কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় গত তিন দিনে পৃথক তিন থানায় নাশকতার অভিযোগে বিএনপির ১৭১ নেতাকর্মীদের নামে মামলা করা হয়েছে।
শুক্রবার (০৯ ডিসেম্বর) সকাল পর্যন্ত এসব মামলায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, তারা যাতে ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাতে না পারে এ জন্য সরকারের নির্দেশে পুলিশ এমন মামলা করছে।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (০৬ ডিসেম্বর) বিএনপির ১৮ নেতাকর্মীর নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাজু মোহন সাহা। এ মামলায় আরও ৩০-৩৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এছাড়া কুষ্টিয়া শহর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক শাহীন হোসেন (৪৫), কুষ্টিয়া সদর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আনিছুর রহমান (৪৪), হাবিবুর রহমান হাবিব (২৮) এবং হাটশ হরিপুর ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আলামিন মালিথা হাবিবকে (৩২) গ্রেফতার করা হয়েছে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড় সংলগ্ন নির্মাণাধীন বিআরবি হাসপাতালের মেইন গেইটের সামনে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে ৪৫ থেকে ৫০ জন বিএনপির নেতাকর্মী সমাবেত হয়। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে তারা একত্রিত হয়েছিল বলে জানা যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখান থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে যান। এ সময় চার জনকে আটক পুলিশ।
সেখান থেকে পাঁচটি বাঁশের লাঠি, তিনটি লোহার রড, ইটের টুকরা, এক লিটার পেট্রোল ও একটি গ্যাস লাইট জব্দ করে পুলিশ।
এছাড়া গত বুধবার (০৭ ডিসেম্বর) মিরপুর থানায় বিএনপি-জামায়াতের ২৯ নেতাকর্মীর নামে একই আইনে মামলা করেন মিরপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ আবু সাইদ। সেই মামলায় আরও ১৪-১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার কচুয়াদহ গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে আহসান হাবিব লিংকন (২৯), মৃত মনছের আলীর ছেলে আওলাদ হোসেন (৪২), কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত মোয়াজ্জেল হোসেনের ছেলে আমিরুল ইসলাম সেন্টু (৫২) ও চারুলিয়া গ্রামের শাহাদাৎ ফকিরের ছেলে গোলাম মোস্তফাকে (৫০) গ্রেফতার করা হয়।
সেই মামলায় উল্লেখ করা হয়, মঙ্গলবার (০৬ ডিসেম্বর) দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ খবর পায় ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের গেটপাড়া স্কুলের বারান্দায় ৩০-৩৫ জন জামায়াত এবং বিএনপির নেতাকর্মী নাশকতার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিত্বে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে চারজনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ককটেল-বোমার মতো দেখতে লাল কালো টেপ জড়ানো চারটি বস্তু, লম্বা বাঁশের লাঠি, লোহার রড ও ইটের টুকরা জব্দ করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার (০৮ ডিসেম্বর) কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানায় বিএনপির ১২৪ নেতাকর্মীর নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন দৌলতপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইলিয়াস রহমান।
এ মামলায় ৩৪ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৮০-৯০ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া দৌলতপুর উপজেলার রিফায়েতপুর গ্রামের মৃত হবিবর রহমানের ছেলে রিপন সরকার (৪৫), একই উপজেলার মিরেরপাড়া কাসেম বাজার এলাকার মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে আজিজুল ইসলাম (৩৭), রিফায়েতপুর গ্রামের মৃত নূর ইসলামের ছেলে মিঠু (৩২), তেকালা গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে রাশেদুল ইসলাম (৪৫) এবং গোবরগাড়া গ্রামের কেরু মোল্লার ছেলে টুটুলকে (৩২) গ্রেফতার করা হয়।
এ মামলায়ও ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি অবিস্ফোরিত ককটেল (হাতবোমা), ২৩টি বিভিন্ন সাইজের লাঠি, বিভিন্ন সাইজের ১২টি লোহার রড, দুইটি প্লাস্টিকের বস্তায় রক্ষিত অসংখ্য ইটের ভাঙ্গা অংশ, দুটি লোহার সাবল এবং একটি গাছ কাটা হাত করাত জব্দ করে পুলিশ।
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন জানান, আগামি ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা করা হচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীরা কোনো ধরনের অপরাধ করেনি।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) খাইরুল আলম জানান, পৃথক তিন থানার তিনটি মামলায় গ্রেফতার ১৩ আসামিকে আদালতে সোপর্দ্ধ করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২২
এফআর