ঢাকা: সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) নেদারল্যান্ডস রাজ্যের দূতাবাসের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) অডিটোরিয়ামে “অন্তর্ভূক্তিমূলক রাজনীতি: নারী ও তরুণ নেতৃত্বের অভিযাত্রা” শীর্ষক গোলটেবিল সংলাপের আয়োজন করে।
এ সংলাপে জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষাবিদ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সদস্যরা অংশ নেন।
সংলাপটির সভাপতিত্ব করেন সিজিএস-এর প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত জোরিস ভ্যান বোমেল এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান বদিউল আলম মজুমদার।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন: বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন; বিএনপি-এর আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরীন মুন্নী; বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগীয় আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সাবিকুন্নাহার মুন্নি; ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলুল করিম মারুফ; আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি; জাতীয় নাগরিক পার্টি-এর (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ; গণফোরাম-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী; জাতীয় পার্টি-এর মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী; গণ অধিকার পরিষদ-এর সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন; বাংলাদেশ জাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান; উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধ্যাপক ড. তানিয়া হক; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট-এর আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট-এর ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর কার্যকরী সদস্য হেমা চাকমা; বাংলাদেশ এলায়েন্স ফর উইমেন লিডারশিপ এর নির্বাহী পরিচালক নাসিম ফেরদৌস; এন ডি এম-এর মহাসচিব মমিনুল আমিন।
সিজিএস-এর “গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারী ও তরুণদের সম্পৃক্ততা”- শীর্ষক প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়।
এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য দেশের রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের জন্য একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যেখানে তারা নিজ নিজ মতামত ও স্বেচ্ছায় প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করতে পারেন।
সংলাপটি শেষ হয় “অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রগঠনের ঘোষণা”-তে স্বাক্ষরের মাধ্যমে, যেখানে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ব্যতিত অন্য সকল অংশগ্রহণকারীরা নারীদের ও তরুণদের রাজনৈতিক নেতৃত্বে অধিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে যৌথ নীতি ও ব্যক্তিগত অঙ্গীকার প্রকাশ করেন।
আলোচনায় সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে নারী ও তরুণদের রূপান্তরমূলক ভূমিকাকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। অংশগ্রহণকারীরা জোর দিয়ে বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গণতান্ত্রিক বৈধতা এবং বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি শাসন কাঠামোকে শক্তিশালী করে।
