ঢাকা, বুধবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৭

জাতীয়

ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ও যুদ্ধ শেষের নিশ্চয়তা চায় হামাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৪৬, অক্টোবর ৮, ২০২৫
ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ও যুদ্ধ শেষের নিশ্চয়তা চায় হামাস

গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ও যুদ্ধ সম্পূর্ণভাবে শেষ করার নিশ্চয়তা চায় হামাস। মিসরের শারম আল-শেখ শহরে দ্বিতীয় দিনের আলোচনা শেষে আল জাজিরাকে এ তথ্য জানিয়েছে তারা।

হামাস কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজার ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসন শেষ করা এবং ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা চান।

হোয়াইট হাউসে যুদ্ধ শুরুর দ্বিতীয় বার্ষিকীতে দেওয়া বক্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, গাজা ইস্যুতে একটি ‘বাস্তব চুক্তির সম্ভাবনা’ দেখা যাচ্ছে। শারম আল-শেখ শহরে আলোচনার পর তিনি এ কথা বলেন।

বুধবার থেকে আলোচনা অব্যাহত রাখতে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও মিসরে যোগ দিচ্ছেন।

এর আগে মঙ্গলবার হামাসসহ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন যৌথ এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা সব উপায়ে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখবে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অস্ত্র ত্যাগ করার অধিকার কারও নেই। এই বক্তব্য ট্রাম্পের পরিকল্পনায় থাকা হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাবের প্রতি এক ধরনের প্রত্যাখ্যান হিসেবে দেখা হচ্ছে।

হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ফাওজি বারহুম বলেছেন, তাদের আলোচকরা যুদ্ধের অবসান এবং গাজা থেকে ‘সম্পূর্ণভাবে দখলদার বাহিনীর প্রত্যাহার’ নিশ্চিত করতে চান। তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা অস্পষ্ট, যেখানে বলা হয়েছে হামাসের হাতে থাকা ৪৮ জন ইসরায়েলি বন্দিকে ফেরত দেওয়ার পর ধাপে ধাপে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে, যাদের মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবারের আলোচনার পর আল জাজিরাকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক হামাস কর্মকর্তা জানান, বন্দিমুক্তির প্রতিটি ধাপ গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে।

তিনি আরও জানান, আলোচনায় বন্দিমুক্তির সময়সূচি এবং সেনা প্রত্যাহারের মানচিত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হামাসের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, শেষ ইসরায়েলি বন্দির মুক্তির সময়ই ইসরায়েলের শেষ সৈন্যকে গাজা থেকে সরে যেতে হবে।

হামাসের শীর্ষ আলোচক খালিল আল-হাইয়া মিশরের সরকারি গণমাধ্যম ‘আল কাহেরা নিউজ’-কে বলেন, আমরা দখলদারদের এক মুহূর্তের জন্যও বিশ্বাস করি না।

তিনি বলেন, হামাস এমন ‘বাস্তব নিশ্চয়তা’ চায়, যা প্রমাণ করবে যুদ্ধ সত্যিই শেষ হবে এবং পুনরায় শুরু হবে না। তিনি ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেন, যে তারা এর আগে দুটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে এক বিবৃতিতে বলেন, গত দুই বছরের সংঘাত আমাদের অস্তিত্ব ও ভবিষ্যতের জন্য লড়াই।

তিনি বলেন, ইসরায়েল এখন ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মুহূর্তে’ আছে, যদিও তিনি সরাসরি শান্তি আলোচনার বিষয়ে কিছু বলেননি।

নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে—সব বন্দিকে ফেরানো, হামাসের শাসন নির্মূল, এবং গাজা যেন আর কখনও ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয় তা নিশ্চিত করা।

