ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মেহেরপুরের হাসপাতালে শয্যার চেয়ে রোগী বেশি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
মেহেরপুরের হাসপাতালে শয্যার চেয়ে রোগী বেশি

মেহেরপুর: জেলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জ্বর-সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ প্রতিদিনই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি হওয়ায় হাসপাতালগুলোর প্রবেশ পথ, মেঝে, টয়লেটের সামনে এমনকি সিঁড়ির ওপর সেবা নিচ্ছেন রোগীরা।

মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার জানিয়েছেন, চলতি মাদের এক তারিখ থেকে জ্বর-সর্দি, কাশি নিয়ে ৯০৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৫৬ জন, নারী ২৮৫ ও শিশু রোগীর সংখ্যা ৩৬২।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলার বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে ১ হাজারের বেশি নারী ও শিশু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ায় বৃদ্ধ নারী ও শিশুরা সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় এক সপ্তাহ ব্যবধানে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা।

অভিভাবকেরা বলছেন, জ্বর-সর্দি কাশিতে আক্রান্ত শিশুদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়ার পর, হাসপাতালে ভর্তি করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। আবার হাসপাতালে এসে জায়গা পাওয়াটাও কঠিন যাচ্ছে। তাই মেঝেতে কিংবা সিঁড়ির ওপর- যেখানে জায়গা হচ্ছে সেখানে থেকেই ভালো চিকিৎসার আশায় রোগী ভর্তি করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সকালে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, শয্যা সংখ্যার চেয়ে বেশি হওয়ায় কয়েকজন রোগীকে রাখা হয়েছে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের প্রবেশ পথের মেঝে। কাউকে সিঁড়ির ওপর আবার কাউকে টয়লেটের প্রবেশ পথে।

এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার ঝাঁঝাঁ গ্রামের ফাকের আলী, নওদাপাড়া গ্রামের জরিনা খাতুন, বুড়িপোতা গ্রামের সুন্দরী খাতুনসহ প্রায় শতাধিক রোগীকে সিঁড়ির নিচে ও ডেঙ্গু ওয়ার্ডের পথে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

তাদের মধ্যে কেউ প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে, কারও ব্যাপক মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া। হাসপাতালে শয্যা না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই তারা সিঁড়ির ওপর বা টয়লেটের সামনে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

১ বছরের শিশু হাদিছা খাতুন, তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন মা রহিমা খাতুন। তিনি জানান, হাদিছার ঠাণ্ডা লেগেছে এক সপ্তাহের বেশি হয়েছে। গ্রামের ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করিয়েছেন; কিন্তু কোনো পরিবর্তনে নেই। যে কারণে বুধবার তিনি মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। চিকিৎসকরা বলছেন কয়েকদিন থাকতে হবে। কিন্তু মেয়েকে ভর্তি রাখার জন্য শয্যা পাননি। তাই করিডোরের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা করাচ্ছেন।

সরকারি হাসপাতালগুলোয় শয্যা সংকটে ভুক্তভোগী অনেকেই। তাদের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার জন্য সরকার তাদের শয্যা সংখ্যা বাড়ায় না।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আব্দুল্লাহ আল মারুফ শিশুদের রোগ সম্পর্কে বলেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে বাচ্চাদের গরম কাপড় পরালে অনেক সময় তাদের বেশি ঘাম হচ্ছে। আবার এ ঘাম শরীরেই শুকিয়ে যাচ্ছে। রাতের বেলায় ফ্যান চালিয়ে রাখলে সেটি আবার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। এতে শিশুরা বেশি ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সংকট কিছুটা আছে। তবে শিশুদের পরিবারকে সতর্ক থাকতে হবে।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. মোখলেচুর রহমান বলেন, এখানে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বহু রোগী ভর্তি আছেন। তাদের সেবার কোনো কমতি হচ্ছে না। আমাদের শয্যার চেয়ে বেশি রোগী হয়েছে। আরও ভর্তি হচ্ছে। জায়গা নেই, শয্যায় হচ্ছে না- যে কারণে মেঝেতে বা সিঁড়িতে রাখতে বাধ্য হচ্ছি। তবে, ওষুধের কোনো কমতি নেই। আমাদের চিকিৎসক-নার্সরা সবাই রোগীদের সেবায় অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।