ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

তৃতীয় দিনে মেট্রোরেলে যাত্রীর চাপ স্বাভাবিক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২
তৃতীয় দিনে মেট্রোরেলে যাত্রীর চাপ স্বাভাবিক

ঢাকা: গত বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে উন্মুক্ত হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের জন্য মেট্রোরেলে যাতায়াত। সেদিন উত্তরার দিয়াবাড়ি স্টেশনে যাত্রীর চাপ ছিল অতিরিক্ত।

স্টেশনের বাইরে প্রায় আধা কিলো পর্যন্ত চলে যায় যাত্রীদের লাইন। তবে দুই দিন পর শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) তৃতীয় দিনে উত্তরা দিয়াবাড়ি স্টেশনের চিত্র একদমই ভিন্ন। এদিন স্টেশনে নিয়মিত যাত্রীর তুলনায় ঘুরতে আসা যাত্রীর সংখ্যা ছিল বেশি। বেশিরভাগই স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি তুলছিলেন। অনেকে আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্লগিংও করছিলেন।

শনিবার সকাল থেকে ওই স্টেশন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিন সকালে স্টেশন খোলার আগ পর্যন্ত যাত্রীদের ভিড় ছিল একেবারেই সামান্য। এমন কি টিকিট কাটার ভেন্ডার মেশিন এবং টিকিট কাউন্টারগুলোর সামনেও ছিল তুলনামূলক কম ভিড়। যদিও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে। তবে কাউন্টারের সামনে যাতে ভিড় কম হয় তাই ক্রাউড ম্যানেজমেন্টের জন্য স্কাউটের পক্ষ থেকে যাত্রীদের নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে।

সেখানে দায়িত্বরত স্কাউট সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অনেকে এসে কনফিউজ থাকে যে কোনটা টিকিটের লাইন। আবার অনেক সময় ভাংতি না থাকলে ভেন্ডিং মেশিন টাকা ফেরত দিতে দেরি করে। তখন যাত্রীদের অন্য মেশিন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকি।

নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্য ফয়সাল বলেন, সকাল সাড়ে সাতটায় মেট্রোর প্রধান ফটক খুলে দেওয়া হয়। এর আগে স্টেশনের বাইরে সামান্য ভিড় ছিল। গেট খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে ভিড় শেষ হয়ে যায়। তবে আস্তে আস্তে লোক সংখ্যা বাড়ছে। এই দুই দিনে বেশির ভাগ যাত্রী মেট্রো যাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।

তৃতীয় দিনে এসে প্রথম বারের মতো যাত্রা করছেন শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা তানভীর আহমেদ। তিনি একটি সফটওয়্যার ফার্মে চাকরি করেন। মূলত অবসর থাকার কারণে আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলে করে ঘুরতে আসেন। তবে ফিরতি পথে ভেন্ডিং মেশিন থেকে টিকিট কাটার সময় সামান্য বিড়ম্বনায় পড়েন। তার কাছে থাকা দশ টাকা এবং বিশ টাকার নোট মেশিন রিড করতে পারছিল না। পরবর্তীতে বন্ধুর থেকে টাকা নিয়ে দুইটা টিকিট কাটেন। তিনি বাংলা নিউজকে বলেন, ভেন্ডিং মেশিন বেশকিছু নোট শনাক্ত করতে পারে না। এটা অবশ্য এটা বড় কোন সমস্যা না। সকালে আগারগাঁও এ ভিড় ছিল তবে উত্তরাতে ভিড় নেই কোনো। এখন আবার ব্যাক করব।

পরিবার নিয়ে তৃতীয় দিনে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে আগারগাঁও থেকে উত্তরায় এসেছেন আফিয়া নায়েল জেরিন। তার সঙ্গে ছিলেন বাবা- মা এবং ছোট ভাই। মূলত তারা নিয়মিত যাত্রী না, ভ্রমণে এসেছেন।   মেট্রোরেলে ভ্রমণের স্মৃতি ধরে রাখতে পরিবারের সবাই স্টেশনের মধ্যে ছবি তুলছিলেন। জেরিন বাংলানিউজকে বলেন, বাবা মাকে নিয়ে মেট্রোরেলে ভ্রমণে এসেছি। তাই স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি তুলছিলাম। আমাদের সচারাচর এই পথে আসা হয় না।

তবে টিকিট প্রক্রিয়া আরও সহজ করার দাবি জানান জেরিনের বাবা খন্দকার শফিউল আলম। তিনি বলেন, টিকিট কাটার ক্ষেত্রে যারা শিক্ষিত তাদের জন্য তেমন একটা অসুবিধা না হলেও একদম সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টকর। তাদের জন্য টিকিট প্রক্রিয়া আরও সহজ করা দরকার।

সরেজমিনে তৃতীয় দিনে উত্তরার দিয়াবাড়ি মেট্রোস্টেশন ঘুরে দেখাগেছে, মেট্রোরেলে নিয়মিত যাত্রীর চেয়ে বেশি রয়েছে ঘুরতে আসা ভ্রমণের যাত্রী। তাদের বেশির ভাগই স্টেশনে ঘুরাঘুরি এবং ছবি তুলে সময় কাটাচ্ছিল। মেট্রোতে চড়তে পেরে তাদের বেশির ভাগই ছিল বেশ আনন্দিত।

তেমনই একজন আবুল হোসেন মডেল স্কুলের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। ছুটি থাকায় প্রথমবারের মতো পরিবারকে নিয়ে মেট্রোরেল ভ্রমণে এসেছেন। ছয় মাসের বাচ্চাকে নিয়ে তিনি স্টেশনের ভিতর কাউন্টারের সামনে সেলফি তুলছিলেন। পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে তিনি খুবই আনন্দিত।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, মেট্রোরেল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ। উত্তরাতে চাকরি এবং বাসা থাকার কারণে আমাদের এ পথে যাতায়তের প্রয়োজন পড়ে না। তাই ঘুরতে এসেছি। কারণ স্কুল খুলে ফেললে তখন আর ঘুরতে আসার সময় পাব না।

অনেকে মেট্রোস্টেশনে বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। তারাও ছবি তোলার পাশাপাশি ঘুরে ঘুরে মেট্রো দেখছেন। এমনই একটি গ্রুপ মাইলস্টোন স্কুলের ২০২৩ বর্ষের এসএসসি শিক্ষার্থীরা। তারা ৭ বন্ধু উত্তরা দিয়াবাড়ি মেট্রো স্টেশনে এসেছেন। এ প্রজন্মের হওয়ায় তাদের কেউ ব্লগ করছিলেন, কেউ আবার ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন।

তাদেরই একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী ইফতেখার সিফাত বাংলানিউজকে বলেন, মেট্রোতে অনেকে প্রয়োজনে ভ্রমণ করছে। তবে আমরা শুধু দেখতে এসেছি। মেট্রোরেল কেমন হয়েছে, এখানে কেমন সুবিধা পাওয়া যায় তা দেখতে আসা। যেহেতু প্রথমবার আসলাম তাই স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ছবি তুলছি এবং বন্ধুরা ব্লগ করছে। তবে স্টেশনে ময়লা ফেলার জন্য ডাস্টবিন দেখতে পাচ্ছি না। এত বড় স্টেশনে অন্তত কিছু হলেও ডাস্টবিন রাখা দরকার ছিল বলে মনে করেন এই শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২
ইএসএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।