ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে আরেক দুর্যোগ খরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৮
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে আরেক দুর্যোগ খরা যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে খরায় দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ, ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: আফগানিস্তানে সরকার ও তালেবানদের মধ্যে যুদ্ধে বাস্তুহারা হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তবে এ বছর দেশটিতে তার চেয়েও বেশি লোক বাস্তুহারা হয়েছেন খরায়। ফলে সৃষ্টি হয়েছে মানবিক সংকট। সেইসঙ্গে সম্প্রতি দেশটিতে তালেবান এবং ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলা বেড়ে গেছে। রাজধানী কাবুল এবং অন্যান্য শহরে বেশ কয়েক হামলায় প্রাণও হারিয়েছেন বহু লোক।

৭০ বছর বয়সী শাদি মোহাম্মদ। আফগানিস্তানের পশ্চিম হেরাতের সীমান্তের কাছাকাছি একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি।

শাদি মোহাম্মদ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা তৃষ্ণা এবং ক্ষুধায় ভুগছি। আমাদের যা ছিল, তার বেশিরভাগই হারিয়েছি। এখন আমাদের কিছুই নেই। আমরা ছোট্ট একটি তাঁবুতে আটজন মানুষ জীবন কাটাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমার স্ত্রী আর ভাই মারা গেছেন। আমার সন্তানদের অর্ধেক আমার সঙ্গে এখানে বসবাস করছে। আর বাকিদের ফেলে এসেছি।

খরার কারণে আফগানিস্তানের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার মানুষ নিজের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাদের একজন শাদি মোহাম্মদ।

অতীতের যেকোনো সময় থেকে বর্তমানে দেশটির আরও বেশি অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তালেবান। ২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযান শুরুর আগ পর্যন্ত আফগানিস্তান কখনোই এতোটা অনিরাপদ ছিল না। যেমনটা এখন হয়েছে।  
তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের যুদ্ধ ইতোমধ্যে মার্কিন ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এখনকার হামলাগুলো যেমন বড়, তেমনই বিস্তৃত এবং মারাত্মক। তালেবান এবং মার্কিন-ন্যাটো সমর্থিত আফগান সরকার দু’পক্ষ এখন নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।

কিন্তু জাতিসংঘ বলছে, চলতি বছর তালেবান ও সরকারের মধ্যে যুদ্ধের চেয়ে খরার কারণে বহু আফগান বাস্তুহারা হয়েছেন।

দেশটির হেরাতে ত্রাণ প্রচেষ্টা সমন্বয় সাধনে সহায়তা করছে জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ইউএনডাব্লিউএফপি)।

সংস্থাটির কর্মকর্তা কাদির অ্যাসেমি বলেন, এটা খুব চ্যালেঞ্জিং। কারণ এখানে দুর্যোগের মাত্রা অনেক বেশি। জাতিসংঘ খরাতে আক্রান্ত ২২ লাখ মানুষের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ডলারের সাহায্য-সহযোগিতা। এছাড়া বর্তমানে ইউএনডব্লিউএফপি খাদ্য কিনতে ভোক্তাদের অর্থ বিতরণ করছে।

কাদির উল্লেখ করেন, সম্প্রতি দেশটির উত্তর প্রদেশ ফরিয়ব থেকে আসা এক নারী বলেন, যদি আমাদের টাকা থাকতো, আমরা কখনও এখানে আসতাম না। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, দেশে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বৃষ্টি হচ্ছে না। সবকিছু শুকিয়ে গেছে। এমনকি আমাদের বাচ্চাদের যে পানি খাওয়াবো, সেই সুযোগও নেই। এর ওপরে তালেবান ও সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ। চরম বিশৃঙ্খলা।

কাদির অ্যাসেমি বলেন, আসন্ন শীতে উদ্বিগ্ন হেরাতের হাজার হাজার মানুষ। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় তাঁবুতে থাককে খুব কষ্ট হবে এসব মানুষের। আমরা গত ১৮ বছরে এতো বড় আকারের দুর্যোগ দেখিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৮
এপি/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।