ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হাত নেই, পা দিয়ে লিখেই জিপিএ ৪.৫৭

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩
হাত নেই, পা দিয়ে লিখেই জিপিএ ৪.৫৭ হাবিবুর রহমান হাবিব

রাজবাড়ী: জন্মগতভাবেই দুটি হাত নেই। তবুও মনের জোরে প্রবল ইচ্ছে শক্তিতে ছোটবেলা থেকেই পা দিয়ে লিখে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন রাজবাড়ী জেলার হাবিবুর রহমান হাবিব (১৯)।

শারীরিক প্রতিবন্ধীকতা আটকে রাখতে পারেনি হাবিবের মেধা ও প্রতিভাকে। তাইতো হাত না থাকলেও পা দিয়ে লিখেই এবার আলিম (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সে।

হাবিবুর রহমান হাবিব রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হিমায়েতখালী গ্রামের ১নং ওয়ার্ডের দরিদ্র কৃষক আব্দুস সামাদের ছেলে। পা দিয়ে লিখেই পাংশার পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে এবারের আলিম পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এসব তথ্য জানান মাদরাসার অধ্যক্ষ সাঈদ আহম্মেদ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দারিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান হাবিবুর রহমান। চার ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় সে। বড় দুই বোনের বিয়ে হলেও পরিবারে রয়েছে আরও একটি ছোট বোন। সেও পড়াশোনা করে। জন্মগতভাবেই হাতবিহীন হাবিব। ছোট বেলায় বাবা-মা, চাচা ও পরিবারের অন্যদের অনুপ্রেরণায় পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করেন তিনি।

এরপর প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু করেন। শিক্ষা জীবনের প্রথম স্তরেই তিনি কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হিমায়েতখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পা দিয়ে লিখে পিএসসিতে ৪.৬৭ পয়েন্ট পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর শুরু হয় মাধ্যমিক শিক্ষা জীবনের দ্বিতীয় স্তর। পাংশা উপজেলার পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা থেকে জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪.৬১ পয়েন্ট পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে আর পেছন ফিরে না তাকিয়ে একই মাদরাসা থেকে ২০১৯ সালে দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.৬৩ পান।

হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, ছোট বেলা থেকেই তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। দুই হাত নেই। পা দিয়ে লিখেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে আজ তিনি আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। এ পর্যন্ত আসতে তাকে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে। নানান জন নানান কথা বলেছেন। কিন্তু তাতে কান দেননি তিনি, দমেও যাননি।  

এই শিক্ষার্থী বলেন, নিজের আত্মবিশ্বাস ও ইচ্ছাশক্তির কারণে আজ আমি এতদূর এসেছি। আমার ইচ্ছা ছিলো জিপিএ-৫ পাবো। কিন্তু জিপিএ ৪.৫৭ পেয়েছি। এতেই আমি খুশি। এখন আমার স্বপ্ন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি। পড়াশোনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। আমি একজন শিক্ষক হতে চাই। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।

পুঁইজোর সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সাঈদ আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, হাবিব কৃষক পরিবারের সন্তান। সে জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার দুই হাত নেই। সে পা দিয়ে লিখেই আলিম পরীক্ষায় অংশ নেয়। সে জিপিএ ৪.৫৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধীকতা তাকে আটকে রাখতে পারেনি। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে আজ সে এতদূর পর্যন্ত এসেছে। আমি তার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।