ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

স্বপ্নের ইসলামী রূপরেখা

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৮
স্বপ্নের ইসলামী রূপরেখা স্বপ্নের ইসলামী রূপরেখা

প্রতিটি মানুষ ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মানুষের যেমন বৈচিত্র্য রয়েছে, তেমনি মানুষের দেখা স্বপ্নেও রয়েছে ভিন্নতা। মানুষ ভালো স্বপ্ন যেমন দেখে, তেমন দেখতে পারে ভয়ঙ্কর বা দুঃস্বপ্ন। দারুণ স্বপ্ন মানুষকে আনন্দ দিলেও কিছু স্বপ্ন মানুষকে ভাবাতুর করে রাখে। চিন্তা-ভাবনা ও অস্থিরতায় ফেলে দেয়।

জীবনের খুঁটিনাটি প্রত্যেক বিষয়ের মতো স্বপ্ন সম্পর্কেও ইসলামের বক্তব্য রয়েছে। এ বক্তব্য কোনো দার্শনিক বা বিজ্ঞানির বক্তব্যের সঙ্গে মিলতে হবে, এমনটা জরুরি নয়।

তবে মিলে গেলে অসুবিধার কিছু নয়।

স্বপ্ন ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। ইসলাম স্বপ্নকে নবুয়্যতের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। স্বপ্নের ইসলামী রূপরেখা কী বা স্বপ্ন সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য কী—তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, স্বপ্ন তিন প্রকার। এক. রুইয়ায়ে সালেহাহ (বা ভালো স্বপ্ন। আল্লাহ মহানের পক্ষ থেকে কোনো সুসংবাদ হিসেবে যা বিবেচ্য)। দুই. রুইয়ায়ে শয়তানিয়্যাহ (বা শয়তানকর্তৃক প্ররোচনামূলক প্রদর্শিত স্বপ্ন)। তিন. রুইয়ায়ে নাফসানিয়্যা (বা মানুষের চিন্তা-চেতনার কল্পচিত্র)। এরপর রাসুল (সা.) বলেছেন, যদি কেউ অপছন্দনীয়, ভয় বা খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেন তাড়াতাড়ি অজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে যায় এবং সে স্বপ্নের ব্যাপারে অনভিজ্ঞ কাউকে কিছু না বলে। (আবু দাউদ)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে আরো বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) ফজরের নামাজের পর সাহাবিদের জিজ্ঞেস করতেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো স্বপ্ন দেখেছ কি? অতঃপর রাসুল (সা.) নিজে এগুলোর ব্যাখ্যা করতেন।

চিরসত্যের ধারক মহানবী (সা.)-এর বাণীর আলোকে আমরা বিশ্বাস করি যে, কিছু ভালো স্বপ্ন আল্লাহ মহান তার প্রিয় ও নেক বান্দাদের দেখান। আর কিছু স্বপ্ন শয়তানের প্ররোচনায় হয়ে থাকে এবং সেগুলো মানুষের চিন্তা ও ধারণার ফল।

জরুরি জ্ঞাতব্য যে, নবি-রাসুলদের স্বপ্ন ওহি। এ জন্যই স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজের ছেলে ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দিতে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। জাতীয় কোনো স্বপ্ন দেখলে, কোনো ব্যক্তির জন্য এভাবে কোরবানি করতে উদ্যত হওয়া সম্পূর্ণ হারাম।

স্বপ্নের ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূণ কথা হলো স্বপ্ন কাউকে না বলা। স্বপ্ন-ব্যাখ্যা খুবই কঠিন এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক একটি বিষয়। যে কেউ ইচ্ছা করলেই এই কাজটি করতে পারেন না। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।

কোরআন ও হাদিসের আলোকে স্বপ্ন ও স্বপ্নে ব্যাখ্যার কিছু মৌলিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব। তবে কি স্বপ্ন দেখলে কি হয়, তা এখানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে না । এটা নির্দিষ্ট করে আলোচনা করা সম্ভবও নয়। কারণ স্বপ্নদ্রষ্টার অবস্থা ভেদে একই স্বপ্নের ব্যাখ্যা বিভিন্ন রকম হতে পারে।