জিল্লুর রহমান বলেন, আন্দোলনের সময় যে নারী ও তরুণরা মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন তার মধ্যে কিছু তরুণ সামনে এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ বা মেয়েরা যারা পুলিশের ট্যাংকের সামনে দাড়িয়েছিলো এই পরিবর্তন তাদেরকে শেষ পর্যন্ত হতাশ করেছেন বলে আমার মনে হয়। বাংলাদেশের মূল শক্তি তরুণরা, বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আছে। পরিবর্তনের এক বছর হয়েছে কিন্তু ফলাফল আশাব্যাঞ্জক নয়। রাজনৈতিক দলে নারীদের অংশগ্রহণ কম, আমাদের সহনশীলতা খুব কমে গিয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমরা নারী ও তরুণদেরকে দেখা যায় না। আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রগঠনের ঘোষণাপত্র আপনাদেরকে দিয়েছি। কিন্তু এই ঘোষণার সার্থকতা নির্ভর করে রাজনৈতিক দলের ওপর।
রাষ্ট্রদূত জোরিস ভ্যান বোমেল বলেন, “অন্তর্ভুক্তি” এবং “সংলাপ” এই দুটি শব্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, সামনে এগিয়ে যেতে হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া অপরিহার্য। তবে এখানে বিষয়টি তরুণদের নিয়ে। তরুণদের কর্মসংস্থান বলতে আমরা কী বুঝি? কী কী প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যার কারণে তরুণরা আমাদের প্রত্যাশামতো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জড়িত বা সম্পৃক্ত হচ্ছে না? আবার, নারীদের অন্তর্ভুক্তির কথা বলতে গেলে দেখা যায়, রাজনৈতিক কাঠামোতে নারীরা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি হয়রানির শিকার হন। সেক্ষেত্রে আমরা কোন কোন প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারি? একইভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও প্রশ্ন ওঠে। তাই “অন্তর্ভুক্তি” আমার মতে প্রথম কীওয়ার্ড এবং দ্বিতীয়টি হলো “সংলাপ”।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমি অনেক তরুণদের সঙ্গে কাজ করেছি ও করছি। ঐকমত্য কমিশনে নারীদের কথা আমি বলেছি। বিভিন্ন কারণে নারীরা প্রতিনিধিত্ব অবস্থানে আসতে পারে না। নারী পুষ্টিহীনতায় ভুগলে তার সন্তানও পুষ্টিহীনতায় ভুগবে। এবং সমাজেও এর প্রতিফলন থাকবে। ৩০ সেপ্টেম্বর কন্যা দিবস পালন করি। আমাদেরকে অনুসরণ করে জাতিসংঘ এটি পালন করে থাকে। নারীরা আমাদের বোঝা নয়। আমাদেরকে তাদের উপর বিনিয়োগ করতে হবে। আমরা নারীর আসন সংখ্যা বাড়াতে চাই। ১০০ আসন নারীদের জন্য হবে এবং এটি রোটেশন পদ্ধতিতে হবে। আমি মনে করি রোটেশনাল সিস্টেমটা হল ভাল পদ্ধতি।
পারভেজ করিম আব্বাসী বলেন, বাংলাদেশে অর্ধেকের বেশি হল নারী ও তরুণ। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামে বাংলাদেশের নারী এগিয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে। ধর্মের কারণে নারীরা পিছিয়ে আছে এমনটি বলা হয়। কিন্তু এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। আমি বলবো যেসব ধর্মে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আমাদের যে সামাজিক বাধাবিপত্তি আছে এগুলোকে খুঁজে বের করে সমাধানের পথে আগাতে হবে।
ফাহিমা নাসরিন মুন্নি বলেন, তরুণরা অসামান্য আত্মত্যাগ জুলাইয়ে করেছে। আমরা আর বৈষম্য দেখতে চাই না নারী বা তরুণদের প্রতি। নারীরা রাজনীতি করতে গেলে তাদেরকে শুনতে হয় যে তারা আসলেই রাজনীতি করতে পারবে কিনা? এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসতে সময় লাগবে। নারীদেরকে মানুষ হিসেবে দেখতে হবে, সম্মান দিতে হবে।
