ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ডিএমপিসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সিম নম্বর ক্লোন, প্রতারণা করে গ্রেপ্তার ১

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩
ডিএমপিসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সিম নম্বর ক্লোন, প্রতারণা করে গ্রেপ্তার ১

ঢাকা: ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর ক্লোন করে প্রতারণার অভিযোগে ইমরান হোসেন হীরা নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনের সিম নম্বর ক্লোন করে প্রতারণা করে আসছিলেন ইমরান হোসেন হীরা।

সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপির ডিবি কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, গত শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইমরানকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

এক প্রতারক ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের (অ্যাডমিন) সরকারি নম্বর ক্লোন করে মতিঝিল থানার ডিউটি অফিসারের মোবাইল নম্বরে ফোন দেয়। এরপর নিজেকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) হিসেবে পরিচয় দেয়। পরে একটি অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় নিয়ে আসা দুজন ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চায় ওই প্রতারক। তাদের কেন থানায় আনা হয়েছে সে কারণও জানতে চায় সে। এরপর তাদের দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

এরপর প্রতারক ওই দুই ব্যক্তিকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য তাদের কাছে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে প্রতারক তাদের বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেয়। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের হয়।

হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তি একজন পেশাদার প্রতারক। সে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী। তার বিভিন্ন অ্যাপস সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রয়েছে। সে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নম্বর ক্লোন করে অনুরূপ নম্বর তৈরি করার লক্ষ্যে ইন্টারনেট থেকে বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে। একটি বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও দেশের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারের সরকারি নম্বর ক্লোন করে সে। এরপর থানায় ওসি ও ডিউটি অফিসারের নম্বরে ফোন করে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে অনৈতিক তদবির করতে। এমনকি কৌশলে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের নম্বর নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে অর্থ দাবি করত। গ্রেপ্তার ইমরানের বিরুদ্ধে দেশের একাধিক থানায় মামলা রয়েছে।

ডিএমপির ডিবি প্রধান বলেন, প্রতারক ইমরান সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সরকারি নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করত। ইউএনও ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার নম্বর ক্লোন করে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে ফোন করে এলাকার রাস্তা নির্মাণের কাজ বরাদ্দ হয়েছে মর্মে সরকারি ফি-বাবদ বিভিন্ন অঙ্কের টাকা জমা দিতে বলত। এরপর চেয়ারম্যান ও মেম্বার সরল বিশ্বাসে প্রতারককে টাকা প্রেরণ করত।

গ্রেপ্তার ইমরানকে মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলায় আজ আদালতে প্রেরণ করা হয়।

এ ধরণের প্রতারণা এড়াতে গোয়েন্দা- সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশও করেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। সেগুলো হলো-

১. আপনার নম্বরে সন্দেহজনক কল এলে বা অনৈতিক প্রস্তাব আসলে অর্থাৎ ক্লোনকৃত নম্বর থেকে কল এলে পুনরায় সেই নম্বরে কল করে নিশ্চিত হোন। বাংলাদেশের সকল মোবাইল নম্বরের কান্ট্রি কোড+৮৮, ক্লোনকৃত নম্বর +৩৮, +১, +৮৮৮, +০৮ ইত্যাদি সম্বলিত থাকে।
২. কোনো উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার বা অন্য কোন সরকারি কর্মকর্তার নম্বরের প্রথমে +৮৮ এর পরিবর্তে +৩৮,+১, +৮৮৮ ইত্যাদি নম্বর হতে কল এলে ইনকামিং নম্বরটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে যোগাযোগ করবেন।
৩. এ ধরনের প্রতারণার শিকার হলে পুলিশকে অবহিত করুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩
এসজেএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।