নমনীয় কৌশল

যদিও দুই পক্ষের মধ্যে মতভেদ রয়ে গেছে, তবু এই আলোচনা এখন পর্যন্ত যুদ্ধ শেষের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইসরায়েল ও হামাস উভয়েই ট্রাম্পের পরিকল্পনার অনেক দিককে সমর্থন দিয়েছে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, মধ্যস্থতাকারী কাতার, মিসর ও তুরস্ক আলোচনায় নমনীয় অবস্থান নিচ্ছে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী নতুন প্রস্তাব তৈরি করছে।

তিনি বলেন, আমরা পূর্বনির্ধারিত কোনো ধারণা নিয়ে আলোচনায় যাই না। আলোচনার মধ্য দিয়েই আমরা নতুন সমাধান তৈরি করছি, এখন সেটাই ঘটছে।

আল-আনসারি আল জাজিরাকে আরও বলেন, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান বিন জাসিম আল থানি বুধবার মিসরে আলোচনায় যোগ দেবেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনার উপস্থিত থাকবেন।

তিনি বলেন, কাতারের প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ প্রমাণ করে, মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

তবে কোনো চুক্তি হলেও প্রশ্ন থেকে যায়, গাজা কে পরিচালনা করবে, কে পুনর্গঠনের নেতৃত্ব দেবে এবং কে বিশাল পুনর্নির্মাণ ব্যয় বহন করবে।

ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু উভয়েই হামাসকে ভবিষ্যৎ শাসন কাঠামো থেকে বাদ দিয়েছেন। ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি প্রযুক্তিবিদ বা পেশাজীবীরা গাজার দৈনন্দিন প্রশাসন চালাবেন একটি আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তীকালীন সংস্থার অধীনে, যেটির নাম ‘বোর্ড অব পিস’। এটি তত্ত্বাবধান করবেন ট্রাম্প নিজে এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।

অন্যদিকে হামাসের ফাওজি বারহুম বলেছেন, তারা চান একটি ফিলিস্তিনি জাতীয় সংস্থার তত্ত্বাবধানে তাৎক্ষণিকভাবে পূর্ণ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হোক।

তিনি বলেন, যুদ্ধ শেষে হামাস গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসনে অংশ নেবে না।

ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত

তবে মিসরে আলোচনা চললেও ইসরায়েল গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে। মঙ্গলবার গাজা শহরের সাবরা ও তাল আল-হাওয়া এলাকায় এবং কাছের শাতি শরণার্থী ক্যাম্পের পথে ড্রোন ও যুদ্ধবিমান থেকে আক্রমণ চালানো হয়।

ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, মঙ্গলবার ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পুরো সংঘাতে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৬৬ হাজার ৬০০ ছাড়িয়েছে। গত শুক্রবার থেকে ইসরায়েলের হামলায় আরও ১০৪ জন নিহত হয়েছেন, সেদিন ট্রাম্প ইসরায়েলকে বোমা হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খুদারি মঙ্গলবার জানান, গাজার পূর্বাঞ্চলে এক শিশুকে মাথায় গুলি করা হয়েছে এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনুসে ছয়জন নিহত হয়েছেন।

তিনি বলেন, সবাই শান্তিচুক্তির অপেক্ষায়, আর বোমা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি ধ্বংস করছে সেই সব এলাকা, যেখানে ফিলিস্তিনিরা ভেবেছিল তারা ফিরে গিয়ে আবার জীবন গড়ে তুলবে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংঘাত পর্যবেক্ষক সংস্থা এসিএলইডি জানিয়েছে, গত দুই বছরে গাজায় ১১১১০টির বেশি বিমান ও ড্রোন হামলা এবং অন্তত ৬,২৫০ বার গোলাবর্ষণ বা আর্টিলারি আক্রমণ চালানো হয়েছে। গাজায় নিহতদের সংখ্যা গত দুই বছরে বিশ্বব্যাপী সংঘাতে নিহতের মোট সংখ্যার প্রায় ১৪ শতাংশ।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ চলাকালে এখন পর্যন্ত ১৭০১ জন চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন।

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।