ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার ফারুকের নামে দুদকে অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৪
৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার ফারুকের নামে দুদকে অভিযোগ

টাঙ্গাইল: পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে তিন হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ এনে আইনগত ব্যবস্থা চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করা হয়েছে।  

রোববার (২৮ জুলাই) দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ে চেয়ারম্যান বরাবর এ আবেদন করা হয়।

খন্দকার গোলাম ফারুক টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর উপজেলার ঘাটান্দী এলাকার মৃত খন্দকার হায়দার আলীর ছেলে।

অভিযোগে জানা যায়, গোলাম ফারুক চাকরিজীবনে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে সারা দেশ থেকে এমনকি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। গোলাম ফারুক বাংলাদেশের নাগরিক, সেই সঙ্গে তার রয়েছে আমেরিকারও গ্রিন কার্ড।  

সাবেক ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের স্ত্রীর ভাই-বোনেরা আমেরিকার নাগরিক। তারা স্থায়ীভাবে সেখানেই বসবাস করেন।

গোলাম ফারুক নিকট আত্মীয়দের মাধ্যমে তার অবৈধ আড়াই হাজার কোটি টাকা আমেরিকায় পাচার করেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ ও নগদ টাকা রয়েছে তার। কৌশলগত কারণে এ সম্পদ ও নগদ টাকা নিকট আত্মীয়, স্বজনদের নামে এবং বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে।  

এর মধ্যে দুর্নীতির টাকার অংশ বিশেষ দিয়ে বাবা খন্দকার হায়দার আলীর বাড়িতে তিনতলা আধুনিক ভবন ও কয়েক বিঘা জমিতে ঘাটান্দী আলহাজ খন্দকার হায়দার আলী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় করেছেন তিনি। আলহাজ্ব খন্দকার হায়দার আলী স্মৃতি কল্যাণ সংস্থাও রয়েছে। তার আত্মীয় মো. ইসমাইল খন্দকার একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তার নামে রয়েছে খিলক্ষেতে একটি ফ্ল্যাট, যার দাম এক কোটি ২০ লাখ টাকা। নিজ এলাকায় প্রায় তিন কোটি টাকার জমি কিনে বাড়ি করেছেন। খন্দকার মিশুর নামে রয়েছে ভুঞাপুরে তিনতলা বাড়ি। যার মূল্য জমিসহ চার কোটি টাকা। খন্দকার আশরাফকেও ২০ লাখ টাকা দিয়ে একটি বাস কিনে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে। এছাড়া কোটি টাক খরচ করে ‘খন্দকার বাড়ি’ নামে একটি বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন তিনি।  

ভুঞাপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র খন্দকার জাহিদের পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের বাড়ি, চারটি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার, একটি ইটভাটা, ভুঞাপুরে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার জমি এবং ঢাকায় এক কোটি ২৫ লাখ টাকার ফ্ল্যাট রয়েছে। এ প্যানেল মেয়র খন্দকার ফারুকের একমাত্র হাতিয়ার। তার নামে এবং স্ত্রীর নামে প্রায় ৫০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ এবং নগদ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রেখেছেন খন্দকার গোলাম ফারুক।

সাবেক ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকরা চার ভাই। তার ভাইয়েরা হলেন খন্দকার হাবিবুর রহমান সেলিম, খন্দকার সুরুজ, খন্দকার ফিরোজ ওরফে কালু।  

খন্দকার হাবিবুর রহমান সেলিমের নামে এবং তার স্ত্রীর নামে প্রায় ৩০ কোটি টাকার জমি রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নগদ ৫০ লাখ টাকা জমা রেখেছেন। ভুঞাপুর বাসস্ট্যান্ডে খন্দকার সুরুজের রয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকার মোটর পার্টসের দোকান। সুরুজ এবং তার স্ত্রীর নামে ২৫ কোটি টাকার জমি রয়েছে। তাদের বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে কোটি টাকা। খন্দকার ফিরোজ ওরফে কালুর নামে দুই কোটি টাকার জমি রয়েছে। তার একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। খন্দকার গোলাম ফারুকের ছোট বোনের স্বামী মো. বজলুর রশিদ খান চুন্নু মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ। তার নামে ময়মনসিংহ শহরে একটি বাড়ি, মধুপুরে একটি বাড়ি, টাঙ্গাইল শহরে একটি বাড়ি রয়েছে। তার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে রয়েছে দুই কোটি টাকা।  

১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনে এসি হিসেবে যোগদান করে বিভিন্ন আভিযানের মাধ্যমে অপরাধ দমনের নামে প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন গোলাম ফারুক। এরপর ২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে ১৫০ কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেন। রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। ডিএমপি কমিশনার থাকার সময় চাকরির শেষ সময়ে ব্যাপক অবৈধ ক্ষমতা খাটিয়ে ১৪৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। যার মধ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকা আমেরিকায় পাচার করেছেন। বাকি ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে সাবেক ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের স্ত্রী শারমীন আক্তার খানের নামে জমি, বাসি টাকা কেনা হয়েছে। এছাড়া তার একাধিক অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা রয়েছে। বিশেষ করে ময়মনসিংহে তার স্ত্রী এবং নিজের নামে প্রচুর জমি রয়েছে।  

অভিযোগের বিষয়ে খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছে- এ বিষয়ে তার কাছে জিজ্ঞেস করেন। আর আমার বিরুদ্ধে যে হত্যা মামলা করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।