সিলেট: রাস্তায় এলোপাতাড়ি রাখা যানবাহন। বিঘ্নিত হচ্ছে যানবাহন চলাচল।
এ পরিস্থিতি সৃষ্টির নেপথ্যে রাস্তা দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ পরিবহন স্ট্যান্ড।
এসব অবৈধ পরিবহণ স্ট্যান্ডের কারণেই নগরীর ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু কোর্ট পয়েন্টে এসেই সাধারণ মানুষের মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
শুধু কোর্ট পয়েন্টই নয়, নগরীতে যানজট সৃষ্টির জন্য এভাবে গড়ে ওঠা প্রায় অর্ধশত মাইক্রোবাস, হিউম্যান হলার, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ট্রাক স্ট্যান্ডকে দায়ী করা হচ্ছে।
অবৈধ এসব স্ট্যান্ড উচ্ছেদে খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষিত রয়েছে। সিটি করপোরেশন বা পুলিশ প্রশাসন কেউই স্ট্যান্ড উচ্ছেদে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। যদিও নগর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নগরীতে বৈধ কোনো স্ট্যান্ড নেই। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, স্ট্যান্ড উচ্ছেদে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
অনুসন্ধানে অভিযোগ পাওয়া গেছে, নগরের ভেতরে এসব পরিবহন স্ট্যান্ডের প্রকৃত মালিক সিটি করপোরেশন। সরকারের পালাবদলের সঙ্গে এসব স্ট্যান্ডের কর্তৃত্ব হাত বদল হয়। সব স্ট্যান্ড থেকে আয় করা অর্থ নেতাদের পাশাপাশি পুলিশসহ বিভিন্ন মহলের পকেটস্থ হয়।
সিলেট নগরীর চৌহাট্টা স্ট্যান্ড শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে অন্য স্ট্যান্ডগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণে। যানবাহন ভেদে বিভিন্ন হারে দৈনিক চাঁদা তুলেন নেতাদের প্রতিনিধিরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, সময়মতো চাঁদা না দিলে গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। অতীতে এমন ঘটনার নজির রয়েছে। এ দৃশ্য শুধু এখানেই নয়, পুরো নগরজুড়ে।
আগে অল্পকিছু কয়েকটি পরিবহণ স্ট্যান্ড থাকলেও এখন ব্যস্ততম নগরী সিলেটের সড়কের পাশে অবৈধ স্ট্যান্ডের সংখ্যা প্রায় অর্ধশত।
সরেজমিন দেখা গেছে, অর্থমন্ত্রীর সিলেটের বাসভবন নগরীর ধোপাদিঘির পাড় ও ওসমানী শিশু পার্ক সংলগ্ন রাস্তায় পরিবহন স্ট্যান্ড করা হয়েছে। আর সিলেটে সফররত ভিআইপিদের আবাসস্থল সার্কিট হাউসের সামনের সড়ক যেন ট্রাক টার্মিনাল।
সিলেট নগর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নগরীর ব্যস্ততম কোর্ট পয়েন্ট, সুবহানিঘাট, আম্বরখানা ও বিমানবন্দর সড়কে যাত্রী পরিবহনের সুবিধার্থে ১০টি করে অটোরিকশা দাঁড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়। এ নিয়ম উপেক্ষা করে সড়কের অর্ধেকটা দখলে নিয়ে করা হয়েছে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও হিউম্যান হলার স্ট্যান্ড।
এমনকি নগর ভবনের সামনের সড়কও এখন অটোরিকশা স্ট্যান্ড। এছাড়া নগরীর মেন্দিবাগ, চৌহাট্টা, নাইওরপুল-মিরাবাজার সড়ক, আম্বরখানা পয়েন্ট ও এয়ারপোর্ট সড়ক, দাড়িয়াপাড়া গলির মুখ, শাহী ঈদগাহ, টিলাগড়, ভার্তখলা ভূঁইয়ার পাম্পের সামনে, বাবনা পয়েন্ট, রেলগেট, কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সামনের সড়ক, মুক্তিযোদ্ধা চত্বর, হুমায়ন রশিদ চত্বর, সুবিদবাজার, মদিনা মার্কেট, ওসমানী মেডিকেলের সামনের সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তা জুড়ে বসানো হয়েছে মাইক্রোবাস, হিউম্যান হলার ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বাংলানিউজকে বলেন, আগে দু’চারটি স্ট্যান্ড ছিল। এগুলো থেকে ভাড়াও নেওয়া হতো। এখন সিটি করপোরেশনের বৈধ কোনো স্ট্যান্ড নেই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উচ্ছেদে নামলে সিসিক কর্তৃপক্ষ সহায়তা করবে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) রহমত উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ ২০/৩০ বছরের জঞ্জাল একদিনে সাফ করা যাবে না। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্ট্যান্ড উচ্ছেদে যাবো। তাতে কাজ না হলে অ্যাকশনে যাবে পুলিশ।
সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বাংলানিউজকে বলেন, যাত্রী পরিবহনের জন্য আগে দু’চারটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড ছিল। তবে মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড ছিল না। এখন যেখানে সেখানে স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। জায়গা সিসিকের হলেও নেপথ্যের আশ্রদাতা ফাঁয়দা হাসিল করছেন।
জনদুর্ভোগের মূলে এসব অবৈধ স্ট্যান্ডগুলোকে দায়ী করে তিনি বলেন, মহানগরীর মাস্টারপ্ল্যানের আলোকে স্ট্যান্ডগুলো সরিয়ে নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে সিসিক ও পুলিশকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৫
এনইউ/এএসঅার