ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পরীক্ষার হলে ডিউটি দিতে যাওয়ার সময় সড়কে ঝরল প্রভাষকের প্রাণ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২৪
পরীক্ষার হলে ডিউটি দিতে যাওয়ার সময় সড়কে ঝরল প্রভাষকের প্রাণ

নরসিংদী: নরসিংদী সরকারি মহিলা কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক আবু বকর সিদ্দিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পরীক্ষার ডিউটি দিতে সিএনজি যোগে কলেজের উদ্দেশে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় নরসিংদীর শিবপুরের ইটাখোলা-মঠখলা আঞ্চলিক সড়কের উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের পচাঁরবাড়ির নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় ট্রাক ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই সিএনজিতে থাকা চালকসহ ৬ জনই মারা যান।

নিহতের ভাতিজা ইমরান খন্দকার বলেন, কাকা কলেজের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। পরে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুর খবর পাই। তার ৫ বছর ও আড়াই বছর বয়সী দুইটি ছেলে রয়েছে। পরিবার এখন তাকে হারিয়ে শোকে কাতর। আমরা কলেজ কতৃর্পক্ষের পরামর্শে মরদেহের ময়না তদন্ত করা হচ্ছে। পরবর্তীতে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাক ও অটোরিকশা জব্দ করেছে পুলিশ।  মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। বেপরোয়া গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

নিহতরা হলেন- শিবপুর উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের বৈলাব গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদ ফকিরের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (৪০), সাতপাড়া গ্রামের রহি উদ্দিনের ছেলে সিএনজি চালক শাহিন মিয়া (৩৫), মনোহরদী উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের চকবগাদী গ্রামের সমির উদ্দিনের মেয়ে মারুফা বেগম (২৩), রায়পুরা উপজেলার মির্জাচর গ্রামের দানিছ মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া (৫৫), তার স্ত্রী নয়নতারা (৫০) এবং একই উপজেলার মির্জারচর এলাকার মোস্তফা মিয়া (৪৮)।

তাদের মধ্যে নিহত আবু বকর ছিদ্দিক নরসিংদী সরকারি মহিলা কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক। মারুফা শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী। ফারুক ও নয়নতারা মারুফার হবু শ্বশুর-শাশুড়ি।

নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার গোতাশিয়া ইউনিয়নের চকবগাদী গ্রামের মারুফা বেগমের সঙ্গে রায়পুরা উপজেলার মির্জাচর গ্রামের আজিজুল ইসলামের বিয়ে নির্ধারণ করা হয়।

আজিজুল সৌদি আরব প্রবাসী হওয়ায় দেশে আসলে অনুষ্ঠান করে তাদের বিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। এরমধ্যে দুই পরিবারের মাঝে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠে। দুই পরিবারের মধ্যে যাওয়া আসা হতে থাকে। আজিজুলের বাবা মা হবু বউকে তাদের বাড়ির এক বিয়ের অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার জন্য মারুফাদের বাড়িতে আসেন। সেখান থেকে মারুফাকে সিএনজি করে নিয়ে যাওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরে শিবপুর উপজেলার সিএন্ডবি থেকে ৫ জন যাত্রী নিয়ে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ইটাখোলার উদ্দেশে যাত্রা করে। সিএনজিটি উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের পচাঁরবাড়ির নামক স্থানে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা মনোহরদীগামী একটি সিমেন্টবাহী ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংর্ঘষ হয়। এতে সিএনজিটি দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই সিএনজির চালক ও ৫ যাত্রীসহ ৬ জন মারা যায়। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে শিবপুর ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধার অভিযান চালায়।

মারুফার ভগ্নিপতি আলতাফ হোসেন জানান, আজিজুল সৌদিআরব থাকায় সে দেশে আসলেই বিয়ের কথা ছিল। মারুফা আজকে হবু শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে দাওয়াতে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেল। তার আর বিয়ের পিঁড়িতে বসা হলো না। আমরা সন্ধ্যা সাতটায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে এসেছি।

আরও পড়ুন: নরসিংদীতে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ৬
                    হবু শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে সড়কে ঝরল মারুফার প্রাণ

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২৪
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।