ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ বৈশাখ ১৪৩২, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৬

সারাদেশ

প্রধান অভিযুক্ত প্রাক্তন ভিসি ও রেজিস্ট্রার

সিমেবিতে দুর্নীতির দায়ে ৫৮ জনের নামে চার্জশিট

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
সিমেবিতে দুর্নীতির দায়ে ৫৮ জনের নামে চার্জশিট

সিলেট: অঙ্কুরেই সুনাম বিনষ্ট হলো সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিমেবি)। শুরুতেই রন্দ্রে রন্দ্রে হয়েছে দুর্নীতি।

আর এই দুর্নীতির খলনায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী ও প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. নঈমুল হক চৌধুরী। তাদের এই অনিয়ম-দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তদন্তে বেরিয়ে এসেছে রকম ফের দুর্নীতি। ইউজিসির অনুমোদন ব্যতীত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, এডহক নিয়োগ ও মেয়াদ বৃদ্ধি, বয়স সংক্রান্ত যোগ্যতা লঙ্ঘন,  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেকে এডহকে নিয়োগকৃতদের বেতন-ভাতা,  বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়া নিয়োগ, শিক্ষা জীবনে তৃতীয় বিভাগ এবং ভিন্ন ডিগ্রিধারী হওয়া সত্ত্বেও বিধি লঙ্ঘন করে অবৈধ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব অনিয়মে জড়িত ৫৮ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে দুদক।  

সিন্ডিকেট ও ইউজিসির অনুমতি ব্যতিরেকে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) সাবেক উপাচার্য, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারসহ ৫৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে দুদক।  

অভিযোগপত্রে প্রাক্তন উপাচার্য ডা. মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী ও প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. নঈমুল হক চৌধুরী ছাড়াও উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উপ-পরিচালক ফাহিমা খানম, সহকারী রেজিস্ট্রার অঞ্জন দেবনাথ, সহকারী কলেজ পরিদর্শক মাইদুল ইসলাম চৌধুরী, সহকারী পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক মো. গোলাম সারোয়ার, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিলাল আহমদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি জেবুন্নেছার ছেলে সহকারী পরিচালক (বাজেট) শমসের রাসেল, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গাজী শাহ নেওয়াজের ছেলে গাজী মো. ফারাজ, প্রকিউরমেন্ট অফিসার আব্দুল মোমিনসহ মোট ৫৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে মামলায়।   

অভিযোগপত্রের তথ্য মতে, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম পায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। অভিযোগ আমলে নিয়ে ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর বিষয়টি তদন্ত করে প্রাক্তন ভিসি, রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পায়। মঞ্জুরী কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন অভিযোগ আকারে নিয়ে সাবেক ভিসি-রেজিস্ট্রারসহ ৫৮ জনের নামে আদালতে মামলা করে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, সিলেট।

মামলার অভিযোগপত্র অনুসারে সাবেক ভিসি ডা. মুর্শেদ ও রেজিস্ট্রার নঈমুল ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে সিন্ডিকেট ও ইউজিসির অনুমোদন ব্যতিরেকে কোনো প্রকার নিয়োগবিধি অনুসরণ না করে প্রার্থীদের বয়স ও যোগ্যতার ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়মের মাধ্যমে বিভিন্ন পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেন।

এডহক নিয়োগ ও মেয়াদ বৃদ্ধি: ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ২২০ জনকে সম্পূর্ণ অস্থায়ী অনধিক ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেন। পরে আরও ৬ মাস বৃদ্ধি করা হয়। এক বছর পূর্ণ হওয়ার পরও চাকরি নিয়মিত না করে পুনরায় এডহকে ৫ বার পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ভঙ্গ করেছেন প্রাক্তন ভিসি ও রেজিস্ট্রার।

সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে কর্মরত ২৩৯ জন। ইউজিসি কর্তৃক অনুমোদিত ১১২টি পদের বিপরীতে ৯৮ জন বেতনভুক্ত। ১৪১ জন নিয়োগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা ইউজিসির অনুমোদন নেওয়া হয়নি।  

বয়স সংক্রান্ত যোগ্যতা লঙ্ঘন: ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অবসরপ্রাপ্ত একজনসহ মোট ২৪০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বয়স অযোগ্য ৪৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন ছিল।

এ ছাড়া ১৮ জনের বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ, তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য না হলেও চারজনকে নিয়োগ, এডহকে নিয়োগের মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি ৩ জনকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১০ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে এবং ১৪তম গ্রেড থেকে ১০তম গ্রেডে এবং দুই কর্মকর্তার সংশ্লিষ্ট পদের বিপরীতে চাহিত ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।  

দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-সহকারী পরিচালক তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসাইন ইমন সিলেটের মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

রোববার (২০ এপ্রিল) অভিযোগপত্র আদালতে দাখিলের এ তথ্য নিশ্চিত করেন দুদক সিলেট আদালতের কোর্ট পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় সিলেটের উপ-পরিচালক মো. জাবেদ হাবীবের কাছে ৫৮ জন কর্মকর্তার নামে মামলা করেন দুদকের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসাইন (ইমন)।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
এনইউ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।