ঢাকা: দেশের ১২টি জেলা ও ১২৩টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের একজন মানুষও অবহেলিত থাকবে না-বঙ্গবন্ধুর এ আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকার সবার জন্য বাড়ির ব্যবস্থা করে যাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
বুধবার (৯ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ হাজার ১০১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের কাছে জমিসহ বাড়ি হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন এবং ১২টি জেলার সব উপজেলাসহ মোট ১২৩টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তিনটি গৃহনির্মাণ স্থল নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, পাবনার বেড়া এবং খুলনার তেরখাদা উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এসব উপজেলার প্রত্যেক ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে দুই কাঠা করে জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে। এসব ঘরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার, সেই অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জীবন জীবিকার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। কাজেই এসব জেলা-উপজেলাকে আমি আজ ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত উন্নত জেলা-উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করছি। জাতির পিতা এ দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। দেশে একটি মানুষও অবহেলিত থাকবে না-এটাই তার আকাঙ্ক্ষা ছিল, আমরা তার সেই আকাঙ্ক্ষাটাই পূরণ করছি।
প্রত্যেকের জীবন মান আরও উন্নত হবে, জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। আমরা জনগণের জন্য কাজ করি, আমি জানি আমাদের একটি বিরোধী দল আছে, যারা মানুষ খুন করা, অগ্নিসন্ত্রাস, বাসে আগুন, রেলে আগুন দেওয়া এবং সাধারণ মানুষকে হত্যা করা- এ ধরনের কাজই করে। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সমমনা দলগুলো দিনের পর দিন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। মানুষ ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়েছে। ২০১৪ সালে আমরা যখন জনগণের ভোট নিয়ে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসি, সেই সময় এ বিএনপি-জামায়াত, যে সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, গুলি ছাড়া আর কিছুই বোঝে না, তারা সেভাবেই মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। অগ্নি সন্ত্রাস করেছে, তিন হাজার ৮০০ মানুষকে তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন মৃত্যুবরণ করেছে। কাজেই মানুষের জন্য তাদের কোনো চিন্তা নেই। ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি, লুটপাট, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করা, অর্থ চোরাকারবারি- এ কাজগুলোই তারা করে গেছে এবং এখনও মানুষকে তারা জিম্মি করে নানাভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। আর ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একটি স্থিতিশীল অবস্থা, সব বাধা অতিক্রম করে, একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অন্যদিকে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করে জনগণের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পথে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে উন্নয়শীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। দারিদ্রের হার ১৮ ভাগ এবং হতদরিদ্র ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাআল্লাহ এ দেশে আর কোনো হতদরিদ্র থাকবে না। প্রত্যেকের জন্য অন্তত একটু জমি, ঘর এবং জীবন জীবিকার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি, করে দেব। আমি শুধু এটুকু বলব, আস্থা ও বিশ্বাস রাখবেন, এক টানা সরকারে আছি বলেই আজ ভূমিহীনদের ঘর করে দেওয়া থেকে শুরু করে শিক্ষা, শতভাগ বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট উন্নত করা সব করে দিচ্ছি, করতে পারছি। এদেশের মানুষ নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজ আপনারা ঘর পেলেন, জীবন জীবিকার সুযোগ পেলেন, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় তিনি যারা ভূমিহীনদের ঘর করে দেওয়ার কাজে যুক্ত ছিলেন, তাদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, কৃতজ্ঞতা জানাই, এদেশের মানুষের প্রতি, যারা আমার প্রতি আস্থা রেখেছেন, বিশ্বাস রেখেছেন, আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবেগ জড়ানো কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের জন্যই জীবনটা উৎসর্গ করেছেন, সেই সঙ্গে আমার মাও। গৃহহীন মানুষগুলো ঘর পাবে, তারা সুন্দর জীবন পাবে, এটা আমার বাবার জীবনের স্বপ্ন ছিল। তিনি সব সময়ই বলতেন, আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে আর সেই জন্যই আমি প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। জিয়াউর রহামন যে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, নিজেকে নিজে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন। খুনি মোস্তাক, বাংলাদেশের আরেক মীর জাফর আমার বাবার সঙ্গে বেইমানি করে তাকে হত্যা করে, তাকে সহায়তা করে জিয়াউর রহমান। পরে তাকে সরিয়ে দিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। খুনিদের বিচার হবে না, সেই আইন করে। বাংলাদেশের যে কোনো একজন নাগরিক বিচার পাবে, কিন্তু আমাদের সে অধিকার ছিল না। আমরা বিচার চাইতে পারতাম না, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ পর্যন্ত ৩৩৪ উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হলো। এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭টি পরিবারকে ঘর দিয়ে জীবন জীবিকার পথ করে দেওয়া হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জানান। যে ১২টি জেলার সব উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত হলো, সে জেলাগুলো হলো- মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ, শেরপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, পিরোজপুর, ঝালকাঠি।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২৩
এসকে/এসআই