ঝিনাইদহ: বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের ঝিনাইদহের গ্রামের বাসভবন ও রাস্তাঘাটের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি ৪৪ বছরেও। অত্যন্ত জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা।
বীরশ্রেষ্ঠের নামে একটি স্মৃতি যাদুঘর তৈরি হলেও সেখানকার একমাত্র কেয়ারটেকারের চাকরি সরকারিকরণ হয়নি আজও। বীরশ্রেষ্ঠের গ্রামটি ‘হামিদনগর’ হওয়ার কথা থাকলেও খাতা-কলমে তা হয়নি। আর গ্রামের রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই করুণ।
১৯৮১ সালে তৎকালীন সরকার বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের বসতবাড়িটি তৈরি করে দেয়। ঠিকাদার বাড়িটির নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম করে। ফলে, অল্প দিনেই বাড়ির ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ভবনের দেওয়াল ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে।
এলাকাবাসী জানান, বীরশ্রেষ্ঠের গ্রামটি নামেই হামিদনগর, খাতাকলমে এখনও খোর্দখালিশপুর।
প্রতিদিন শতশত মানুষ আসেন বীরশ্রেষ্ঠের বাড়ি, যাদুঘর, তার মায়ের কবর ও কলেজ দেখার জন্য। কিন্তু গ্রামটির রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব খারাপ।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের নামে তার গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার নামে প্রতিষ্ঠিত একটি মহাবিদ্যালয় সরকারি হয়েছে। মহাবিদ্যালয়ের আঙিনায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় বাস্তবায়িত হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতি লাইব্রেরি তথা জাদুঘর।
এলাকাবাসী আরও জানান, যাদুঘরের একমাত্র কেয়ারটেকার ও মহাবিদ্যালয়ের ২২ শিক্ষকের চাকরি আজও সরকারিকরণ হয়নি। শিক্ষকরা দিনের পর দিন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের সেজ ভাই শুকুর আলী বাংলানিউজকে জানান, তার ভাই দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। এতে আমরা গর্বিত। তাদের বসবাসের বাড়িটি সংরক্ষণসহ রাস্তাঘাট চলাচলের উপযোগী করার জন্য তিনি সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের ভাতিজা মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, চাচার নামে এলাকায় একটি জাদুঘর হয়েছে। আমি সেখানে কেয়ারটেকারের চাকরি নিয়েছি। কিন্তু আজও সরকারিকরণ হয়নি তার চাকরি। আমরা তার পরিবারের সদস্য হয়েও বর্তমান সরকারের আমলে মানবেতর জীবনযাপন করছি।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের বাল্যবন্ধু আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ছোট বেলায় একসঙ্গে খেলা করেছি। শেষ পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। একপর্যায়ে সে বীর সেনার মতো দেশ রক্ষার্থে জীবন দিয়েছে। আমরা কোনো মতে জীবনে বেঁচে আছি।
তিনি বলেন, দুঃখ হয়, আমরা যে বীরসেনার গ্রামে বসবাস করি, সেই রাস্তাটুকু সম্পূর্ণরূপে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কোনো মানুষ ইচ্ছা থাকলেও হামিদুরের একমাত্র স্মৃতি তার বসতভিটা দেখতে আসতে পারে না।
হামিদুরের গ্রামের রাস্তা সংস্কার, বাড়ি নির্মাণসহ এখানে ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মৃতি ধরে রাখতে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গ্রামবাসী হানিফ মণ্ডল।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মকবুল হাসেন বাংলানিউজকে বলেন, হামিদুর রহমানের এলাকার অবস্থা খুব একটা ভালো না। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব এ সমস্যা নিরসন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৫
পিসি