স্বপ্ন নিয়ে কিছু কথা

হাদিসে এসেছে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, নবুয়্যতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই, আছে কেবল মুবাশশিরাত (সুসংবাদ)। সাহাবারা প্রশ্ন করলেন, মুবাশশিরাত কী? তিনি বললেন, ভালো স্বপ্ন। (বুখারি শরিফ) 

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, দিন যত যেতে থাকবে, কিয়ামত নিকটে হবে। মুমিনদের স্বপ্নগুলো তত মিথ্যা হতে দূরে থাকবে। ঈমানদারের স্বপ্ন হলো নবুয়্যতের ছিচল্লিশ ভাগের একভাগ। (বুখারি ও মুসলিম)

একটি বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে যে লোক যত বেশি সত্যবাদী হবে তার স্বপ্ন তত বেশি সত্যে পরিণত হবে। ’

স্বপ্ন দেখলে করণীয় 

আবু সায়িদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, তোমাদের কেউ যদি এমন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে, তাহলে সে যেন জানে যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে স্বপ্নটি দেখানো হয়েছে। তখন সে যেন আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে ও অন্যদের কাছে বর্ণনা করে।

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, এ স্বপ্নের কথা শুধু তাকে বলবে, যে তাকে ভালোবাসে। আর যদি স্বপ্ন অপছন্দের হয়, তাহলে বুঝে নেবে এটা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়েছে। তখন সে শয়তানের ক্ষতি থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। আর এ স্বপ্নের কথা কারো কাছে বলবে না। কারণ খারাপ স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারি ও মুসলিম) 

আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি (সা.) বলেছেন, সুন্দর স্বপ্ন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। কেউ স্বপ্নে খারাপ কিছু দেখলে বাম পাশে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করবে আর শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। (এভাবে বলবে, আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম) তাহলে এ স্বপ্ন তাকে ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারি ও মুসলিম)

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যদি তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে না, তাহলে তিনবার বাম দিকে থুথু দেবে। আর তিন বার শয়তান থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাইবে। (আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম বলবে) আর যে পার্শ্বে শুয়েছিল, তা পরিবর্তন করবে (অর্থাৎ পার্শ্ব পরিবর্তন করে শুবে)। (মুসলিম)

কে দেবে স্বপ্নের ব্যাখ্যা

স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেবে কে? সবাই কি স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেয়ার যোগ্যতা রাখে? মূলত স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেয়ার অধিকার রাখেন ওই ব্যক্তি, যিনি কোরআন ও হাদিস সম্পর্কে বেশ অভিজ্ঞ এবং স্বপ্ন-ব্যাখ্যার মূলনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মানব-দরদী ও সবার প্রতি কল্যাণকামী মনোভাবের অধিকারী হতে হবে। কারণ স্বপ্নের ব্যাখ্যা একটি শরয়ি বিদ্যা। স্বপ্নের ব্যাখ্যা যেভাবে করা হয়, সেভাবেই তা সংঘটিত হয়।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, স্বপ্নের ব্যাখ্যা যেভাবে করা হয়, সেভাবে তা বাস্তবায়িত হয়। যখন তোমাদের কেউ স্বপ্ন দেখবে, তখন আলেম অথবা কল্যাণকামী ব্যতীত কারো কাছে তা বর্ণনা করবে না। (মুসতাদরাক, আবু দাউদ, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)

স্বপ্ন তাবির বা ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। ইমাম বগভী রহ. বলেন: ব্যাখ্যা করার দিক থেকে স্বপ্ন কয়েক প্রকার হতে পারে। প্রথমত কোরআনের আয়াত দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান করা। দ্বিতীয়ত রাসুল (সা.)-এর হাদিস দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা। তৃতীয়ত মানুষের মধ্যে প্রচলিত বিভিন্ন প্রসিদ্ধ উক্তি দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা। চতুর্থত: কখনো বিপরীত অর্থ গ্রহণের নীতির আলোকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৮
এমএমইউ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।