তার এই মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য নিয়ে গবেষণাও অব্যাহত। সম্প্রতি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক আশিস রায়ের লেখা বইয়ে নতুন রহস্য উন্মোচন হতে পারে।
‘বোস ক্যান বি এ মেজর থ্রেট, ফাইন্ড হিম নাউ’। অর্থাৎ ‘বোস বড়সড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। এখনই তাকে খুঁজে বের কর। ’ ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগকে এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল ভিক্টর হোপ। ১৯৪১ সালের ১৬ জানুয়ারি কলকাতার বাড়ি থেকে নেতাজির অন্তর্ধানের পর রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় সাহেবদের মধ্যে। তারপর বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা থেকে মণিপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজের অভিযান সবই ইতিহাস। নেতাজিকে নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে ছিলো সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশরা। তাইওয়ানে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুরহস্য নিয়ে তিন তিন বার তদন্তও চালায় ব্রিটিশ সরকার। শেষে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে বলে মেনে নেয় তারা। এমনটাই জানা গিয়েছে ‘লেইড টু রেস্ট: দ্য কনট্রভারসি ওভার সুভাষচন্দ্র বোস’স ডেথ’ নামের একটি বইয়ে।
দীর্ঘদিন ধরে নেতাজির ওপর গবেষণা চালাচ্ছেন সাংবাদিক আশিস রায়। সেই সময় নেতাজি সংক্রান্ত বেশকিছু গোপন নথি চলে আসে তার হাতে। সেখানে উঠে আসে বেশকিছু অজানা তথ্য। ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর খবর নিয়ে সন্দিহান ছিল ক্লিমেন্ট এটলির সরকার। ফলে দেওয়া হয় তদন্তের নির্দেশ। ওই বছর লন্ডনের নির্দেশে পরাধীন ভারত প্রথম তদন্ত শুরু করেন টিএস ফিনি নামের এক ব্রিটিশ পুলিশ আধিকারিক। ব্যাংকক, সাইগন বা বর্তমানের হো চি মিন সিটিতে তদন্ত চালানো হয়। ১৯৪৫ সালের অক্টোবর মাসে রিপোর্ট জমা দেন তারা। বিমান দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয়েছে নেতাজির বলে রিপোর্ট দেন তদন্তকারীরা।
তবে ফিনির রিপোর্টে সন্তুষ্ট হতে পারেনি তখনকার ইম্পেরিয়াল সরকার। অাবারো ফাইল খোলার নির্দেশ দেয় তারা। এবারে তদন্তের ভার দেওয়া হয় ‘ব্রিটিশ কম্বাইনড সার্ভিসেস’কে। নেতাজির ছায়াসঙ্গী কর্নেল হাবিবুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। ১৯৪৫-এর ডিসেম্বরে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয় কম্বাইনড সার্ভিসেস। তারা জানায়, বিমান দুর্ঘটনাতেই মৃত্যু হয় নেতাজির। মৃত্যুর সময় হাবিবুর রহমান নেতাজির সঙ্গে ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন ওই ব্রিটিশ তদন্তকারী। এবার কিছুটা আশ্বস্ত হয় ‘রাজ সরকার’। তবুও ফের একবার তদন্ত চালাতে বলা হয় লেফটেন্যান্ট কর্নেল জন ফিগসকে। টোকিওতে ‘ইম্পেরিয়াল জাপানিজ আর্মি’ লেফটেন্যান্ট কর্নেল শিরো ননগাকি, লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাদেও সাকাই এবং ডাক্তার তয়শি সুরিটাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। তারপর ১৯৪৬ সালে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেন ফিগস। তিনি জানান বিমানে নেতাজির সঙ্গে ছিলেন ননগাকি ও সাকাই। আহত নেতাজির চিকিৎসা করেন সুরিটা। তাদের সামনেই নাকি মৃত্যু হয় নেতাজির। তিনটি রিপোর্টে একই কথা উঠে আসায় শেষ পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হয় ব্রিটিশ সরকার।
চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে মুক্তি পাবে আশিস রায়ের এই বিতর্কিত বইটি। বিখ্যাত ওই সাংবাদিক জানান, শুধুমাত্র মানবিকতার খাতিরেই বইটি লিখেছেন তিনি। এই রহস্যের সমাধান হওয়া উচিত। তার বইয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্রের কথাও তুলে ধরেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই সাংবাদিক। ১৯৪১ সালে ব্রিটিশ ঘাতকরা তুরস্কে নেতাজিকে হত্যার চেষ্টা করে বলেও দাবি করেন তিনি। সব মিলিয়ে তার বইটিতে রয়েছে বেশ কিছু বিস্ফোরক তথ্য। তবে যাই হোক না কেন, আজও রহস্যে মোড়া নেতাজির মৃত্যু। তার এই বই মৃত্যু রহস্যে নতুন কোনো কিনারা খুঁজে দেয় কিনা তা নিয়ে কৌতুহলী ইতিহাস গবেষক তথা নেতাজি অনুরাগীরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৮
এসকে/এনটি