ঢাকা: ভারত সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করলে বাংলাদেশ অন্য কারো কাছে যাবে না - এমন মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, ভারত যদি বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ইনভেস্টমেন্ট করে তাহলে আমাদের অন্য কারো কাছে যেতে হয় না ইনভেস্টমেন্টের জন্য।
বুধবার (২৪ মে) রাজধানীর তেজগাঁও সড়ক ভবনের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কনফারেন্স হলে ‘বারৈয়ারহাট- হেঁয়াকো- রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, লাইন অফ ক্রেডিটের (এলওসি) মাধ্যমে বাংলাদেশে বেশ কিছু ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে এগিয়ে এসেছে ভারত। ‘বারৈয়ারহাট- হেঁয়াকো- রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন’ সেটাও এলওসি'র একটি প্রজেক্ট। একই সঙ্গে রামগড়ের মৈত্রী সেতু হয়ে গেছে। এর ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে সংযোগ বাড়বে। পাশাপাশি কক্সবাজার এয়ারপোর্টের বর্ধিতকরণের কাজ প্রায় শেষ দিকে। পাশাপাশি ঢাকাতেও তৃতীয় টার্মিনাল করা হয়েছে যা অক্টোবরের দিকে সফট ওপেনিং করার সম্ভাবনা আছে।
ব্যবসা-বাণিজ্যর দিক থেকে ভারত-বাংলাদেশ উভয়ের ভালো হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা যদি ভারতকে হোস্টাইল (প্রতিকূল) করার নীতি অব্যাহত রাখতাম তাহলে আমরা আরও পিছিয়ে যেতাম। আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই। বর্তমান পৃথিবীতে সম্পর্কের যে বাস্তবতা এবং সেখানে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের যেই সেতুবন্ধন তার ফলে ব্যবসা- বাণিজ্য, উন্নয়ন সবদিক থেকে উভয়েরই সুবিধা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে ভারতের যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হতো এখন তা করার কোনো সুযোগ নেই। পাশাপাশি ইন্ডিয়াও সেই সুযোগ দিচ্ছে না। আমাদের মতো তারাও (ভারত) এই ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতিতে অগ্রসর হচ্ছে। আজ সীমান্তে ক্রস বর্ডার টেরোরিজমের ফলে উভয় দেশের জন্য যতটা ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আসতো সেটা এখন আর হচ্ছে না। তবে দুই দেশের মধ্যে যদি মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয় তাহলে আমরা আর সামনে এগোতে পারব না। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য পিছিয়ে থাকবে।
সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নরেন্দ্র মোদি তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন তখন ভারতের পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন অনুমোদন হয়েছে। তখন কেউ এই বিষয়ে কোনো আপত্তি করেনি। ভারত সর্বসম্মতিক্রমে আমাদের সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করেছে। এটা একটা ঐতিহাসিক কাজ। আমরা যদি পারস্পরিক সম্পর্কের সংশয়ের দেয়ালটা না ভাঙতাম তাহলে কিন্তু এটা করা সম্ভব ছিল না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের কানেক্টিভিটির বন্ধন রচিত হয়েছিল। কিন্তু ৭৫ এর পরে থেকে দীর্ঘ ২১ বছরে সন্দেহ আর অবিশ্বাসের কারণে বাংলাদেশ এবং ভারতের কানেক্টিভিটিতে ছেদ পড়েছিল। আর এই ছেদ দূর হয়েছে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির দুর্দান্ত নেতৃত্বের কারণে। বর্তমানে ভারত বাংলাদেশের সেই ব্যবধান আমরা অনেকটা দূর করতে পেরেছি। তবে এখনো কিছু কিছু সমস্যা আমাদের মধ্যে আছে। আমি মনে করি আমাদের দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যদি বন্ধুত্বপূর্ণ থাকে এবং আলাপ আলোচনা আরও বিস্তৃতি ঘটে তাহলে যত সমস্যা আছে তা দূর হবে।
উল্লেখ্য, বারৈয়ারহাট- হেঁয়াকো- রামগড়" সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পটি ভারত সরকারের লাইন অফ ক্রেডিট (এলওসি-৩) এবং বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো ইসহাক।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানী লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক, ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম, ফটিকছড়ি চট্রগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ নাজিবুল বশর মাইজভান্ডারি প্রমূখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৩
ইএসএস/এসএএইচ