ঢাকা, সোমবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩১, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

পাইকগাছার দুর্গতদের দুর্ভোগ সীমাহীন

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪
পাইকগাছার দুর্গতদের দুর্ভোগ সীমাহীন

খুলনা: পানি কমার পর বেড়িবাঁধ থেকে বাড়ি ফিরেছেন কেউ কেউ। কিন্তু বাড়িতে থাকার মতো অবস্থা নেই।

চারদিকে শুধু কাঁদা। মাটির দেওয়ালগুলো ভেঙে গেছে। নড়বনে খুঁটি। চুলা জ্বালানোর মতো অবস্থা নেই। ঘরের সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। গ্রামের পানিবন্দি মানুষদের ঘরে নেই খাবার, হাতে নেই টাকা, মাঠে নেই কাজ। সব মিলিয়ে পানি কমলেও দুর্ভোগ বাড়ছে খুলনার পাইকগাছার দুর্গত এলাকায়।

পাইকগাছার দেলুটির কালিনগরের ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করার পর বাড়ি ফিরে বসত ভিটার এমন অবস্থা দেখেন দুর্গত এলাকার বাসিন্দারা। এর আগে ২২ আগস্ট পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের কালিনগর এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙে ২২ নম্বর পোল্ডারের ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়। ২৯ আগস্ট এলাকার হাজার হাজার মানুষ নিজেদের চেষ্টায় বাঁধ মেরামত কাজ শেষ করেন।

পানিবন্দী হয়ে পড়ায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয় দুর্গত এলাকায়। সুপেয় পানির চরম সংকটসহ চরম দুর্ভোগে পড়েন পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ। প্রয়োজনীয় আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় ওয়াপদার বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেন ক্ষতিগ্রস্ত শত শত পরিবার।

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে পাইকগাছার হরিণখোলা গ্রামের কালীপদ মিস্ত্রী বলেন, বাড়ির উঠানে এখনও পানি। ঘর ভেঙে গেছে। ভেঙে যাওয়া বাড়িঘর ঠিক করার মতো সামর্থ্য আমার নেই। বউ বাচ্চা নিয়ে বাঁধের রাস্তায় আছি। হয়তো আমার আর বাড়ি ফেরা হবে না। অসুস্থতার কারণে কাজ কামও করতে পারি না। মানুষ ত্রাণ দেয় তাই রাস্তায় বসে খেয়ে বেঁচে আছি। আমার মতো শত শত পরিবার এখনও বাড়ি ফিরতে পারেনি।

নোয়াই গ্রামের গৃহবধূ সুখমনি বলেন, এত বড় বন্যা আগে দেখিনি। আমার দুটো বড় ঘর একটা রান্নাঘর এমনকি খুপি ভেঙে গেছে। আর এখন রাস্তায় পড়ে আছি। ঘরের ভেতর নৌকা নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। সবকিছু ভেঙে গেছে। কিছু তুলতে পারিসি। আর সব ভাইসে গেছে।

একই গ্রামের মো. আব্দুল মল্লিক বলেন, আমাদের থাকার খুব কষ্ট। বাড়িঘরে থাকার কোনো জায়গা নেই। রাস্তার ওপর তাঁবু টাঙিয়ে আছি। আমরা ছেলেপেলে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। না খেয়ে আছি রান্না করার কোনো জায়গা নেই। আমাদের খুব দুঃখজনক অবস্থা। আমাদের বাড়ি ঘর সব ভেঙে গেছে। আমরা চাই স্থায়ী বেড়িবাঁধ। আর যেন সুস্থ ভাবে থাকতে পারি এজন্য একটু ভালো ঘরদোর।

কালিনগর গ্রামের মনিরুল ইসলাম নামের অপর একজন বলেন, বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ডোকা থেকে তারপর থেকে পলিথিন টাঙিয়ে রাস্তায় বসবাস করছি। আমাদের একটাই দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জোয়ারের পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি সাধারণ মানুষের। পানি নামতে শুরু করায় রাস্তাঘাটসহ ঘর বাড়িতে ক্ষত ফুটে উঠছে। অনেক কষ্টে বাড়ি ফিরে পড়তে হচ্ছে আরেক ভোগান্তিতে। শিশু খাদ্য, গোখাদ্য ও শুকনা খাবার আর বিশুদ্ধ পানির সংকট ভোগান্তিতে যোগ করছে নতুন মাত্রা। শিগগিরই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরছে না এসব এলাকা।

দুর্গত এলাকা পরিদর্শন শেষে নাগরিক উদ্যোগের সাবেক খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মানিক দাস বাংলানিউজকে বলেন, দুর্গত এলাকার মানুষদের কষ্ট অসহনীয়। বাড়ি ঘর ছেড়ে রাস্তায় উঠেছেন, তবুও রক্ষা নেই বৃষ্টির কারণে। ধনী গরিব সবাই একাকার। প্রচুর মানুষ ব্যক্তিগতভাবে, সাংগঠনিকভাবে তাদের সহযোগিতা দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন। কয়জনকে দেবে? গাড়ি কিংবা ট্রলার থেকে মাল নামাতে দেরি আছে, ফুরাতে দেরি নাই। হাতের ওপর হাত, কে পাবে, কে নেবে এমন অবস্থা। অনেক জায়গায় কাড়াকাড়িও চোখে পড়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর এসব এলাকার মানুষরা পানিবাহিত রোগ জীবাণুসহ বিভিন্ন সমস্যায় প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হচ্ছেন। যা মোকাবিলা করার জন্য তাদের স্থানীয়ভাবে সক্ষমতা নাই। সেগুলো কীভাবে করা যায় সেটি সবাই মিলে ভাবা একান্ত অপরিহার্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪
এমআরএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।