বগুড়া: বড় ধরনের প্রতারণার ফাঁদ থেকে বেঁচে গেলেন উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রায় আড়ই শ’ চাকরি প্রত্যাশী।
শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের একটি দল বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের খন্দকারটোলা এলাকায় অবস্থিত আইটিএসএস ফাউন্ডেশন নামে একটি সেবালয় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে অভিযান চালায় পুলিশ।
এসময় প্রতারণার অভিযোগে ফাউন্ডেশনের বগুড়া অঞ্চলের শাখা ব্যবস্থাপক আলী হেলাল ও শেরপুর অঞ্চলের শাখা ব্যবস্থাপক ফারুক হোসেনকে আটক করা হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, গত ২৩ নভেম্বর শাখা ব্যবস্থাপক পদে ৫৬ জন, চিকিৎসক পদে ১০৪ জন, অফিস সহকারী পদে ৫৩ জন, হিসাব রক্ষক পদে ১৮ জন, স্বাস্থ্যসেবিকা পদে ১০ জনসহ বেশ ক’টি পদে লোক নিয়োগ দেওয়া হবে জানিয়ে বগুড়া থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় আইটিএসএস ফাউন্ডেশন।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নির্ধারিত তারিখ ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় আড়াই শ’ চাকরি প্রত্যাশী নারী-পুরুষ দরখাস্ত করেন এবং শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) পরীক্ষা দিতে উপজেলার খন্দকারটোলা কার্যালয়ে আসেন।
নওগাঁ জেলা থেকে আসা আইভি রহমান, আলী হাসান এবং সাইদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তাদের সবার লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষা দিতে আসার পর তাদের শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে, জানায় কর্তৃপক্ষ।
সে অনুযায়ী, বেলা ১০টা থেকে তাদের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়। প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন চাকরি প্রার্থী পরীক্ষায়ও দেন। মৌখিক পরীক্ষা শেষে তাদের জানানো হয়, ‘সবার চাকরি হবে’। তবে পদ অনুযায়ী প্রত্যেককে ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে।
টাঙ্গাইল থেকে আসা আবদুল্লাহ, আব্দুর রহিম, সিরাজগঞ্জের জুলেখা, পারভীন, শাহজাহান বাংলানিউজকে জানান, এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতে উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, নওগাঁ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার চাকরি প্রত্যাশীরা দরখাস্ত করেছেন।
তারা আরও জানান, চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে এসব শর্ত শোনার পর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রার্থীরা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে, স্থানীয়রা থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে কর্তৃপক্ষের প্রতারণা ফাঁস হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক মাস আগে আইটিএসএস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে সোনাতলা উপজেলার মৃত ইসাহাক আলীর ছেলে আকরাম হোসেন খন্দকারাটোলা গ্রামে এসে গোলাম রব্বানীর বাসা ভাড়া নেন। সেখানে ‘অ্যাজমা কেয়ার সেন্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান করবেন বলে তিনি বাড়ির মালিককে জানান। অথচ তিনি ‘আইটিএসএস ফাউন্ডেশন’ নামে একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র (রেজিস্ট্রেশন নম্বর- এস ৮১৩১/০৮) চালু করেন। প্রতিষ্ঠানটির জেলা অফিস সদর উপজেলার হাজরাদীঘি (ঘোড়াধাপ) এলাকায়।
যদিও আটক আইটিএসএস ফাউন্ডেশনের বগুড়া অঞ্চলের শাখা ব্যবস্থাপক আলী হেলাল বাংলানিউজকে জানান, এই প্রতিষ্ঠান কোনো প্রতারণার আশ্রয় নেয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এমনই নির্দেশ ছিল। যদিও তার বক্তব্যের স্বপক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি হেলাল।
এ প্রসঙ্গে জানতে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আকরাম হোসেনের মোবাইলে (০১৯১৮-৮৯০০৩০) একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে অজ্ঞাত কারণে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ডেভিড হিমাদ্রী বর্মা ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) হাফিজুর রহমান শাখা ব্যবস্থাপক আলী হেলাল ও শেরপুর অঞ্চলের শাখা ব্যবস্থাপক ফারুক হোসেনকে রাস্তায় ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. এরফান এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে জানান, চাকরি প্রত্যাশীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছে-এমন খবর পেয়ে সেখানে পুলিশকে পাঠানো হয়েছিল, পরীক্ষাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কাউকে আটক করতে বলা হয়নি। কারণ তারা প্রতারক কি-না তা নিশ্চিত হতে তদন্তের প্রয়োজন। আটকের পরে পুলিশ কাউকে ছেড়ে দিয়েছে এমন তথ্য তিনি জানেন না, যোগ করেন এরফান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৫
এমবিএইচ/এটি