সাবিকুন্নাহার মুন্নি বলেন, আমি বলব নারীর অংশগ্রহন শুধু ক্ষমতায়ন নয়, একটি পোস্ট হোল্ড করার মধ্যে কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন বুঝবোনা। একজন নারী সমাজে কতটুকু মর্যাদা পাচ্ছে, কতটুকু অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, কতটুকু সমাজে রেস্পেক্টেড হচ্ছে এই বিষয়গুলা সামনে আসলে পজিটিভলি তখন আমরা বুঝবো নারীর উন্নয়ন হয়েছে। আমি চিন্তিত হতাম তরুণরা কই যাচ্ছে? কিন্তু আমি অবাক হয়েছি যে এই তরুণরাই একটি স্বৈরাচারীকে সরিয়ে দিয়েছে। নারীরা জুলাই আন্দোলনে সামনে এগিয়ে এসেছে। তারা তাদের সর্বোচ্চ দিয়েছে আন্দোলনে। নারীর অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়ন নয়। নারীদেরকে পলিসি মেকিং ও ডিসিশন মেকিং এ সুযোগ দেওয়া হয় না। এখানে তাদেরকে এগিয়ে আনতে হবে। আমাদের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা থাকতে হবে।
শেখ ফজলুল করিম মারুফ বলেন, আমাদের রাজনীতি কলুষিত। আমরা তরুণদেরকে ও নারীদেরকে এখানে টেনে এনে তাদেরকে কি কলুষিত করব কিনা? ইসলামে নারীদের চরিত্র হনন করলে কঠোর শাস্তির কথা বলা আছে। আমাদের বর্তমান রাজনীতি পাল্টে প্রতিপালনের রাজনীতি করতে হবে। তাহলে নারীরা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
নাসরিন সুলতানা মিলি বলেন, তাসনিম জারার জন্য আলাদা ডিগ্রেটরি টার্ম ছিল। নারীদের জন্য রাজনীতিতে সেইফ স্পেস তৈরি করে দিতে হবে। বিশেষ করে সরকারের। সাইবার বুলিং-এর সবচেয়ে বড় ভিক্টিম হল নারীরা। আমাদের আইন আছে কিন্তু এটির প্রয়োগ নেই। নারীদেরকে নমিনেশন দেওয়া হয় না। তাদেরকে এলাকাবাসীরা নমিনেশন দেয় না। কালো টাকার এক্সেস নারীদের নেই। এই এক্সেস বন্ধ করতে পারলে অনেক নারী প্রতিনিধি পাওয়া যাবে। আমাদের দেশে ভাল চাইল্ড কেয়ার নেই। এটি রাষ্ট্র তৈরি করে দিচ্ছে না। ঐকমত্য কমিশনে নারীর রিজার্ভ সিট থাকবে কি থাকবে না নাকি ডিরেক্ট সিট থাকেব সেটির সিদ্ধান্ত নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর পুরুষরা, সেখানে কোনো নারী নেই।
খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, গণতন্ত্রে সবার ভয়েস থাকে এবং সরকার কম্পেল্ড হয় তাদের ভয়েস শোনার জন্য। আমরা নারীদেরকে ভয়েসলেস বলা হয়। কিন্তু তাদের ভয়েস শুনার জন্য তাদেরকে আমরা সঠিক জায়গায় আনতে পারছি না। তরুণদেরকে এখন ছোট করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে তাদেরকে দেশ পরিচালনা করার দরকার নেই। জুলাই আন্দোলনে যারা স্বৈরাচার সরিয়েছিল। কিন্তু তাদেরকেই এখন দেশ পরিচালনা থেকে সরে দাঁড়াতে বলা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে স্মিয়ার ক্যাম্পেইন করা হচ্ছে।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে যত আন্দোলন হয়েছে সব জায়গায় নারী ও তরুণরা ছিল। ১০০ জন নারীর সরাসরি ভোটে থাকা উচিত। নারীরা আমদের সংসার চালাচ্ছে। তাহলে তারা কেন রাষ্ট্রীয় কাজে থাকতে পারবে না? আমরা নারীদেরকে ক্ষমতায়নে সাহায্য করি না। মানুষ হিসেবে নারীদেরকে আমরা সম্মান দিতে পারি না। ঐক্যমত্য কমিশনকে বলা হচ্ছে পুরুষ ক্লাব। এরা নারীদেরকে নিয়ে আলোচনা করছে। এতে সচেতন নারীরা নাখোশ হয়েছে।
শামীম হায়দার পাটওয়ারী বলেন, নারীরা অবশ্যই পিছিয়ে আছে। ৩০০ জন সিটের মধ্যে নারী ও তরুণদের সরাসরি ভোটে যায় খুব কম। ৩০০ সিট সরাসরি ভোট হবে। ১০০ সিট বা পরে ১০০ সিট ভোট হবে নারী। কিন্তু ভোটার হবে নারী - পুরুষ। স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার দুইজন হলে একজন নারী হবে। নারীদেরকে শিক্ষা দিতে হবে তাহলে তারা এগিয়ে থাকবে। বিপ্লবের পরপর তরুণরা চলে গিয়েছিল রাষ্ট্রের শীর্ষ পদে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন আমার নিয়োগকর্তা, আমার ডিজাইনার- এটি বলার ফলে রাষ্ট্রের সমস্ত দায় দায়িত্ব গুটিকয়েক তরুণদের দিয়ে দেয়া হয়েছে। সাথে আনুষঙ্গিক হয়েছে রাষ্ট্রের ব্যর্থতার দায়। তরুণরা কি কখনো এই ব্যর্থতার দায় নেয়ার জন্যে প্রস্তুত ছিলো অথবা তারা কেন এই ব্যর্থতার দায় নেবে?
