রাণীর জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হিসেবে বিবেচিত হয় অন্য কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর উপস্থিতি। মঙ্গলে জীবনের অস্তিত্ব ধ্বংসে কারা জড়িত ছিল -বিষয়টি জানতে পারলে পৃথিবীতে সম্ভাব্য সেই আক্রমণ প্রতিহত করার একটা উপায় হয়তো বের করা সম্ভব।   
 
মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল এবং তা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে- এমন আবিষ্কার আমাদের স্মরণ করে দেয় মহাকাশ বিপজ্জনক একটি স্থান এবং আমাদের এই সভ্যতা টিকিয়ে রাখার জন্য আরও সতর্ক হতে হবে। তা না হলে আমরাও একইভাবে ধ্বংস হয়ে যাব।   
 
‘UFO Investigations Manual’ এর লেখক নিজেল ওয়াটসন বলেন, মঙ্গলগ্রহ পারমাণবিক বোমার আঘাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে- এ তথ্য ব্রান্ডেনবার্গ প্রথম দেন নাই। বাইবেলে উল্লেখিত মহাকাশ সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা এ বিষয়টি তুলে ধরেছে। ‘হাজার-হাজার বছর আগেও পৃথিবীতে মহাকাশচারী ছিলেন’ এমন ধারণার প্রবক্তাও নিজেল ওয়াটসন।   

(মঙ্গলগ্রহে অনুসন্ধানে থাকা কিউরিসিটি রোভারের পাশের গর্তগুলো বিস্ফোরণ সংঘঠিত হওয়ার স্থান হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে)

নিজেল ওয়াটসন বলেন, ওল্ড টেস্টামেন্টের (বাইবেলের সবচেয়ে পুরনো সংস্করণ) বুক অব জেনেসিস এ বলা হয়েছে,  ‘স্রষ্টা আকাশ থেকে সাদুম ও গোমারাহ শহরে (মৃত সাগর) সালফার ও আগুনের বৃষ্টি বর্ষণ করলেন’ (সমকামিতার শাস্তিস্বরূপ)।  
 
এদিকে, বিজ্ঞানীরা লিবিয়ার এক ধরনের গলিত কাচের খণ্ড পেয়েছেন, যা ২ কোটি ৮০ লাখ (২৮ মিলিয়ন) বছর আগের পরমাণু যুদ্ধের প্রমাণ হিসেবে ধারণা করা হয়। এছাড়া, আটলান্টিক মহাসাগরে নিমজ্জিত কাল্পনিক সভ্যতা ‘আটলান্টিস’ পারমাণবিক যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে গেছে বলেও ধারণা তাদের।  
  
ধারণা করা হয়, বৃহস্পতি ও মঙ্গল গ্রহের মধ্যবর্তী স্থানে মালডেক নামে একটি গ্রহের অস্তিত্ব ছিল। এ গ্রহের অধিবাসীরা একসময় স্বার্থপর, অলস আর ক্ষমতালোভী হয়ে উঠলো। আধ্যাতিক প্রতিষ্ঠান Aetherius Society এর মতে, ‘তারা হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ‘মালডেক’ গ্রহটিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেললো। চোখ ঝলসানো আলো আর অগ্নিশিখা গ্রহটির প্রাণিবৈচিত্র্য ধ্বংস করে ফেললো। সেই গ্রহটি এখন গ্রহাণুপুঞ্জ হিসেবে অবস্থান করছে।
 
ব্রান্ডেনবার্গের তত্ত্বের ভিত্তি মজবুত হয়ে দাঁড়িয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধকরণের প্রতিযোগিতা এবং এর অপব্যবহারের আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়ার কারণে। তার এই তত্ত্ব বিশ্ববাসীর জন্য সতর্কবার্তা: পারমাণবিক বোমা, হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আমরা যেন নিজে নিজেই ধ্বংস হয়ে না যাই, বিষয়টি নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।  

সোর্স: metro.co.uk
 
বাংলাদেশ সময়: ০১২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৬   
এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।