বৃহস্পতিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তকে ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামে (ইইএফ) বক্তব্য দিতে গিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এমন বিস্ময়কর তথ্য দেন।
বক্তব্যে পুতিন বলেন, আমি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলেছিলাম, আপনি কী চান আমাদের হাইপারসনিক অস্ত্রশস্ত্র আপনার কাছে বিক্রি করি? আর এর মাধ্যমে আমরা সবকিছুর ভারসাম্য বজায় রাখবো।
তবে এই প্রস্তাব ডোনাল্ড ট্রাম্প বিবেচনা করেছেন কি-না, সেটা অস্পষ্টই রয়েছে গেছে। কারণ নিজেদের চেষ্টায় এই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র বানানোয় ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে।
পুতিন এও বলেন, ঠিক আছে, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) পারবে এই অস্ত্র বানাতে। তবে কেন তারা এই অর্থ ব্যয় করবে, যেহেতু আমরা ইতোমধ্যে করেছি। আমাদের দু’দেশের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ভারসাম্য তৈরি করতে রাশিয়া এই ব্যয় করতেই পারে।
তবে সংবাদমাধ্যম বলছে, রুশ প্রেসিডেন্ট তার প্রস্তাবটি সম্পর্কে সিরিয়াস ছিলেন কি-না, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার নয়। এছাড়া এটি খুবই হাই-প্রোফাইল ট্রলের উদাহরণও হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। কেননা, মস্কো যেহেতু অন্য কারও মতো বিদেশে নিজেদের সর্বাধুনিক অস্ত্র বিক্রি করতে সবসময়ই অনীহা প্রকাশ করে। দেশটি রপ্তানির জন্য অস্ত্রের বিশেষ সংস্করণ তৈরি করে বলে জানা যায়।
রাশিয়ার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো অত্যন্ত উচ্চগতিতে শত্রুপক্ষকে আঘাত করতে পারে। মুহূর্তেই ধীরগতির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। তখন প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করা কঠিন থেকে আরও কঠিন হয়ে যাবে।
২০১৮ সালের মার্চে অত্যাধুনিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, লেজার, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, আন্ডারওয়াটার ড্রোনসহ একগুচ্ছ নতুন অস্ত্র উন্মোচন করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। এর মধ্যে তার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র বা মিসাইল ‘কিনঝাল’।
বিশ্বে সর্বপ্রথম সর্বাধুনিক এই ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়ে পুতিন জানিয়েছিলেন, হাইপারসনিক ক্ষেপাণাস্ত্র প্রতিযোগিতায় রাশিয়া অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে ১৫ বছর এগিয়ে থাকবে। সেইসঙ্গে রাশিয়া এটি নিয়ে ১০টি অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে কিনঝালটি ‘তোপোলেভ টিইউ-২২২এম৩ বোমার’ বহন করে অত্যাধিক দূরগতির সঙ্গে। এটির গতি শব্দের চেয়ে আটগুণ বেশি। যেখানে শব্দের গতি প্রতি সেকেন্ডে ৩৩২ মিটার। এ হিসেবে কিনঝাল এক সেকেন্ডে যেতে পারে দু্ই হাজার ৫৭৬ মিটার। অর্থাৎ এক সেকেন্ডে কিনঝাল পাড়ি দিতে সক্ষম প্রায় আড়াই কিলোমিটার। এমনকি ক্ষেপণাস্ত্রটি মুহূর্তেই গতি পাল্টিয়ে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে সক্ষম।
এদিকে, বিশ্বে দ্বিতীয় হিসেবে হাইপারসনিক যুগে প্রবেশ করে চীন। ২০১৮ সালের আগস্টে বেইজিং এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চীনা এয়ারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি করপোরেশনের সংযুক্ত প্রতিষ্ঠান চীনা একাডেমি অব এয়ারোস্পেস এয়ারোডায়নামিক্স (সিএএএ) ‘স্টাররি স্কাই-২’ নামে একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায়।
তখন বেইজিংয়ের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম বলেছিল, স্টাররি স্কাই-২ কেবল দ্রুতগতির নয়। শব্দের চেয়েও এর গতি পাঁচগুণ বেশি। এটি নীরবে-নিঃশব্দে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম। এর গতি প্রতি ঘণ্টায় চার হাজার ৫৬৩ মাইল বা সাত হাজার ৩৪৪ কিলোমিটার।
এ দিক থেকে ওই দুই রাষ্ট্রের চেয়ে পিছিয়ে আছে বা দুর্বল যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ২০১৮ সালের অক্টোবরে নিজেদের অস্ত্রাগারে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র যোগ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল প্রধান পরাশক্তির দেশটি।
শিগগির মহাকাশের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিটির পরীক্ষা চালানো হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি সেক্রেটারি অব ডিফেন্স প্যাট্রিক শানাহান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৯
টিএ