মো. রাশেদ খান বলেন, এ সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে নাই। নারীরা যদি জুলাই আন্দোলনে না নামত তাহলে এই আন্দোলন সফল হত না। কিন্তু আন্দোলনের পর নারীদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ঐক্যমত্য কমিশনে নারী প্রতিনিধি নেই। রাজনৈতিক দলগুলোতে তরুণদেরকে নেওয়া হয় না। আন্দোলন করবে তরুণরা কিন্তু ফল ভোগ করবে রাজনৈতিক দলরা।
নাজমুল হক প্রধান বলেন, আমরা প্রতিহিংশার রাজনীতি থেকে বের হতে পারি নাই। এর মধ্যে কিভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি তৈরি হবে? আমি ইনক্লুসিভ বলতে বুঝাচ্ছি আমরা ১৮ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে একটা ফোর্স কে আমরা এত সহজভাবে পায়ে পিষে চুরমার করে দিবো এটা ভুল ধারণা। আমাদের নতুন করে কিছু চিন্তা ভাবনা করা উচিত, যেমন নির্বাচন, নারীর অধিকার তরুণদের অধিকার ইত্যাদি বিষয়গুলো মিলিয়ে দেখা উচিত। যদি এই চিন্তাগুলই জাতীয় জীবনের সাথে যুক্ত করতে পারি তবেই আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌছাতে পারব।
জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির আলোচনা অনেক যুগ ধরেই চলে আসছে। তরুণদের প্রতি জাজমেন্টাল চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। লিডারশিপ প্রসেসের মধ্যে তারুণ্য ও প্রজ্ঞার একটা সংমিশ্রণের প্রক্রিয়া বের করতে হবে এবং এটিই হবে ইনক্লুসিভনেস। যদি আমি ডেমোক্রেসির মঞ্চে দাড়িয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক কথাবার্তা বলার চেষ্টা করি তবে এরকম একটি প্রায়োগিক সমাধান বের করতে হবে, লিঙ্গের ব্যাপারেও তাই। নারী পুরুষের আলোচনা সব সময় শেষ হয় কোটা অথবা একধরনের সহানুভূতির মধ্যে শেষ হয়। নারী এবং সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
ড. তানিয়া হক বলেন, পারসেপশন টুওারডস উইমেন ইজ নেগেটিভ। রাজনীতি করবে পুরুষরা। ভাল নারীরা রাজনীতি করে না। অনলাইনে ডিজিটাল পেট্রিয়ারকি অনেক ভয়াবহভাবে বেড়েছে। আমাদের তরুণদের প্রতি বিশ্বাস নেই। নারীদের নিড নিয়ে গবেষণা করতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। পাওয়ার এক্সারসসাইজের জায়গা থেকেও বদলাতে হবে। পার্লামেন্টে জেন্ডার নিয়ে ট্রেনিং করাতে হবে।
শিহাব উদ্দিন খান বলেন, আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ৭১-এর সময়ের নারী ও তরুণদের আত্মত্যাগ। জুলাই আন্দোলনেও একইরকম। এই আন্দোলন সফল করার পিছনে তাদের অবদান অপিরিসীম। সামাজিক সমস্যার একটি স্টেকহোল্ডার হল নারী। তাদেরকে ছাড়া আগানো যাবে না। সংরক্ষিত নারী আসনে যোগ্য নারী আনা হয় না। দেখান হচ্ছে যে নারীদেরকে ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। জুলাই আন্দোলনের পর নারীরা এখন রাজনৈতিকভাবে অনেক সচেতন। গতানুগতিক রাজনীতি গত ৫৪ বছরে ফেইল হয়েছে। তরুণদের অংশগ্রহন করানোর মাধ্যমে ও তাদের মেধা বুদ্ধি ইতিবাচকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি তৈরির লক্ষ্যটা অর্জন করতে পারি।
রাশনা ইমাম বলেন, নারী ও তরুণ ট্রানফরমেটিভ রোল প্লে করেছে। জুলাই আন্দোলনে হাজার হাজার নারীরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু আন্দোলনের পরে তাদেরকে সাইড লাইন করে দেওয়া হয়েছে। আমদের দুইজন নারী প্রতিনিধী ছিল। কিন্তু তারা উপরের অবস্থানে ছিল বলে নিচের অবস্থানে নারীরা ভাল অবস্থানে থাকে না। নারীদেরকে এনকারেজ করতে চায় না। যেসব পরিবারে সম্পত্তি কম আছে তারা নারীদের উপর বিনিয়োগ করতে চায় না। নারীরা আমাদের দেশে নিরাপদ নয়। আইন অনেক আছে নারী নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। সংসদে সংরক্ষিত আসন নারীর অংশগ্রহণ কেবল টোকেনিজম।
হেমা চাকমা বলেন, আমরা কি আসলেই অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি করতে পারছি? চোরকে পিটিয়ে মেরে ফেলাকে নিয়ে তাকে সাম্প্রদায়িক নাম দেওয়া হয়। জুলাই আন্দোলনের পর আমরা অনেক আশাবাদী ছিলাম কিন্তু তার পরেই রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে চার জন আদিবাসীকে খুন করা হয়। নারীদের অংশগ্রহণ ডাকসুতে প্রথম প্রশ্ন আসে তার চরিত্র নিয়ে, পোশাক নিয়ে। কোন পার্টির বিরুদ্ধে কথা বললে সাইবার বুলিং-এর শিকার করা হয়। ডিসিশন ও পলিসি মেকিং-এ নারীদেরকে সরিয়ে রাখা হয়। আমি এই বাংলাদেশকে দেখে হতাশ হচ্ছি। আমাদের মধ্যে সহনশীলতা কমে গিয়েছে। কারোর মতের বিরুদ্ধে কথা বললে সেটা তারা নিতে পারে না।
নাসিম ফেরদৌস বলেন, নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন থাকতে হবে। নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য আছে। পুরুষ সবসময় নিজের কথা চিন্তা করে। নারী বা অন্য কেউ সেকেন্ডারি হয়ে জায়। এই চিন্তা বদলাতে হবে। নারী শিক্ষা ও ট্রেনিং-এর মাধ্যমে রাজনীতিতে এগিয়ে যেতে পারে। প্রান্তিক নারী যারা রাজনীতিতে আসতে কনফিডেন্স পায় না। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর এনশিউর করতে হবে। কিন্তু তারা উল্টা কাজ করে। তরুণদেরকে শিক্ষা জীবন থেকে ট্রেনিং দিতে হবে লিডারশিপ তৈরি করার জন্য। আমাদেরকে ট্রেনিং-এর উপর বেশি জোর দিতে হবে। এবং নারীদের প্রতি ধৈর্যশীল হতে হবে।
মমিনুল আমিন বলেন, নির্বাচনের সময় কোনো প্রার্থীর বয়স কম হলে তাদের স্কিল নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলা হয়। তারা দায়িত্ব নিতে পারবে কিনা। পুরুষ হয়ে একজন এমন সমস্যা ফেস করে থাকে। ক্লাইমেট বাজেটে তরুণদেরকে নেওয়া হয়নি। তরুণদেরকে চেঞ্জমেকার হিসেবে গড়ার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
টিআর/জেএইচ